মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: মণিরামপুরে ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত ও তপ্ত ধোঁয়ায় ধানের থোড় পুড়ে যাওয়াসহ সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকাংশই প্রান্তিক চাষী। জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছেন তারা। কেবল ধানেরই ক্ষতি হয়নি- পটল, বরবটি, করলা সবজি ক্ষেতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাষীরা বাকিতে সার, কীটনাশক ও পানি কিনে আবাদ করেছেন। এখন কিভাবে বাকি টাকা শোধ করবেন এ চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। ধানসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির প্রতিবাদে ও ক্ষতি পূরণ এবং ইটভাটা উচ্ছেদের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা মানববন্ধন করেছেন।
এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ঘোষিত নিরাপদ সবজি জোনে ইটভাটা স্থাপন নিয়েও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। নওশের আলী, বিল্লাল হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, লালন, গোপাল দাস, জুলফিক্কার, মাসুদুর রহমানসহ শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইটভাটার চিমনি দিয়ে হাওয়া বের হয়। হাওয়া যে দিকে প্রবাহিত হয়েছে সেই দিকে ধানসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক (সাতক্ষীরা) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইব্রাহিম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কীটতত্ত্ব) মোহাম্মদ হোসেন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগ তত্ত্ব) আল-আরাফাত টুকু, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (বায়োটেকনোলজি) আরাফাত হোসেন ও মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ধান ও সবজি ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন।
কোন রোগের আক্রমণে এ ঘটনা ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে তারা জানান, সকাল ৯ থেকে ১২টার মধ্যে ধানের পরাগায়ন ঘটে। ওই সময় অতিরিক্ত তাপের কারণে ধানের পুংরেণু নষ্ট হওয়ায় পরাগায়ন হয়নি। যে কারণে ধানের ধানের থোড় শুকিয়ে গেছে। এছাড়া ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় থাকা কার্বনডাই অক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইড পানির সাথে বিক্রিয়া করে এসিড হওয়ায় ধানের এমন ক্ষতি হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, নিরাপদ সবজি জোন হিসেবে ঘোষিত এলাকায় ইটভাটা স্থাপনে বাঁধা দিলেও কর্ণপাত করেনি ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। ইটভাটার জমি নিয়ে শরিকদের মধ্যে বিরোধ থাকায় এক পক্ষের কিসমত আরার আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৮ সালেল ২৫ জুন ইটভাটা কার্যক্রম বন্ধের আদেশ দেন। ইটভাটা মালিক কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের (যশোর) ছাড়পত্রের আবেদন করলেও মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ছাড়পত্রের আবেদনটি বিবেচনার সুযোগ নেই মর্মে পত্র দেন। যার স্মারক নং-২২.০২.৪০৪১.২৯৯.৭১.১৫০১.১৭.৬১১। ভাটা মালিক আবুল কাশেম মন্টু জানান, ইটভাটার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি ক্ষতিপূরণ দেবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ছাড়পত্রের আবেদন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়েই গত দুই বছর ধরে ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।