Site icon suprovatsatkhira.com

মানহীন ৫২ পণ্য ১০ দিনের মধ্যে প্রত্যাহারের নির্দেশ: প্রধানমন্ত্রীকে ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার আহ্বান হাইকোর্টের

ন্যাশনাল ডেস্ক: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি মানহীন ও ভেজাল পণ্য ১০ দিনের মধ্যে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রত্যাহার করে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এগুলো ধ্বংস করে ফেলতে হবে যেন তৃতীয় কারও হাতে না যায়। সেইসঙ্গে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি মানহীন ও ভেজাল পণ্য নিয়ে শুনানিতে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে এসব মানহীন পণ্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দুই কর্মকর্তা হাইকোর্টে আসেন। দুই কর্মকর্তা হলেন- বিএসটিআইয়ের পরিচালক প্রকৌশলী এস এম ইসহাক আলী ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। বিএসটিআইয়ের পক্ষে ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান আর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম।
গত ৯ মে ৫২টি ভেজাল পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও জব্দ চেয়ে রিটের শুনানিতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) এর পরীক্ষায় প্রমাণিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য জব্দ এবং এসব পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও উৎপাদন বন্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি-না সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বিএসটিআই ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের দুই কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট।
কনসাস কনজুমার সোসাইটির পক্ষে ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান জনস্বার্থে রিট আবেদনটি দায়ের করেন।
এদিকে, সরকার, সরকারি দল এবং প্রধানমন্ত্রীকে মাদক নির্মূলের মতো ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ, অথবা প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা ঘোষণার অনুরোধ জানিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি ভেজাল খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে রবিবার (১২ মে) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে আদেশের প্রতিপালন বিষয়ে আগামী ২৩ মে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম ও বিএসটিআই এর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আর হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেন, ‘খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র রমজান মাসেই অভিযান চালানো যথেষ্ট নয়। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সারাবছরই অভিযান অব্যাহত রাখা উচিত। খাদ্যপণ্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র নিজেদেরকে কর্মকর্তা মনে না করে, দেশপ্রেমিক নাগরিক ও জনগণের প্রতি ভালোবাসা থেকে দায়িত্ব পালন করা উচিত।’
আদালত আরও বলেন, ‘যদিও এই জাতীয় বিষয়ে হাইকোর্টের নিয়মিত দেখা উচিত নয়। কারণ, এর জন্য যথাযথ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কিন্তু এরকম অবস্থায় হাইকোর্ট কিছু না করেও বসে থাকতে পারে না। তাই ভেজালরোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি।’
একইসঙ্গে হাইকোর্ট অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘সরকার ও সরকারি দল এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যেন এসব ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যেমন যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, তেমনি ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রয়োজনে ভেজাল খাদ্যরোধে জরুরি অবস্থা ঘোষণারও অনুরোধ জানাচ্ছি।’
আদালত আরও বলেন, ‘হাইকোর্ট সরকার ও নির্বাহী বিভাগের কাজের অগ্রাধিকার কী হবে, তা নির্ধারণ করে দিতে পারে না। কিন্তু খাদ্যে ভেজালরোধের বিষয়টিকে এক নম্বরে অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানানো হলো।’
ভেজালের বিষয়ে আর কোনও আপস কিংবা ছাড়া দ্ওেয়া হবে না বলেও আদালত তার আদেশে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version