ডেস্ক রিপোর্ট: সাতক্ষীরায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। জেলার ৫৯৭টি কেন্দ্রে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ করা হয়। সকালে উপস্থিতি কম থাকলেও দুপুরের পর ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের বেশ উপস্থিতি দেখা গেছে। নির্বাচনে জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে আওয়ামী লীগের পাঁচজন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দুইজন প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে গড়ে ৪৬ দশমিক ৯৪ ভাগ।
জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে কলারোয়া, আশাশুনি ও দেবহাটার কয়েকটি কেন্দ্রে দাঙ্গা-হামঙ্গার খবর ও কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে ভোট গ্রহণ চলাকালে আশাশুনির কেন্দ্রে কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা জোর করে ব্যালটে সীল মারছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ফুটেজ আপ করে অভিযোগ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পিন্টু। এ উপজেলার খাজরা কেন্দ্রে হাঙ্গামার খবর পাওয়া গেছে।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা জানান, কুল্লা ইউনিয়নের আগরদাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জোরপূর্বক ভোট দেওয়ার ঘটনায় কিছু সময় ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হলেও পরবর্তীতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ করা হয়।
অপরদিকে, কলারোয়ার বাটরা কেন্দ্রে নৌকা ও আনারস প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেছে। এতে আনারস প্রতীকের সমর্থক মুক্তিযোদ্ধা আফছার উদ্দীনসহ তিন জন আহত হয়েছেন। আহতরা সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সেখানকার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, সেখানে দ্রুত নিরাপত্তা বাহিনী পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
অপরদিকে, আশাশুনির বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পিন্টু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দেবনাথের দ্রুত অপসারণ দাবি করে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওসি প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রভাবিত করে প্রতি কেন্দ্রে এক হাজার ব্যালটে নৌকার সিল মারার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান ১০টি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে কর্মকর্তাদের সহায়তায় নৌকায় সিল মারা হচ্ছে।
এদিকে, দেবহাটায় তালা প্রতীক ও উড়োজাহাজ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ইমরুল হোসেন ইমরোজ নামে একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আমাদের দেবহাটা প্রতিনিধি জানান, দেবহাটায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
রোববার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও প্রথমে উপস্থিতির হার ছিল খুবই কম। বেলা বাড়ার পর থেকে বাড়তে থাকে ভোটদের সংখ্যা। এমনকি দুপুরের পরবর্তী সময়েও কিছুটা উপস্থিতির হার লক্ষ্য করা যায়। তবে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিতি বেশি না থাকলেও কেন্দ্রর বাহিরে ছিল ব্যাপক সমাগম।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৯৭৮২৮জন। যার মধ্যে পুরুষ ৪৯২১২ এবং নারী ৪৮৬১৬জন। ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ভোটাররা তাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করতে পারে সে জন্য নেওয়া হয়েছিল আগাম প্রস্তুতি। আর এতে কোন রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাপ্ত হয়েছে উপজেলা নির্বাচন। ভোট কেন্দ্রগুলোতে পুরুষ ভোটারদের থেকে নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। কেন্দ্র ও কেন্দ্র এলাকায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। এদিকে, বেলা ১২টার দিকে উপজেলা ঈদগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল গণিকে বুথে ঢুকতে না দেওয়া অভিযোগ তোলেন তিনি। এছাড়া ভাতশালা, চাঁদপুর, দেবিশহরসহ কয়েকটি কেন্দ্রে আনারস প্রতীকের এজেন্ট দেখা যায় নি। তবে, ভোট শেষ মূর্হুত পর্যন্ত কোমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ছিল বেশ লক্ষনীয়। সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীরা ভোট নিরাপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন। প্রতিটি মানুষ ভোট কেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে উৎফুল্ল হয়েছে।
শ্যামনগর প্রতিনিধি জানান, শ্যামনগরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার সব ইউনিয়ন ছিলো নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো। ভোটারদের নিরাপত্তার ঘাটতি ছিলো না বিন্দুমাত্র। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে উৎসাহ প্রদানেও কোন ঘাটতি ছিলো না প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবুও চোখে পড়ার মতো ভোটারের উপস্থিতি ছিল না। অনেকেই ভোট কেন্দ্রে আসলেও ভোট দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। পছন্দের প্রার্থী নিয়েও কোনো মতামত প্রকাশ করেননি কেউ। অনেকেই বলেছেন, যেভাবে নির্বাচন করা হয় এজন্য আমাদের আর ভোট দিয়ে লাভ কি?
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৫ম নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ৩০% থেকে ৩৫% ভোট কাস্ট হয়েছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর ছিলো। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট গ্রহণ চলে। সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে ভোটারের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি।
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ভোট গণনার পর কাস্টিং এর চিত্র পাওয়া যাবে। তবে গড়ে ৩০% ভোট দুপুর পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে। পরে আরও বাড়তে পারে। এই উপজেলায় ৮৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়। উপজেলা সদরের চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ভোটার সংখ্যা ২৩০০। সকাল ১০ টায় গিয়ে দেখা যায় ২ ঘন্টায় সেখানে ভোট কাস্ট হয়েছে ১০০।
খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোট ৪১০০। প্রথম ২ ঘন্টায় কাস্ট হয় ১৫৩। ভুরুলিয়া নাগবাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ১৬০৯। ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটে ভোট দেন ১৩৪ জন। নাগবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রথম ২ ঘন্টায় ভোট পড়ে ২৭৫। সেখানের ভোটার ৪৩৩৯। ভুরুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটার ৩২৫২। দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ভোট পড়ে ২০০। নূরনগর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। এ কেন্দ্রে ভোটার ৩৭৮১। প্রথম ২ ঘন্টায় ভোট পড়ে ৮৬৪। নূরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ৪১৭২। বেলা ১১ টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৫৭৯। বংশীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ৩২৮৮। সেখানে বেলা ১২ টা পর্যন্ত ভোট দেন ৮৬৯ জন। বংশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে ভোটার ২৬৪৬। বেলা ১২ টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত ভোট দেন ৬০০ জন। আড়পাংগাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটার ২৮৬৯। দুপুর ১ টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত ৪৮৫ ভোট কাস্ট হয়। রাবেয়া খাতুন মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটার ২১৫৬। দুপুর ২ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কাস্ট হয় ৪৫০। নৌকার প্রার্থী এসএম আতাউল হক দোলনের কেন্দ্র গুমানতলী ফাজিল মাদ্রাসায় ভোটার ৩৪৭৭। দুপুর ২ টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত কাস্ট হয় ২৬৭৮। গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট ১৩২৮। বেলা ৩ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ভোট দেন ৬২০ জন। শ্যামনগর সদরের মডার্ণ স্কুল কেন্দ্রে ভোট ৩৪০০। প্রিজাইডিং অফিসার জানান বেলা ৩ টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত ৩০% ভোট কাস্ট হয়েছে।
আশাশুনি প্রতিনিধি জানান, দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আশাশুনিতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। রোববার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে জোর করে সিল মারার অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম পিন্টু। দুটি কেন্দ্রে জোর করে সিল মারার অভিযোগে ভোট গ্রহণ সাময়িক বন্ধ থাকলেও পরে আবার চালু করা হয়। নির্বাচনে কোথাও কোন সংঘর্ষ হয়নি। দিনের প্রথম দিকে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা গেলেও দুপুরের পর মোটামুটি উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।