মার্চের ৪ তারিখ বেলা ১২টার দিকে হঠাৎ অফিস থেকে ফোন, আমি তখন বারসিক সাতক্ষীরা অফিসে, মাসিক প্লান নিয়ে কথা বলছি সবাই। ফোন করে বলল, তোমাকে ৬ তারিখে গাজীপুর স্কাউট জাম্বুরীতে যেতে হবে। তোমার সাথে, তোমার পরিচিত একজনকে নিতে হবে। আমি শুধু শুনে গেলাম আর আচ্ছা, আচ্ছা করতে লাগলাম। আরো বলল, জাম্বুরীতে প্রায় ৭-৮ দিন থাকতে হবে সেইভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যেও। আর শ্যামনগর থেকে মেলার জন্য কিছু জিনিসপত্র আছে সেগুলো তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে। আমি বললাম ঠিক আছে দাদা। ফোনটা কেটে যাওয়ার পর একটু ভয় ভয় করতে লাগলো, কি জানি না, কি হয়? যাই হোক, ঢাকা অফিসে জাহাঙ্গীর ভাইয়ের কাছে ফোন দিয়ে আরো বিস্তারিত জেনে নিলাম। তারপর আমার সাথে কাকে নেবো তা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল স্কাউট জাম্বুরীতে যেতে হবে, আমি তো স্কাউটের ছাত্র ছিলাম না। ওখানে যেয়ে কি যে করতে হবে? তাই চিন্তা করলাম, আমার সাথে স্কাউটের ছাত্র এমন কাউকে নিতে হবে। হঠাৎ করে মুন্সিগঞ্জ কলেজে পড়ে মোস্তাফিজুর রনির কথা মনে পড়ে গেলো। তাৎক্ষণিক তাকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানালাম, সে রাজি হলো। তারপর ৫ মার্চ শ্যামনগর অফিসে গেলাম মেলার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে নিতে। ৬ মার্চ সকালে রওনা দিলাম জাম্বুরীর উদ্দেশ্যে। রাত ৮টার দিকে ঢাকায় বারসিকের হেড অফিসে পৌঁছায়।
সেখানেই রাত কাটিয়ে সকালে উঠে তড়িঘড়ি করে তৈরি হলাম। সকালে জাহাঙ্গীর ভাই, বিশ^াস ভাই পাভেল পার্থ দাদা প্রয়োজনীয় দিকনিদের্শনা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও মোকাবেলার কিছু আলোক চিত্র, ব্যানার, ফেসটুন, প্রকাশনা, লিফলেট দিয়ে দিলেন। তারপর ১১টার দিকে নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন দিক নিদের্শনা দিয়ে বরলেন, স্টলে বারসিক সম্পর্কে যা জান তা ও বারসিক যে উপকূলীয় অঞ্চলে এসডিজির ১৩তম লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কাজ করছে সেটা বলবে।
তারপর রওনা দিলাম গাজীপুর মৌচাক স্কাউট স্কুল অ্যান্ড কলেজের উদ্দেশ্য। অনেক জ্যামের ভিতর দিয়ে লোকজনের কাছে শুনতে শুনতে পৌঁছালাম গাজীপুরের মৌচাকে। সেখানে গিরে বারসিক’র স্টলে যেয়ে দেখি পানি। ডোকোরেশন করা খুব কষ্টসাধ্য, এক কথায় করা যাবে না। সেখানে স্টল ছিল ৫১টি। অনেকেই তখন আসেনি, আমরা যখন গিয়েছিলাম। তারপর পানি দেখে আমরা যারা মেলার স্টল দিতে গিয়েছি, সবাই মিলে পানি সরানো ও বালি দেওয়ার পরামর্শ দিলাম। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানালে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ^াস দেন। ৭ তারিখে আর স্টল সাজানো হলো না। মেলার স্টলগুলো ছিল সাসটেইনেবল ডিভেলপমেন্ট ভিলেজে (এস.ডি.ভি)।
