মাজহারুল ইসলাম: মাহমুদপুর গার্লস কলেজিয়েট স্কুলের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দশম শ্রেণির এক ভুক্তভোগী ছাত্রী। শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সকালে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সম্মুখে সালিশি বৈঠকে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলীপুর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। অভিযুক্ত শিক্ষক আশরাফুর রহমান খোকন (৪৪) পদ্ম-শাখরা এলাকার আফসার আলীর পুত্র। তিনি ২০০১ সালের ৬ জুন স্কুলের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী তার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের বরাবর লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই ১৯) বিকাল সাড়ে পাঁচ ঘটিকার সময় বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক আশরাফুর রহমান স্যার রতœা নামের ছাত্রীকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন। কিছুক্ষণ পর সেই ছাত্রী আশরাফুর রহমান স্যারকে রেখে বাড়ি চলে যায়। নাস্তা করার জন্য আমি স্যারকে ফল কেটে দিই। পরবর্তীতে স্যার আমাকে আমার বাসার একটি রুমে ডাকে। আমি রুমে গেলে স্যার আমার গালে ফল তুলে দিতে চায় এবং আমাকে বলে তার গালে ফল তুলে দিতে। আমি রাজি না হওয়ার এক পর্যায়ে আমাকে তিনি কু-প্রস্তাব দেয়। আমি এতে লজ্জাবোধ করি এবং রুম থেকে চলে আসি’। ঐ ছাত্রী আরও বলেন, ‘তারপর আমি স্কুলে গেলে আবারো বিরক্ত করতে থাকে। বাধ্য হয়ে আমি রবিবার (৭ জুলাই) স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। বিষয়টি বাড়িতে বলার পর আমি আর স্কুলে যাইনি’। ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে স্কুলের আয়া মরিয়ম খাতুন বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার সময় একদিন পরীক্ষা শেষে দরজা-জানালা বন্ধ কারার জন্য স্কুলের পুরাতন ভবনের ২য় তলায় যাই। ২য় তলার পশ্চিম পাশের কক্ষে আশরাফুর রহমান স্যারকে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পাই। ঘটনাটি কাউকে না বলার জন্য আশরাফ স্যার আমাকে অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে আমি সহকারী শিক্ষিকা রওশনারা খাতুন ও সুমাইয়া আপাকে জানালে লোক লজ্জার ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখা হয়। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মুখে আমি ঘটনাটি খুলে বলি এবং ২০১৮ সালের ফেব্রæয়ারীর ২ তারিখে প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ করি’। এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র শীল বলেন, ‘দশম শ্রেণির এক ছাত্রী আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। আগেও দুইবার ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে প্রত্যেকবার দুই মাস করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিলো। পূর্বের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা যশোর বোর্ডে অভিযোগ করি, কিন্তু দীর্ঘ তদন্ত সাপেক্ষ হওয়ার ফলে অভিযোগ কারীদের কৌশলে ম্যানেজ করে পুনরায় চাকরিতে বহাল থাকে সে। কিন্তু এবারের এ ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হলে ছাত্রীদের অভিভাবকেরা এখানে আসে এবং স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুর রউফ চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দাবি করে। সকলের সামনেই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আশরাফুর রহমান বলেন, “আমি স্কুলে যোগদান করা থেকেই কিছু কু-চক্রী মহল আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। ঘটনার দিন আমার সšত্মানতুল্য ছাত্রীরা রথের মেলা উপলক্ষে আমাকে দাওয়াত দিলে আমি সহ ৮-১০ জন ছাত্রীরা মিলে তাদের বাসায় যায়। ১০-১৫ মিনিট পরে আবার তাদের সাথেই চলে আসি। তাছাড়া পূর্বে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিলো তার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি এজন্য পুনরায় আমাকে চাকরিতে বহাল রাখা হয়। এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ’র কাছে ফোন দিলে রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ছাত্রী উত্ত্যক্তের অভিযোগে শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/