Site icon suprovatsatkhira.com

সংগ্রাম এখন খাবার পানি ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের

স.ম ওসমান গনী সোহাগ: প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বাস আইলায় উপকূলীয় এলাকার মিষ্টি পানির আধারগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সেই থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় লবণাক্ততার কারণে খাবার পানির তীব্র সংকট লেগে আছে। কমছে কৃষি উৎপাদন। আশ্রয়হীন জনপদে এখনও চলছে খাবার পানির হাহাকার। খাবার পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল। টিউবওয়েলের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা ও আর্সেনিক থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, আইলা-পরবর্তী সময়ে এ সংকট তীব্র হলেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় খুব একটা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে এখনো অধিকাংশ মানুষকে পানির জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে পশ্চিম উপকূলে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের প্রত্যন্ত গ্রামে পানির কষ্টের বিপন্ন রূপ চোখে পড়ে। কষ্ট নিরাবণে মানুষগুলো দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে পানি সংগ্রহ করে। সকাল-বিকেল-দুপুর জলের আধারগুলো ঘিরে থাকে নারী-পুরুষ ও শিশুদের জটলা। কলসি, বালতি, ড্রাম, জগ, যার যা আছে, তা নিয়েই ছুটে যায় পানির কাছে।
সুপেয় পানির সংকটই সবচেয়ে বেশি। কোথাও আবার গোসল, রান্নাবান্না আর সেচের পানির কষ্টও রয়েছে। অর্থের বিনিময়ে মানুষকে পানি কিনতে হয়। অতিথি আপ্যায়নে পেটভরে খাবার দেওয়া সম্ভব হলেও এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি দেওয়াটা যেন এসব এলাকার মানুষের কাছে অনেক কষ্টের ব্যাপার।
সূত্র বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন এই এলাকায় লবণাক্ততা বাড়িয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার আগে এই এলাকায় এতটা পানির সংকট ছিল না। কিন্তু আইলায় মিষ্টি পানির আধার লবণ পানিতে ডুবে যায়। বিভিন্ন উপায়ে যেসব আধার থেকে মানুষ সুপেয় মিঠা পানি সংগ্রহ করতেন, সেসব আধারে এখন লবণ পানি। আইলার পর লবণাক্ততা যেন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এর ওপর চিংড়ি চাষের আগ্রাসন তো আছেই। অধিক লাভের আশায় বহু মানুষ ফসলি মাঠে লবণজল ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ করছে। চিংড়ি ঘেরের লবণ পানি ঢুকে পড়ছে মিঠা পানির পুকুরে। এভাবে মিঠা পানির সংকট দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
সুপেয় পানির সংকটের চিত্র চোখে পড়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরায়। ইউনিয়নের হাজারো মানুষ বছরের পর বছর সুপেয় খাবার পানির কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এই ইউনিয়নের লক্ষীখালী গ্রামের মহিলারা এক কলসি সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে দৈনিক ১০ কিলোমিটার পথ হাঁটেন। যেতে আসতে সময় চলে যায় কয়েক ঘণ্টা। এক কলসি পানিতে দিন পার হয় না বলে একই সঙ্গে ছেলে-বুড়ো সবাই পানি সংগ্রহে ছোটেন রাতকে দিন।
আইলা কবলিত এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট, উপকূলীয় বেড়িবাধ এখনও ঠিকমত সংস্কার হয়নি। হুমকির মুখে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলো। তাছাড়া এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের ছোয়াও লাগেনি অনেক গ্রামে।
তাই উপকূলীয় এ জনপদের মানুষের সরকারের কাছে দাবি টেকসই উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ, সুপেয় পানির বন্দোবস্ত ও বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মস্থানের ব্যবস্থা করার।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version