বিকালে অন্যান্য স্টলের প্রতিনিধিরা আসতে শুরু করলো। এবার চিন্তা মশার কামড়, থাকবো ও খাবো কোথায়? আমরা ৪-৫ জন মিলে গেলাম কর্তৃপক্ষের কাছে। কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করল। স্কুলের একটি কক্ষের চাবি আমাদের কাছে দিয়ে বলল আপনারা ৫টি স্টলের প্রতিনিধিরা থাকবেন। আর খাবারের কুপন, গেঞ্চি, ক্যাপ, টাই, আইডি কার্ডের ব্যবস্থার চেষ্টায় আছি। সাসটেইনেবল ডিভেলপমেন্ট ভিলেজের (এস.ডি.ভি) কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ছিল অতুলনীয়, অভিযোগ দিলেই ব্যবস্থা। তারপর রাত দশটায় এলো খাবারের কুপন। কুপন আসার আগে আমাদের দুজনের হোটেল থেকে খাওয়া দাওয়া শেষ। তারপর সবাই মিলে গেলাম ঘুমাতে।
রাত পোহালেই মেলা শুরু। মেলা চলবে ৮-১৪ মার্চ। কিন্তু সাসটেইনেবল ডিভেলপমেন্ট ভিলেজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ১০ মার্চ সন্ধ্যায়। সাজানো গোজানোর কাজ এখনো বাকি। সকালে নাস্তা করে শুরু করলাম স্টল সাজানোর কাজ, আমি ও মোস্তাফিজুর রহমান রনি চেষ্টা করলাম অন্যদের থেকে ভালো করতে। সাজাতে সাজাতেই দুপুর। দুপুরের খাবার খেয়ে স্টলে বসলাম। মোট ৫০টি স্টলের মধ্যে এনজিও’র স্টল ছিল ২৬টি। অন্যগুলো ছিল স্কাউট দলের ও কিছু দোকান এবং একটি স্টলে ছিল পুতুল নাচ। মাঠ এসডিজির ব্যানার ও পোস্টারে ভরা। মাঠের মধ্যে বায়স্কোপ ছিল দুইটা। বেলা তখন আড়াইটা। স্টলে প্রচ- চাপ দর্শনার্থীদের। স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছে দেশি, বিদেশি শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। কিছু প্রশ্নপত্রও ছিল; সঠিক উত্তর দাতাকে পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। তাই তারা পুরস্কারের প্রত্যাশায় প্রতিটি স্টল ঘুরে উত্তর খুঁজতেছিল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও ব্যবস্থা ছিল। এমনি ভাবে প্রতিদিন এক একটি দল আসতো- স্কাউট, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা মিলে। আর রাতে আসতো সাধারণ দর্শনার্থীরা, মেলা চলতো রাত ৯টা পযর্ন্ত।
যাই হোক ১০ মার্চ সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। তাই আমরা ড্রেস পরে সেজেগুজে নিলাম। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এম.পি.। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্তিত ছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটস এর সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটস এর জাতীয় কমিশনার (বিধি), অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও জাম্বুরী সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট উপ-কমিটির আহবায়ক শেখ ইউসুফ হারুন।
