যশোর প্রতিনিধি: যশোর বাঘারপাড়া উপজেলার গৃহবধূ জিনিয়া ইয়াসমিন তুলি হত্যার ঘটনায় স্বামী জুলফিকারকে মূল পরিকল্পনাকারী আখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তুলির পরিবার।
রোববার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে তুলির বাবা ঝিনাইদহ কালিগঞ্জ উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের মৃত নুর আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম এ সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তুলির দু’শিশু পুত্র আলিফ ও হামজা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে পিতা শহিদুল ইসলামের পক্ষে চাঁচাতো ভাই শরিফুল লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে পিতা শহিদুল ইসলাম বলেন, তার একমাত্র মেয়ে জিনিয়া ইয়াসমিন তুলিকে গত ১৩ এপ্রিল আমার চোখের সামনে জখম করা হয়েছে। এক ঘরে তাকে আটকে রেখে অন্য ঘরে একের পর এক ছুরির আঘাত বসানো হয় তার মেয়ের শরীরে। তিনি মেয়ের চিৎকার শুনেছি কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। এক পর্যায় মেয়ের রক্তাক্ত শরীর নিয়ে যশোরে ছুটে এসেছি কিন্তু তাকে আর বাঁচাতে পারিনি। আমাদের সবাইকে ছেড়ে ও চলে গেছে।
এ ঘটনায় দেবর শাহাবুদ্দিনকে পুলিশ আটক করেছে কিন্তু মুলপরিকাল্পনাকারী জামাই ঢাকা বিমান বাহিনীর কর্পোরাল জুলফিকার রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। তাকে আটকেরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ সুযোগে জামাই দূরে থেকে তার পরিবারকে নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। শিশু আলিফ ও হামজাকে নিয়েও তারা ষড়যন্ত্র করছে। মোবাইল ফোন ও লোক মারফতে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এসময় কাঁদতে কাঁদতে তিনি সাংবাদিকদের কাছে তিনি সাহায্য প্রার্থনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, জুলফিকার আলীর সাথে ২০১১ সালের ৮ জুলাই তুলির বিয়ে হয়। জুলফিকারের পিতা পেশায় একজন ভ্যান চালক ছিলেন। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক দাবি করতে থাকে জুলফিকার। যৌতুকের দাবিতে প্রতিনিয়ত মারধর করতে থাকে তুলিকে। ঘরের আসবাবপত্র সহ নগদ প্রায় সাড়ে তিনলাখ টাকা দেওয়া হয়। কয়েকদিনের ব্যবধানে আবার শুরু হয় টাকা চাওয়া। একপর্যায় সরকারি চাকরির দোহায় দিয়ে এক কালীন মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় জুলফিকার। তিনি জমি বিক্রি করে চাকুরির টাকা ম্যানেজ করে দেন। এরপর নিজের বিয়ের কথা গোপন রেখে ২০১২ সালের পহেলা এপ্রিল চাকরিতে যোগ দেয় জুলফিকার। এরপর তাদের সংসারে আসেন আলিফ ও হামজা। সবাই একসাথে চলে যায় ঢাকাতে। বালুঘাটে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকাকালীন সময় জুলফিকার তুলিকে না জানিয়ে গোপনে আরেকটি বিয়ে করে। বিয়ের পর আবার শুরু হয় জুলফিকারের অত্যাচার। একপর্যায় তুলিসহ দুই শিশু সন্তানকে বাঘারপাড়ার পান্তাপাড়া গ্রামে পাঠিয়ে দেন। এরপর ওই জুলফিকারের নির্দেশে তার ভাই শাহাবুদ্দিন, মা ফরিদা ও ছোট বোন সুরাইয়া নানা ধরনের অত্যাচার চালাতে শুরু করেন।
সর্বশেষ ১২ এপ্রিল তার মেয়ে তুলিকে চরম মারধর করলে শ্বশুর বাড়ি থেকে তুলিকে ছোট ছেলেসহ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় শ্বশুর বাড়ি থেকে জানায় তুলির বড় ছেলে খুব অসুস্থ। তাৎক্ষণিক মেয়েকে নিয়ে তিনি বাঘারপাড়াতে যান। পূর্বপরিকল্পিত ভাবে জুলফিকার তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে থাকে। এসময় তুলিকে তার দেবর অন্যঘরে নিয়ে যায়। জুলফিকারের মা শহিদুলের ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতকালে তুলির মৃত্যু হয়। মেয়ে মারা যাবার পরও শেষ বারের মত মেয়ের মুখটাও দেখতে আসেনি ওই জুলফিকার বলে পিতা শহিদুল বলেন এঘটনায় দেবর শাহাবুদ্দিনকে আটক করা হলেও আটক হয়নি জুলফিকার ও তার মা এজাহারভুক্ত আসামি ফরিদা।
যশোরের বাঘারপাড়ার গৃহবধূ তুলি হত্যার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/