যশোর প্রতিনিধি: বালাম বই সররবাহ বন্ধ। অলস বসে আছেন নকল নবিশরা। ঝুলে আছে প্রায় দুই লাখ দলিলের কাজ। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জমির মালিকরা। যশোর জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের চিত্র এটি। শুধু বালাম বই নয়, সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন ফর্ম সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে দাপ্তরিক কাজ করতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। কবে নাগাদ সংকট নিরসন হবে সেটিও নিশ্চিত করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। দ্রুত সমাধান না হলে ভোগান্তি বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে।
জেলা রেজিস্ট্রি অফিস সূত্র জানায়, যশোর জেলায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১ লাখ ৯২ হাজার ৩০৩টি দলিল নকলের জন্য বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে যশোর সদরে ৫৬ হাজার ৬৭৩টি, ঝিকরগাছায় ১২ হাজার ৯৪৫টি, শার্শায় ৩৩ হাজার ৯১৬টি, মণিরামপুরে ৪২ হাজার ৬৪৯টি, কেশবপুরে ১১হাজার ৬৪৭টি, নওয়াপাড়ায় ১৮ হাজার ৯২৪টি, বাঘারপাড়ায় ৮ হাজার ৪৮৭টি ও চৌগাছায় ৬ হাজার ৬২টি দলিল নকল বকেয়া রয়েছে। এজন্য প্রায় সাত হাজার পিস বইয়ের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সরবরাহ নেই বালাম বই।
এছাড়াও সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন ফরম সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। রশিদ বই, ক্যাশ বই, রেজিস্টার ফি বই, নকল নবিশদের এনএন ফিস বই, রশিদ ও ক্যাশ বই না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বালাম বই সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রায় ৩শ’ নকল নবিশের কোন কাজ নেই। দিন দিন দলিলের সংখ্যা বাড়লেও বালাম এন্ট্রি করা যাচ্ছে না। জট কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। তবে কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান হবে সেটি নিশ্চিত নয়।
যশোরের ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ঋণ দিতে মটগেজ হিসেবে দলিল জমা নেওয়া হয়। সেই দলিল রেজিস্ট্রি অফিসে যাচাই করতে গিয়ে পাচ্ছি না। কারণ এখনও নকল (এন্ট্রি) হয়নি। এতে দলিলের মালিকানা যাচাইয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ৪ বছর আগের দলিলও নকল করা হয়নি। এর মধ্যে আবার হাত বদল হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। দ্রুত সমস্যা সমাধান হওয়া জরুরী।
যশোর জেলা ও সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মবিনুর রহমান বলেন, বালাম বই সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। দলিল এন্ট্রি হচ্ছে না। এজন্য ৩-৪ বছর ধরে দলিল ডেলিভারি হচ্ছে না। এতে দলিলের জট বাড়ছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে জমা দলিলের নকল কাজ শেষ করতে অনেক সময় লেগে যাবে। দলিল নকলের কাজ না হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মালিকরা। জমির মালিকরা রেজিস্ট্রি অফিসে ধর্ণা দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।
জেলা রেজিস্টার শাহ্জাহান সরদার বলেন, প্রায় সাত হাজার বালাম বইয়ের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সরবরাহ নেই। এজন্য নকল নবিশরা অলস বসে আছেন। সাধারণ মানুষও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, বালাম বই সংকটের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। বেসরকারি টেন্ডারের মাধ্যমে এ বই সরবারহ করলে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। এক সভায় মন্ত্রীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি। এছাড়াও দাপ্তরিক বিভিন্ন ফরম সরবরাহ না থাকায় কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। ফরম ফটোকপি করে বিকল্পভাবে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
যশোর রেজিস্ট্রি অফিসে ভোগান্তি চরমে: ২ লাখ দলিল নকলের কাজ বকেয়া
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/