১০ম বাংলাদেশ ও ৩য় সানসো স্কাউট জাম্বুরীর থিম নির্ধারণ করা হয়েছিল ‘যোগ্য নেতৃত্বে উন্নত দেশ’। বাঙালি জাতির পিতাকে বর্তমান প্রজন্মের নিকট পরিচিত করার জন্য জাম্বুরীর মূল এলাকার নামকরণ করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। জাম্বুরীতে ৪টি ভিলেজে করা হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর (১) সৈয়দ নজরুল ইসলাম, (২) তাজউদ্দিন আহমদ, (৩) ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও (৪) এইচ এম কামারুজ্জামানের নামে ভিলেজগুলোর নামকরণ করা হয়।
৪টি ভিলেজের অধীনে ১২টি সাব ক্যাম্প কবি, সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। এগুলো (১) রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, (২) কাজী নজরুল ইসলাম, (৩) মাইকেল মধুসূদন দত্ত, (৪) জসিম উদ্দিন, (৫) সুফিয়া কামাল, (৬) ইমরান নুর, (৭) জীবনানন্দ দাশ, (৮) এম মাহাবুবুজ্জামান, (৯) আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, (১০) হুমায়ুন আহমেদ, (১১) সৈয়দ শামসুল হক ও (১২) শামসুর রাহমানের নামে নামকরণ করা হয়।
বারসিক এর স্টলে যা ছিল: গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক উপকূলীয় অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিপ্রাণ বৈচিত্র্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, দুর্যোগ, সুন্দরবন, যুব সমাজ এবং স্থানীয় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের লোকায়ত জ্ঞানকে প্রধান্য দিয়ে তাদের কাজকে আরো গতিশীল করে বৈচিত্র্য, আন্তনির্ভরশীলতা ও বহুত্ববাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ১৩তম লক্ষ্যমাত্রা জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রভাব মোকাবেলায় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ। বারসিক মূলত ১৩তম লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মাঝে উপকূলীয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রভাব মোকাবেলার আলোকচিত্র এবং স্থানীয় জাতের ধান, অচাষকৃত শাক সবজির বীজের প্রদর্শন, সুন্দরবনকে রক্ষার্থে কিছু ব্যানার, লিফলেট, ফেসটুন প্রদর্শন করে। স্টল থেকে মূলত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকা, টিকে থাকা এবং স্থানীয় ধান ও সবজি সংরক্ষণের কৌশলগুলো প্রদর্শন করা হয়।
বারসিক’র স্টলে ছিল ৪৩ প্রকারের স্থানীয় জাতের ধান (দূধকলাম, রাজাশাইল, কলমিলতা, হামাই, মোতামোটা, গোপালভোগ, কালোমোটা, মালতি, বৌসোহাগি, খাকশাইল, নোনাকচি, হাতিরজোড়, পরদবালাম, সাদাস্বর্ণা, আলীকাঞ্চন, মঘাইবেতী, সাদাগোটাল, নেড়াবেত, জামিনিমোটা, হরি, জামাইনাড়–, কুমড়াভোগ, ঘিগজ, কাঠিগচ্ছা, হোগলা, সৈয়দমোটা, গোবিন্দভোগ, মরিচশাইল, মহিমে, রুপশাইল, হলদে গোটাল, খাইনল, মঘাইবালাম, জামিনিমোটা, কাডিডিট, ভূতেস্যালট, সুধা, দূর্গাভোগ, কাঞ্চন, সিলেটবালাম, কাটারিভোগ, সতীন)। ১৪ প্রকারের স্থানীয় জাতের শাক ও অচাষকৃত শাকসবজির বীজ (কাটানটি, কারমেঘা, কলমি, ডাটাশাক, বেতশাক, তেলাকচু, সঞ্চি শাক, গিমাশাক, লালশাক, পুইশাক, বরবটি, লাউ, কুমড়া, শিম)। