মো. আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর: বাকিতে ইয়াবা বিক্রির টাকা আদায়ের নামে গোয়ালঘরের তালা ভেঙ্গে প্রায় লাখ টাকা মূল্যের গরু বিক্রির সপ্তাহ খানেক পর মাত্র ৩০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন মণিরামপুরের ওসি। যশোরের মণিরামপুরে মামুন হোসেন নামের এক ইয়াবা ব্যবসায়ী গরুটি নিয়ে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ। মামুন উপজেলার মাদক গ্রাম খ্যাত ঘিবা গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে। সে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে জানায় গ্রামের মানুষ।
গরু নেয়ার সময় বাঁধা দিতে আসায় হাতুরিপেটাসহ শ্লীলতাহানির শিকার একই গ্রামের জালাল উদ্দীনের স্ত্রী তহমিনা বেগম ও মেয়ে মৌসুমি খাতুন থানায় এসে ওসির কাছে অভিযোগ করেন। তারা মামলা করতে চাইলেও তা নেয়নি থানার ওসি। মামুনের অব্যাহত হুমকিতে শুধুমাত্র জিডি করতে চাইলে ক্ষুব্ধ ওসি তাৎক্ষণিক তাদেরকে থানা গেট পার হতে নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ।
মাস খানেক আগে একই অজুহাতে মামুন গরুটি নিয়ে বিক্রি করে দিলেও তৎকালিন ওসি সহিদুল ইসলামের তৎপরতায় গরুটি ফেরত পান তহমিনা। আবারো গরু নিতে পারে এমন আশংকায় গোয়ালঘরে ৪টি তালা লাগানো হয়। সরেজমিন গেলে কথা হয় তহমিনার সাথে। তিনি জানান, বছর দু’য়েক আগে তার স্বামী জালাল উদ্দীন ইয়াবা সেবন ও বিক্রি করার সুবাদে ইয়াবা কারবারি প্রতিবেশি মামুনের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। ইয়াবার নেশা ছাড়াতে বছর দু’য়েক আগেই বাড়ি থেকে পরিবারের স্বজনরা স্বামীকে বের করে দেয়।
মৌসুমি জানায়, তার বাবার কাছে টাকা পাবে-এমন অজুহাতে গত ১১ মে মামুন হোসেন, তার ভাই মিলন হোসেন ও তাদের বাবা আব্দুল খালেক হাতুরি, লাঠি-সোটা নিয়ে গোয়ালঘর ঘরের তালা ভেঙ্গে প্রায় লাখ টাকা দামের গরু নিয়ে যায়। বাঁধা দিতে গেলে তাদের (মা-মেয়ে) হাতুরিপেটাসহ পরনের শাড়ি-কামিজ ছিঁড়ে ফেলে।
এসময় গোয়াল ঘরের ভাঙ্গা তালা, মারপিটের দাগ ও ছিঁড়া কাপড় দেখিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তহমিনা ও তার মেয়ে মৌসুমি খাতুন। সেদিন ওই অবস্থায় থানায় গিয়ে ওসি (সার্বিক) রফিকুল ইসলামকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললে মামলা নেয়ার তোলজোড় করাসহ এসআই নব্যুয়াতকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন।
জড়িত থাকার সন্দেহে ঘটনার দুই দিন পর শ্যামকুড় গ্রামের আসাদুজ্জামান আসাদকে ধরে থানায় আনা হয়। সাথে সাথে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি থানায় এসে ওসির সাথে দেনদরবার করে মামুনকে ও গরু থানায় হাজির করার শর্তে আসাদকে জিম্মায় নেন চেয়ারম্যান। পরদিন মামুন থানায় হাজির হলেও গরুর হদিস মেলেনি। এসআই নব্যুয়াত জানান, আসাদকে থানায় ধরে আনার পর তিনি আর কোন খবর জানেন না।
এক পর্যায় চেয়ারম্যানের উপর বিচারের ভার দেন ওসি। সপ্তাহ খানেক থানায় হাটাহাটির পর গত ১৮ মে সন্ধ্যায় তহমিনা ও তার মেয়ে মৌসুমির কাছে ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন ওসি। এসময় তাদের মারপিট, শ্লীলতাহানি ও অব্যাহত হুমকির বিষয়টি তুলে ধরে মামলা করতে চাইলে ওসি কোন মামলা নেয়া হবে না বলে ছাপ জানিয়ে দেন। এসময় জিডি করতে চাইলেও ক্ষুব্ধ কন্ঠে ওসি তাদের থানার গেট পার হতে বলেন। ওসি রফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ স্বীকর করেননি। তার দাবি, তারা মামলাই করতে চাইনি।
মণিরামপুরে বাকিতে ইয়াবা বিক্রির টাকা আদায়ে জোর করে গরু বিক্রি : মামলা না নিয়ে ওসির মধ্যস্থতায় ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার অভিযোগ
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/