ডেস্ক রিপোর্ট: প্রবল বেগে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ফণীর অগ্রভাগের প্রভাবে সাতক্ষীরায় শুক্রবার দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। কখনও কখনও আকাশে মেঘ জমে অন্ধকার হয়ে আসে প্রকৃতি। নদী-নদীর পানিও বৃদ্ধি পায় স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি।
শুক্রবার দুপুরের ঝড়ো হাওয়ায় আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণের মাইকিং চলতে থাকে সর্বত্র।
প্রশাসনের ডাকে সাড়া দিয়ে শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত জেলার ছয়টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করে সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে। সকাল থেকেই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, রমজাননগর, মুন্সীগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালী, আটুলিয়া এবং আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আশাশুনি সদর, আনুলিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। দুপুরে বৃষ্টির সাথে ঝড়ো বাতাস শুরু হলে মানুষজন আরও বেশি হারে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটতে থাকে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত শ্যামনগর উপজেলায় ৩০ হাজার, দেবহাটায় ১০ হাজার ৫৪০জন, আশাশুনিতে ২৩ হাজার, কালিগঞ্জে ৩০ হাজার, কলারোয়ায় ৫ হাজার ৯৭০ ও তালা উপজেলায় এক হাজর ৪০৫জন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
শুক্রবার সকালে আলো ঝলমলে পরিবেশ থাকলেও দুপুরের দিকে প্রকৃতি বিরূপ চিত্র ধারণ করতে থাকে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল আজিজকে জানান, সকালে ভাল পরিবেশ থাকলেও দুপুরে বৃষ্টি শুরু হয়। সেই সাথে ঝড়ো বাতাসে আতংকগ্রস্ত হয়ে ওঠে সবাই। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি।
এদিকে, জেলাব্যাপী ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে মানুষ। জেলার শ্যামনগরের পদ্মপুকুরের কামালকাটি, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সীগঞ্জ, রমজাননগর, পূর্ব কৈখালী, দেবহাটার নওয়াপাড়া স্লুইস গেট এলাকা এবং আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদর ইউনিয়নের জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে যে কোন সময় তলিয়ে যেতে পারে গোটা এলাকা।
বিষয়টি স্বীকার করেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার আবুল হোসেন বলেন, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু এলাকায় বেড়িবাধ বেশ ঝুকিপূর্ণ। তারপরও আমরা সচেষ্ট আছি।
এদিকে, উপকূলের মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে শুক্রবার দিনভর জেলা প্রশাসনের তৎপরতা ছিল লক্ষ্যণীয়। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সশরীরে প্রত্যেক ইউনিয়নে গিয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তর করেন।
অপরদিকে, শুক্রবার (৩ মে) জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগের সর্বশেষ আপডেট তথ্য জানাতে প্রেস ব্রিফিং করেন জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল।
এসময় তিনি জানান, সাতক্ষীরায় ১৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ স্কুল-কলেজগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হচ্ছে। বিশেষ করে আশাশুনি ও শ্যামনগরে শিশু, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধদের আশ্রয় কেন্দ্র সরিয়ে আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ মন্ত্রাণায়ল থেকে ৩১৬ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা ও ৩২শ প্যাকেট শুকনা খাবার জেলায় পৌঁছেছে। যা সকালেই উপজেলাগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এসময় তিনি আরো জানান, সাতক্ষীরায় ৪-৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সবাইকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্র ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সোলার, চার্জার লাইট ও মোমবাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৮৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝড় পরবর্তী বিদুৎ সংযোগ মেরামত করতে টিম গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা, উপজেলা প্রশাসন, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য আফম রুহুল হক, পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, সিভিল সার্জন মো. রফিকুল ইসলাম, প্রেসক্লাব সভাপতি আবু আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপ্পী প্রমুখ।