কালিগঞ্জ প্রতিনিধি: কালিগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জিএম রফিকুল ইসলামকে হাত পা ভেঙে কাঁকশিয়ালী নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মেহেদী। বুধবার (৩ জুলাই) বেলা ১ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে দিনদুপুরে জনসম্মুখে অশ্লীল গালিগালাজ ও জীবননাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় কলেজের শিক্ষার্থীসহ সূধী সমাজ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, কালিগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জিএম রফিকুল ইসলাম বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে অফিসিয়াল কাজের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে যান। সেখানে ইএনও সরদার মোস্তফা শাহিনসহ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী উপস্থিত ছিলেন। প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহিন সরকারি প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভারতে যাচ্ছেন উল্লেখ করে উপস্থিত সকলের কাছে দোয়া চান এবং তাৎক্ষণিক অন্য একটি প্রোগ্রামে যোগদানের জন্য কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান।
এর পরপরই আকষ্মিকভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী কলেজের অধ্যক্ষ জিএম রফিকুল ইসলামের সাথে অসৌজন্যমূলক কথাবার্তার সূত্রপাত করেন। একপর্যায়ে সাঈদ মেহেদী অধ্যক্ষ জিএম রফিকুল ইসলামকে হুমকি প্রদান করে বলেন, আজ আমি ঢাকায় যাচ্ছি। ঢাকা থেকে এসে যেন দেখি তুই চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছিস। তা না হলে তোর হাত-পা ভেঙে কাঁকশিয়ালী নদীতে ফেলে দেব। সাঈদ মেহেদীর হাত অনেক লম্বা যা তোর ধারণা নেই। এসময় অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। তাছাড়া জীবননাশের হুমকি ও অশ্লীল গালিগালাজের ঘটনা অধ্যক্ষ তার মোবাইল ফোনে রেকর্ডিং করছেন এমন ধারণা থেকে সাঈদ মেহেদী তার নিজস্ব লোক দিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করেন। রেকর্ডিং করা হয়নি জেনেও সাঈদ মেহেদীর নির্দেশে অধ্যক্ষের মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত মেমরি কার্ড সম্পূর্ণ ফরম্যাট করে দেয়া হয়। এতে মেমরি কার্ডে সঞ্চিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ডিলিট হয়ে যায়। কলেজের কয়েকজন শিক্ষক এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের এক নেতার নিকট অধ্যক্ষকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি প্রদানের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের নিকট এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কালিগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জিএম রফিকুল ইসলাম আবেগাপ্লুত হয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, কোন কারণ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী জনসস্মুখে চিৎকার করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেছে। আমি চাকরি থেকে পদত্যাগ না করলে তিনি আমার হাত-পা ভেঙে কাঁকশিয়ালীতে ফেলে দেবেন বলে হুমকি প্রদান করেছেন। মোবাইল কেড়ে নিয়ে মেমরি কার্ড ডিলিট করায় সেভ করা অনেক প্রয়োজনীয় নাম্বার ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে গেছে। একজন জনপ্রতিনিধি কোন মানুষের সাথে এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে পারেন তা অকল্পনীয়।
এদিকে কালিগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে গালিগালাজ, ভয়ভীতি প্রদর্শন, জীবননাশে হুমকি ও চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশের বিষয়টি ব্যাপকভাবে জানাজানি হলে কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অতিদ্রæত এই নিন্দনীয় ঘটনার সন্তোষজনক সমাধান না হলে কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলে ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও সরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যানের এধরনের আচরণের বিষয়টি জানার পর স্থানীয় সূধী সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদীর ব্যবহৃত মুঠো ফোনে (০১৭১৩-৪১১৪০০) যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কালিগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের হাত পা ভেঙে নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি উপজেলা চেয়ারম্যানের
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/