ডেস্ক রিপোর্ট : উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউপিতে নৌকার প্রার্থী আব্দুল বাছেত ওরফে হারুন চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। অপরদিকে কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ এবাদুল ইসলাম ঘোড়া প্রতীকে ও মৌতলা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম বাটুল আনারস প্রতীকে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) জেলার আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৩৭ কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এসব কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়। আশাশুনি প্রতিনিধি সমির রায় জানান, আশাশুনির কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান ও একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা মেম্বর পদে এবং দরগাহপুর ইউনিয়ন পরিষদে একটি সংরক্ষিত আসনে মহিলা মেম্বর পদে শান্তিপূর্ণভাবে উপ-নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে কুল্যা ইউপি’র চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে আব্দুল বাছেত হারুন চৌধুরী বেসরকারি ভাবে বিজয়ী হয়েছেন। মহিলা মেম্বর পদে পারভিন সুলতানা (কুল্যা) ও দরগাহপুরে মনোয়ারা বেগম বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদ উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল বাছেত ওরফে হারুন চৌধুরী (নৌকা প্রতীক) ৪ হাজার ৪৫১ ভোট পেয়ে বিজয় লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান এসএম রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছা: জাহিদা ইসলাম (চশমা প্রতীক) পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৮৭ ভোট। এছাড়া ওমর ছাকি ফেরদৌস পলাশ (আনারস প্রতীক) ২ হাজার ৮২৬ ভোট ও আব্দুল মাজেদ গাজী (মোটরসাইকেল প্রতীক) পেয়েছেন ২ হাজার ২৭১ ভোট।
এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ হাজার ৫১৩, মোট ১৩ হাজার ৫৩৫ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, তার মধে বাতিল হয়েছে ১১৪টি ভোট। ভোটার উপস্থিতি ছিল শতকরা ৬৯.৯৫ ভাগ।
কুল্যা সংরক্ষিত (১,২,৩নং) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬৮১৭। বৈধ ভোট ৪২৬৩ ভোট এবং বাতিল হয়েছে ৫৮২টি ভোট। পারভিন সুলতানা (বই প্রতীক) ১৭১৩ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে বিজয়ী হয়েছেন। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে নবীজান খাতুন (বক প্রতীক) ১৪৭৩, মোছা: সালমা খাতুন (মাইক) ৫১৮, মোছা: ছবেদা বেগম (কলম) ৩৩১ ভোট, মোছা: খালেদা বেগম (সূর্য্যমুখী ফুল) ২২৮ ভোট পেয়েছেন। সংরক্ষিত আসনে ভোটার উপস্থিতি ছিলো ৭১.০৭ ভাগ।
অপরদিকে দরগাহপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ৩ (৬, ৮ ও ৯) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫১৫৬। বৈধ ভোট ২২৬২ টি এবং বাতিলকৃত ভোটার সংখ্যা ১২৮টি। মোট ভোটার উপস্থিতি ছিলো শতকারা ৪৬.৩৫ ভাগ।
মহিলা মেম্বর পদে মনোয়ারা বেগম (কলম প্রতীক) ১২৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী মর্জিনা খাতুন (সূর্যমুখী ফুল) পেয়েছেন ৯৬৪ ভোট।
নির্বাচনে নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনছার, ভিডিপি’র নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
অপর দিকে কালিগঞ্জ প্রতিনিধি শেখ শাওন আহম্মেদ সোহাগ জানান, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে কালিগঞ্জে পাঁচটি ইউনিয়নে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে কুশুলিয়া ও মৌতলা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে, বিষ্ণুপুর ইউপি’র একটি ও তারালী ইউপি’র একটিতে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে এবং কৃষ্ণনগর ইউপি’র একটি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটগ্রহণের সব মালামাল সময় মত কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেলেও অধিকতর নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক ভোট গ্রহণ শুরুর পূর্বে বৃহস্পতিবার সকালে কুশুলিয়া ও মৌতলা ইউনিয়নের সকল কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়। মোট ২৫ টি কেন্দ্রে মধ্যে অল্প কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা থেকে শুরু ভোট শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত চলা এই নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে সকাল থেকে টহল দেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনে কুশুলিয়া ও মৌতলা ইউপি’র চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার জমিরুল হায়দার জানান, ৫নং কুশুলিয়া ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিল ১৮ হাজার ১২৪ জন। এর মধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ৮ হাজার ৪১১জন। ভোটার উপস্থিতির শতকরা হার ৪৬ দশমিক ৪১। মোট ৩৮৬ টি ব্যালট বাতিল হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ এবাদুল ইসলাম ঘোড়া প্রতীকে ৬ হাজার ৮৮২ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এই ইউনিয়নে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ মোজাহার হোসেন কান্টু নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ১৪৩ ভোট।
অপরদিকে মৌতলা ইউনিয়নে ৯ টি কেন্দ্রে মাট ভোটার ছিল ১৫ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ৭ হাজার ৬১৭ জন। ভোটার উপস্থিতির শতকরা হার ৫০ দশমিক ৪১। বাতিল হয়েছে ৪৮ ভোট। মৌতলা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম বাটুল আনারস প্রতীকে ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ মাহবুবর রহমান সুমন পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩২ ভোট।
কৃষ্ণনগর ইউপি’র ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদের নির্বাচনে তপন রায় মোরগ প্রতীকে ৯০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী মোহাম্মদ নূর হোসেন তালা প্রতীকে পেয়েছেন ৬৫৮ ভোট। অপর প্রার্থী কবিরুল ইসলাম ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে ৭৩ ভোট এবং রামপ্রসাদ হালদার ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ ভোট। এখানে ২ হাজার ৪১১ ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ৮২৬ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বাতিল হয়েছে ৯৬ ভোট। ভোটার উপস্থিতির শতকরা হার ৭৫ দশমিক ৭৪।
তারালী ইউপি’র ১,২ ও ৩ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে তালগাছ প্রতীকের প্রার্থী মোছা: লিপিয়া খাতুন ১ হাজার ৫৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী জেবুন্নাহার জেবু সূর্যমুখী ফুল প্রতীকে পেয়েছেন ৫৯১ ভোট। অপর প্রার্থী মোছাঃ শাহানারা খাতুন কলম প্রতীকে পেয়েছেন ৩২৬ ভোট। এখানে ৫ হাজার ৭৭৪ জন ভোটারের মধ্যে ২ হাজার ৫৪২ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বাতিল হয়েছে ৪১ টি ভোট। ভোটার উপস্থিতির শতকরা হার ৪৪ দশমিক ০২।
এছাড়াও বিষ্ণুপুর ইউপি’র ৪,৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১ হাজার ৩০৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বই প্রতীকের প্রার্থী পূর্ণিমা রাণী মন্ডল। অপর প্রার্থী সুফিয়া খাতুন (সূর্যমুখী ফুল প্রতীক) পেয়েছেন ৪২৭ ভোট। এখানে ৫ হাজার ১৮৬ জন ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ৮৩০ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বাতিল হয় ৯৯ টি ব্যালট। ভোট প্রদানের শতকরা হার ৩৫ দশমিক ২৯।
ভোট শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহিন গণমাধ্যম কর্মীদের জানান,‘শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রশাসনিকভাবে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছিল। ভোটাররা স্বতঃষ্ফ‚র্তভাবে ভোট প্রদান করেছে।’
আশাশুনিতে নৌকা ও কালিগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/