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রভাব মোবাবেলার ২০টি আলোক চিত্র, ৬টি ফেসটুনে সুন্দরবনের ছবিসহ স্লোগান (নদীতে বর্জ্য ফেলব না, এই কথাটি ভূলব না, আমাদের শ্বাস, আর গাছের নিঃশ^াস, এভাবে বেচে থাকবে সবার বিশ^াস, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর মাঝে সুন্দরবন, প্রকৃতির বিপর্যয়ে রক্ষা করে সবার জীবন, সিডর, আইলা ও মহাসেনের মত প্রকৃতিক দুর্যোগে, নদীর বাঁধ ভেঙে প্রতিনিয়ত বিপন্ন করে তুলছে উপকূলীয় জনজীবনকে। আসুন উপকূলীয় বাঁধে লবণ সহনশীল তাল, খেঁজুর, তেঁতুল, পরশপেপুল, কদবেল, নিম, বাবলা এবং বাঁধ সংলগ্ননদীর চরে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির কেওড়া, গোলপাতা, বাইন, কাঁকড়া, খলিশা, গরান, পশুর গাছের বনায়ন করে রক্ষা করি আমাদের প্রিয় আবাসভূমিকে, গাছ লতা-পাতা বৃক্ষ, সর্বত্রই প্রাণের আধিক্য)।
স্কাউট শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ দর্শনার্থীরা যা জানতে চেয়েছিল: ডিসপ্লেতে রাখা ডিস্কের ভিতরে ওগুলো কি? আপনার এতোগুলো ধান ও সবজির বীজ কোথা থেকে পাইছেন? এগুলো কি সব চাষ হয়? আপনাদের বীজগুলো বিক্রয় হবে? বীজগুলো পাবো কিভাবে? আপনারা কোথা থেকে এসেছেন? আপনাদের স্টলের আলোকচিত্রগুলো কিসের? আপনাদের প্রতিষ্ঠানের কাজ কি? বারসিকের ফুল মিনিং কি? কোন কোন জেলায় কাজ করে? কি কি বিষয় নিয়ে কাজ করে? বারসিক’র প্রধান অফিস কোথায়? বীজগুলো কি উচ্চ ফলনশীল জাতের? আর কি কি সংরক্ষণে আছে ধান ও সবজির বীজের মত?
এমনিভাবে স্টল দেখে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীরা প্রশ্ন করতে লাগতো। সব চেয়ে মজার বিষয়ে পরিণত হলো সতীন ধান। কারণ একটা ধানে দুইটা চাল দেখার জন্য প্রচুর দর্শনার্থীরা ভিড় করতো। তারা নিজেরা দেখা না পযর্ন্ত বিশ^াস করতো না যে, একটা ধানে দুইটা চাল হয়। দেখার পর অবাক হয়ে যেত যে এমন ধান কখনো জীবনে দেখিনি, এই প্রথম দেখলাম। কেউ কেউ আবার নাছোড় বান্দা- ধান দুই একটা দিতেই হবে, বাড়ি নিয়ে অন্যদের দেখানোর জন্য। কিন্তু আমরা তো একটি প্রেট্রিডিস্কে অল্প পরিমাণ নিয়ে গিয়েছিলাম, তারপর ডিস্ক খুলে কিছু বের করে নিয়েছিলাম, শেষ পযর্ন্ত একটাও ছিল না। আমাদের কাছ থেকে অনেকেই নাম্বার নিয়েছিলেন যোগাযোগ করার জন্য এবং বলেছিলেন বারসিকের স্টলটি একটি ব্যতিক্রম স্টল, অনেক ভাল লেগেছে।
জাম্বুরীতে যেয়ে যেসব সমস্যা হয়েছিল: আসলে তেমন কোন বড় ধরণের সমস্যা হয়নি, যে সমস্যাগুলো হয়েছিল তার সমাধান পেয়েছিলাম তাৎক্ষকি। তারপরও মশা, খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা দূরে করা, স্টলে ও স্টলের সামনে পানি জমে থাকায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়।
