মো. আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর: মণিরামপুরের মনোয়ারা ক্লিনিকে চিকিৎসারত অবস্থায় সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী গৃহবধূ শামছুন্নাহারের মরদেহ দাফনের এক মাস পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে রোববার (১৯ মে) বেলা ১১টার দিকে জয়পুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট ও এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসানের উপস্থিতে পুলিশ তার মরদেহ উত্তোলন করে। এসময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খান আব্দুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ওই ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসার কারণে গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে নিহত গৃহবধূর স্বামী ক্লিনিকের মালিকসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মণিরামপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে রোববার লাশ উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এসআই খান আব্দুর রহমান।
তিনি আরও জানান, জয়পুর গ্রামের আসাদুজ্জামানের স্ত্রী শামসুন্নাহারের গত ১১ এপ্রিল রাতে প্রসব বেদনা ওঠে। তখন তাকে মণিরামপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় গেটে অবস্থিত মনোয়ারা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। বাইরে থেকে ডাক্তার আনার নামে সাড়ে ১১ হাজার টাকা চুক্তিতে সিজারের কথা বলে ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাই রোগীকে ভর্তি করান। কিন্তু কোনো ডাক্তার না এনে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাই নিজেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে শামসুন্নাহারের অপারেশন করেন। প্রসূতি একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। আব্দুল হাইয়ের সহযোগীরা সেই নবজাতককে এনে বাবা আসাদুজ্জামানের কোলে দেন। আসাদুজ্জামান তার স্ত্রীর কথা জানতে চাইলে ‘রোগী ভালো আছে’ বলে জানান ক্লিনিক মালিক। কিছুক্ষণ পর মালিক আব্দুল হাই জানান, প্রসূতির অবস্থা খারাপ তাকে এই মুহূর্তে যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। পরে ডাক্তারের কথামতো রাত সাড়ে তিনটার দিকে আসাদুজ্জামান ক্লিনিকের অ্যাম্বুলেন্সে স্ত্রীকে নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিছুদূর যাবার পর প্রসূতি মারা যায়। ওই ঘটনায় গত ১৪ এপ্রিল গৃহবধূর স্বামী আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাইসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এসআই আব্দুর রহমান বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে গৃহবধূর মরদেহ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। আবেদনের ভিত্তিতে এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসানের উপস্থিতিতে রোববার বেলা ১১টার দিকে মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। এদিকে মামলার সূত্র ধরে পুলিশ ঘটনার দুইদিন পর ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাইকে আটক করে। তার কিছুদিন পর তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পান। একই সাথে অভিযুক্ত মনোয়ারা ক্লিনিক সিলগালা করে বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। ক্লিনিকটি এখনো বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
মণিরামপুরে আদালতের নির্দেশে এক মাস পর কবর থেকে গৃহবধূর লাশ উত্তোলন
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/