আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর (যশোর): উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে আগামীকাল রোববার (৩১ মার্চ) মণিরামপুরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে চেয়রম্যান পদে ভোট যুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে মণিরামপুরে চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীই সরকারি দল আ’লীগ ঘরনার হওয়ায় আ’লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটাররা প্রতীককে প্রাধান্য না দিয়ে প্রার্থী দেখেই ভোট দেবেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা খানম, মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসন লাভলু ও আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব খান।
৩ প্রার্থীই সমানতালে দলীয় নেতা-কর্মী ও ভোটার সাধারণের দ্বারে দ্বারে যেয়ে তথা বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ ও হাটবাজারে পথসভা ও জনসংযোগ অব্যাহত রেখে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নাজমা খানম দলীয় প্রতীক ও দলীয় সমর্থনে প্রচার-প্রচারণায় বেশ এগিয়ে রয়েছেন বলে প্রচার পেলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী আমজাদ হেসেন লাভলু ও হাবিব খান তাদের অনুসারী দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সাথে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার দৌড়ে সমানতালে এগিয়ে রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
তবে এবারের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের কোন প্রার্থী অংশ না নেয়ায় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দৃশ্যমান কোন ভূমিকা নেই। প্রচার রয়েছে এ নির্বাচন নিয়ে এতো দিনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে কোন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এলাকায় গুঞ্জন চলছে বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় কয়েকজন ডাক-সাইটের নেতা তাদের অনুসারীদেরকে ভোটের মাঠে যেয়ে ভোট প্রদানের জন্য এক প্রার্থীর পক্ষে ভূমিকা রাখছেন। এ দিকে বিএনপি’র স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবারের উপজেলা নির্বাচনে ভোটদান থেকে বিরত থাকার বিষয়ে একাট্টা অবস্থানে থেকে দলের বৈঠক ডেকে ভোট বর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছেন। ফলে ওই ধরনের গুঞ্জনের স্বপক্ষে যতেষ্ঠ প্রমান পাওয়া যাচ্ছে না। তবে গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলার পশি^মাঞ্চলের জামায়াতপন্থী কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে ভোটের মাঠে যেয়ে ভোট দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে । তাই শেষ পর্যন্ত তাদেরকে যদি ভোট দানে বাধ্য করা হয় সেক্ষেত্রে তাদের হয়তো ভোট দিতে যেতে হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি-জামায়াত পন্থীরা শেষ মুহুর্তে ভোট দিতে যেতে পারেন বলে উপজেলা ব্যাপি প্রচার পাচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতের ভোটাররা ভোট দান করলে ভোটের ফলাফলের হিসাব নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। আর যদি বিএনপি ও জামায়াতের ভোটাররা ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তবে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভোট তিনভাগে বিভক্ত হয়ে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে তৃণমূল পর্যায়ে কথা বলে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ ভোটার ও কর্মী-সমর্থকের কাছ থেকে এ ধরণের অভিমত পাওয়া গেছে।
জানা যায়, বৃহত্তম উপজেলা মণিরামপুর। ১টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ২শত ৮৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬ শত ৩৩ জন ও নারী ভোটর ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪ শত ৫১ জন। অন্য কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ গ্রহণের কোন বাধ্য বাধকতা না থাকায়, এই উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বাইরে একই দলের দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সুতরাং নির্বাচনে যিনিই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোক না কেন তিনিই আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হবেন এটাই আওয়ামীলীগ ঘরনার ভোটারদের মন্তব্য। অবশ্য এর একটা নেতিবাচক প্রভাব কিছু সাধারন ভোটারদের মাঝে পড়েছে। অনেকেই একই দলের প্রার্থীর মধ্যে ভোটযুদ্ধ হচ্ছে বলে ভোটদানে অনিহাবশত ভোটদান থেকে বিরত থাকতেও পারেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে অগ্রিম আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যাই হোক আর মাত্র একদিন পরেই সেই কাংখিত ভোট । তাই প্রত্যাশিত বিজয় কোন প্রার্থীর পক্ষে হবে তার জন্য সবাইকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কাল: লড়াই হবে ত্রিমুখী
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/