এছাড়া নিজেদের কিছু ঘাটতিও ছিল- লিফলেট কম ছিল, বীজ চেয়েছে অনেকে, দিতে পারিনি। ফেসটুন ও ব্যানার কম ছিল। দর্শনার্থীরা স্টল দেখার পরে মতামত ব্যক্ত করার খাতা ছিল না। তারপরও ছোট নোট প্যাডে মন্তব্য করেছিল অনেকেই।
জাম্বুরী থেকে ফিরে আসার সময় একটু সমস্যা হয়েছিল। মৌচাক থেকে চন্দ্রা আসবো, তারপর চন্দ্রা হয়ে ঢাকার ধানমন্ডি। জিনিসপত্র গুছিয়ে রাস্তায় বের হলাম। বের হয়ে দেখি রাস্তা দিয়ে ভিআইপি যাবে- তাই রিকশা, ভ্যান, সিএনজি যেতে দিচ্ছে না। শুধু চলাচল করছে বাস, তাও আবার ফুল। জিনিসপত্র নিয়ে বাসে উঠা অনেক কষ্টকর। যাই হোক প্রায় এক ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকলাম বাসে উঠার জন্য, কিন্তু মিলল না। ব্যাগ একটা পিটে আর দুই হাতে দুইটা নিয়ে হাটতে শুরু করলাম। প্রায় এক কিলোর মত হাটার মধ্যে মোস্তাফিজুরের পিঠের ব্যাগটা ছিঁড়ে গেল, সেটা আবার গিট বেধে হাটা শুরু করলাম, কিছু দূরে যেয়ে দেখি দুই জন পুলিশ দাড়িয়ে আছে, তাদের কাছে বিস্তারিত বললাম, তারা আমাদের কথা শুনে বলল একটু দাড়ান ব্যবস্থা করছি, তখন আমরা ব্যাগগুলো সাথে নিয়ে এক জায়গায় দাড়ালাম। হঠাৎ করে রাজশাহীগামী একটি পরিবহনকে সিগনাল দিয়ে ডেকে দাড় করিয়ে ড্রাইভারকে বলল আমার আত্মীয়, চন্দ্রা পযর্ন্ত নিয়ে যাও, আমরা বাসে উঠার পরে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসলাম।
স্কাউট জাম্বুরীতে যেসব এনজিও স্টল দিয়েছিল: জাম্বুরীতে ২৬টি এনজিও স্টল দেয়। এর মধ্যে কারিতাস, সুশীলন, বারসিক, কেয়ার বাংলাদেশ, সিএমইএস, সিসিডিবি, ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার, সিমবায়োসিস বাংলাদেশ, সিএনআর এস, হেল্প দা নেডী, ইউসেপ বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ভিশন, আনন্দ, ব্র্যাক, সাজেদা ফাউন্ডেশন, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, শিশু পল্লী প্লাস, নারী পক্ষ, নারী মৈত্রী, বিওয়াইএলসি, আদি মধু, দি স্যালভেশন আর্মী বাংলাদেশ, ইসপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, অক্সফাম, এমসিসি উল্লেখযোগ্য।
যে দেশগুলো স্কাউট জাম্বুরীতে অংশ গ্রহণ করে: জাম্বুরীতে বাংলাদেশের সকল জেলা উপজেলা থেকে ১০০৩টি স্কাউট দলের ৯০২৭ জনসহ ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ব্রুনাই দারুস সালাম, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফিলিপানের স্কাউট ও কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবক মিলে ১০-১৫ হাজার মানুষ অংশ নেয়।
যা কিছু শিক্ষাণীয়: স্কাউট দলের ম্যানেজমেন্ট। দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য। নিয়ম শৃঙ্খলা। এনজিও প্রতিষ্ঠান গুলোর কার্যক্রম। পতুল নাচ ও বায়োস্কোপ দেখার সুযোগ। এসডিজির ১৭টি গোল সম্পর্কে ধারণা। তাবুর ভিতরে দলবন্ধভাবে থাকার কৌশল। বিদেশীদের সাথে বারসিক’র স্টল সম্পর্কে কথা বলার সাহস অর্জন, বাংলাদেশের সকল জেলার ছেলে মেয়েদের সাথে দেখা ও কথা বলা। স্থানীয় বাচ্চাদের সহযোগিতা ইত্যাদি ছিল উল্লেখযোগ্য।
