যশোর প্রতিনিধি: যশোরে টাকা নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ায় পিডিবির তিন ইঞ্জিনিয়র ও এক লাইনম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখার পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পিডিবি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী ১০ কার্যদিবসে রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। ঘটনার সময় পিডিবির একজন গাড়ি চালক জনগণের রোষানল থেকে কৌশলে পালিয়েছে। এ সময় আটককৃতরা হলেন ইঞ্জিনিয়র রবিউল ইসলাম, সোহেল রানা, নাসির উদ্দিন এবং লাইনম্যান জালাল ফকির ও গাড়ির চালক জিয়াউর রহমান।
যশোরের কারাবালা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে যশোর শহরের কারাবালা এলাকার মেইন লাইনের সমস্যায় অনেকগুলো বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমরা তিনটি লাইনে সংযোগ দেয়ার জন্য পিডিবির লাইনম্যান জালাল ফকিরকে ২৫শ টাকা দেই। কিন্তু টাকা নিয়ে লাইন না দিয়ে আরো টাকার জন্য তালবাহান করতে থাকে সে। তিনি একই কায়দায় ২০ থেকে ২২ জনের কাছ থেকে ৫শ থেকে ১ হাজার করে টাকা নিয়েছে। পরে স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ ভাবে চাপ দিলে লাইন দিতে বাধ্য হয়। তবে যারা টাকা দিতে পারিনি তাদের এখন পর্যন্ত লাইন দেয়া হয়নি। সেই কারণে লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে।
একই এলাকার বাসিন্দা জুয়েল বলেন, আমি ১ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমার বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন দেয়া হয়নি।
তরিকুল ইসলাম নামে একজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ১৫০০ টাকা দিয়েছি সংযোগ দেয়ার জন্য। এখনও আমার বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন দেয়া হয়নি।
ওই এলাকার ব্যাবসায়ী রোকন ব্যাপারি সাংবাদিকদের বলেন, এভাবে ২০-২৫ জনের কাছ থেকে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে লাইনম্যান জালাল ফকির। টাকা নেয়ার সময় জলাল ফকির বলেছিলেন, ‘এ টাকা আমি একা খাই না- ইঞ্জিনিয়র রবিউল ইসলাম, সোহেল রানা ও নাসির উদ্দিনকে দিতে হয়।
অভিযুক্ত লাইনম্যান জালাল ফকির সাংবাদিকদের বলেন, আমি লোকজনকের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছি, এটা ঠিক না। আমি নজরুল ইসলামের কাছ থেকে ২৫শ টাকা নিয়েছি। লাইন দিলে কেউ খুশি হয়ে ২ থেকে ৫শ টাকা দেয়। এটা তো কাজ করার পর খুশি হয়ে দেয়।
অভিযুক্ত ইঞ্জিনিয়র রবিউল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়র সোহেল রানা, ইঞ্জিনিয়র নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিসলাইনে কারণে ওখানে মোট ১১টা লাইন বিচ্ছিন্ন ছিল। মঙ্গলবার রাতে ৮টি লাইনে সংযোগ দেয়া হয়েছে। বুধবার তিনটি লাইনের সংযোগ নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। লাইনম্যান জালাল ফকির ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, লাইনম্যান জালাল ফকির গরিব মানুষ। নিউজ করার দরকার নেই। নিউজ হলে তার চাকুরি চলে যেতে পারে।
স্থানীয়রা আরো জানিয়েছে, ধর্মতলা বাজার কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ডালিম, সেক্রেটারি নবীউজ্জামানসহ স্থানীয়া এগিয়ে আসলে লাইনম্যান জালাল ফকির সবার টাকা ফেরত দিয়েছে ও আগামীতে এরকম কাজ করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইঞ্জিনিয়ররা ও লাইনম্যান চলে যায়।
এ ব্যাপারে পিডিবি যশোর-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জাহান-ই-শবনাম বলেন, কারবালা এলাকায় লাইন সংযোগ নিয়ে একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে ওই এলাকার কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। যেহেতু টাকা নিয়ে ঘটনা ঘটেছে, তাই আমার ইঞ্জিনিয়ররা গিয়ে সমাধান করেছে। ওই ঘটনায় নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।
যশোরে ঘুষ নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ায় অবরুদ্ধ পিডিবির ৩ ইঞ্জিনিয়র ও লাইনম্যান, তদন্ত কমিটি গঠন
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/