যশোর প্রতিনিধি: উপজেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির প্রমাণ মিললেও সভাপতির ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে বহাল তবিয়তে আছেন যশোরের চৌগাছার কাটগড়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইসমাইল হোসেন। তবে দু’বছর আগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে মন্ত্রাণায়য়ে চিঠি পাঠানো হলেও অদৃশ্যকারণে তার কিছুই হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইসমাইল হোসেন ২০১১ সালের ২ মে কাটগড়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তবে যোগদানের পর পরই তার বিরুদ্ধে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলনতাহানীর অভিযোগ ওঠে। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। পরে উপজেলা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। যা পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে দু’বছর আগে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও এখন মন্ত্রাণালয় থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি। এই সুযোগে স্কুল কমিটির সভাপতি আমিনুর রহমান তার ‘আস্থাভাজন’ শিক্ষক ইসমাইল হোসেনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেন।
২০১৭ সালে ২৮ মার্চ কোচিং করানোর কথা বলে স্কুল ছুটির পর ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অফিসে ডাকেন ওই শিক্ষক। ইসমাইল হোসেন সেই ছাত্রীর শ্লীলনতাহানি করেন। ছাত্রীর চেঁচামেচিতে আশেপাশের কয়েক জন এগিয়ে গেলে ওই ছাত্রী রক্ষা পায়। বিষয়টি নিয়ে ওই ছাত্রী প্রধান শিক্ষকের কাছে শিক্ষক ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে ৩০ মার্চ লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ ১ এপ্রিল শিক্ষক ইসমাইল হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। নোটিশের জবাব দেয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ৫ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির ৩/১৭ নং সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬ এপ্রিল এ শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করেন। এরপর স্কুল কমিটি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি শিক্ষককে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন পেশ করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সভাপতির চাপে পড়ে প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষককে ২৫ মে যোগদান করান। এরপর চৌগাছা উপজেলা ব্যাপী ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নার্গিস পারভিন ৭ জুন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সাথে নিয়ে তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০ জুন ০৫.৪৪.৪১১১.০১০.০০.০০৮.১৭.৪৮২ স্মারকে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দেন। জেলা প্রশাসক প্রতিবেদন পেয়ে ৫ জুলাই ০৫/৪৪ /৪১০০.০০৮.০১.০০৫.১৭.৪৫০ স্মারকে শিক্ষা সচিবের কাছে প্রতিবেদন পাঠান। কিন্তু ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আজো দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এ দিকে অভিযুক্ত শিক্ষক সভাপতির ক্ষমতাবলে যথারীতি চাকরি করে যাচ্ছেন। এতে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা ওই শিক্ষকের কাছে চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক তবিবর রহমান বলেন, তিনি সেই সময় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কাছে তার বক্তব্য দিয়ে দিয়েছেন। নতুন করে তিনি আর কিছু বলতে চান না। সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইসমাইল হোসেনের সাময়িক বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়া হয়েছে। তিনি এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেননি। উপজেলা প্রশাসনের তদন্তে ইসমাইল হোসেনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এটা সঠিক। সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে তিনি তা মেনে নেবেন।
ছাত্রী শ্লীলনতাহানির প্রমাণ মিললেও বহাল তবিয়তে শিক্ষক ইসমাইল
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/