বারসিকের স্টল সম্পর্কে দর্শনার্থীদের মতামত: বারসিকের স্টল পরিদর্শন করে আমি খুবই আনন্দিত। স্টলে বিভিন্ন ফসলের বীজ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে যে আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে তা খুবই প্রশংসনীয়- লিখেছেন একেএম আশরাফ উল্লাহ, সহকারি শিক্ষক হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর।
বারসিক এনজিও পুরান ধানের বীজ সংরক্ষণ করে আমাদের কৃষক ভাইদের সাহায্য করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বারসিক’র কার্যক্রম খুবই ভালো- লিখেছেন সুধীর চন্দ্র বিশ^াস, সিনিয়র শিক্ষক, মৌচাক কালিয়াকৈর গাজীপুর।
আমার আসলে এ বীজ গুলো দেখে খুবই ভালো লাগলো। কারণ আমি নিজে কৃষকের ছেলে এবং এগুলো নিজে চাষ করি- আনিসুর রহমান, কক্সবাজার।
সব কিছু মিলিয়ে সুন্দর হয়েছে। অনেক কিছু জেনেছি স্টলে এসে। অনেক প্রকার ধানের নাম জেনেছি, সুন্দরবনকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে আমি মুগ্ধ- নুসরাত জাহান তানিয়া, মাগুরা, মেহাম্মদপুর।
বারসিক’র সকল কৃষিবিষয়ক প্রদর্শনী চোখে লাগার মত। বিভিন্ন ধানের বৈচিত্র্যের মধ্যে সতীন ধানটা মজার ছিল। এসডিজির ১৩তম টার্গেটটা এগিয়ে যাক- জেরিন তাজনিন মিম, বাংলাদেশ কৃষি ইউনিভার্সিটি, ময়মনসিংহ। আমার দেখা বেস্ট ফটোগ্রাফের মধ্যে একটি- আবির ০১৫৩৩২৩৩৩০৬।
অনেক ভালো লেগেছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফটোগ্রাফগুলো অনেক চমৎকার ছিল- সৈকত ইসলাম, গাজীপুর।
বারসিক স্টলে বিভিন্ন জাতের জলবায়ু সহনশীল জাতের ধানের বীজ রয়েছে, যা একটি ব্যতিক্রম প্রদর্শনী। আমি বারসিকের শুভ কামনা করি- কে, এ, এম মাহফুজুর রহমান, প্রধান শিক্ষক, জলাহার সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়, আমনুরা, সদর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
এসডিভিতে সবগুলো স্টলের মধ্যে বারসিকের স্টল আমার খুবই ভাল লেগেছে। আমি এমন উদ্যোগকে শুভকামনা জানাই, তাদের সেবায় আমি মুগ্ধ- অলিউল্লাহ, এসডিভি, সহকারী সমন্বয়ক।
বারসিকের স্টল ঘুরে আমার খুব ভাল লেগেছে, আগে কখনো এমন বীজ বৈচিত্র্য দেখি নাই- আলমগীর, কুড়িগ্রাম।
অর্জন: অংশগ্রহণের জন্য বারসিকের পুরস্কার। অংশগ্রহণের জন্য সার্টিফিকেট। গেঞ্জি, স্কাউট টাই, ব্যাচ, আইডি কার্ড, ক্যাপ। কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কলম, প্যাড, লিফলেট। ১৫টি মাছের নাম বলতে পারায় একটি সার্টিফিকেট, গেঞ্জি। রাফেল ড্র তুলে ক্যাপ পুরস্কার প্রাপ্তি।
এলো ১৪ মার্চ, ২০১৯ অথ্যাৎ জাম্বুরীর শেষ দিন। বিকাল ৫টায় সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেলে স্কাউট জাম্বুরী ২০১৯।
অভিজ্ঞতা বিনিময়: স্কাউট জাম্বুরী থেকে ফিরে
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/