Site icon suprovatsatkhira.com

কর্মসংস্থান: যুব সমাজের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

dav

স্বাধীনতা অর্জনের মাস মার্চ। অগ্নিঝরা মার্চ এর সেই দিনগুলো প্রতিটি বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করে নতুন করে শপথ নিয়ে দেশকে গড়ার। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির অগ্রযাত্রায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার। আজ সময় এসেছে লক্ষ শহিদের রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ রূপ দেওয়ার। সময় এসেছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা গড়ার। সেই সোনার বাংলা গড়ার জন্য প্রস্তুত আজকের যুব সমাজ।
একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে যুব সমাজের ওপর। এদের আকাক্সক্ষা প্রবল। প্রত্যাশা আকাশ ছোঁয়া। এই যুবসমাজকে এদের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষার স্ফুরণ ঘটানোর সুযোগ জাতি হিসেবে যদি আমরা করে দিতে না পারি, তবে এটি হবে আমাদের মানবসম্পদ অপচয়ের শামিল। তাই যেকোনো জাতির জন্য একটি বড় কাজ হচ্ছে এদের মেধা বিকাশের উপযুক্ত সুযোগ করে দেয়া। একটি সুন্দর ও গর্বিত দেশ উপহার দেয়ার জন্য দেশের মাটি যুব সমাজকেই চায় সবচেয়ে বেশি করে। তাই যুব সমাজের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে নিজেদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত-প্রশিক্ষিত করে তোলা। যাতে এরা নিজেদেরকে যথাযোগ্য ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে। দেশের অর্থনীতিকে অব্যাহতভাবে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছানোর জন্য নিজেদেরকে দক্ষ করে তুলতে হবে। একই সাথে তাদেরকে দেশের বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে লিখতে, পড়তে, ভাবতে ও বিশ্লেষণ করতে জানতে হবে। যাতে এরা সক্ষম হয় এসবের সমাধানসূত্র বের করতে। কারণ একটি দেশের সামগ্রিক সাফল্য নির্ভর করে এই যুবসমাজ নিজেদের কতটুকু যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলো তার ওপর।
কর্মসংস্থান কোন পথে:
ছাত্র জীবন শেষে একজন যুবক চায় তার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান। যার সাথে জড়িত তার রুটি-রুজি সামাজিক মানমর্যাদা। একজন অভিভাবকও অপেক্ষায় থাকে- তার আদরের সন্তান লেখাপড়া শেষে সে নিজের কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। সহযোগিতা করবে পরিবারকে, পাড়া প্রতিবেশীকে, আত্মীয়-স্বজনকে, সমাজকে, দেশকে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু সম্ভব হচ্ছে? দেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি। চাকরি না পাওয়ার ফলে নিজেদের পরিবারের গলগ্রহ ভাবতে ভাবতে তাঁদের মনে যে হতাশা ও গ্লানি জমে ওঠে তা দুঃসহ। হতাশা তাঁদের মা-বাবাকেও ছাড়ে না। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত ছেলের-মেয়ের বেকারত্ব মা-বাবার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। উচ্চশিক্ষিত বেকারদের নিয়েও কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। দেশে এত বিশ্ববিদ্যালয়, এত অনার্স-মাস্টার ডিগ্রিধারী লোকের দরকার আছে কি না তা কেউ ভেবে দেখে না। প্রতিবছর হাজার হাজার যুবক-যুবতী মাস্টার ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে এসে কোথায় কী কাজ করবেন সে চিন্তাও কেউ করে বলে মনে হয় না। দরিদ্র মা-বাবার কষ্টার্জিত টাকা খরচ করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে আট বছর ধরে অনার্স ও মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করার পরও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের চাকরি পাওয়ার জন্য লাখ টাকা ঘুষ দিতে প্রস্তুত তবু চাকরি মিলছে না। আমার দেশের উচ্চশিক্ষিত যুবসমাজের জন্য এহেন করুণ দুর্দশায় আমরা কেন ও কী করে পৌঁছালাম? এর জন্য কারা দায়ী? এই দুর্দশা থেকে আমরা কীভাবে উদ্ধার পেতে পারি? তা নিয়ে গভীর গবেষণা হওয়া জরুরি। সরকারি সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ৫ কোটি ৮১ লাখ। এর মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ৮৭ শতাংশ। মাত্র ১৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক কাজে যুক্ত। এবং আত্মকর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যাই দুই কোটি ৩৬ লাখ।
গত ৯ জানুয়ারি ২০১৯ ঢাকায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে নবগঠিত সংস্থা সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ (সিডিইআর তথা সিডার), ‘কর্মসংস্থান পর্যালোচনা ২০১৭’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদনে দুটি চিত্র উঠে এসেছে। যাকে খুবই অস্বস্তিকর বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এ দুটি হলো দেশের ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণ নিস্ক্রিয়। তাঁরা কর্মবাজারে নেই, শিক্ষায় নেই, প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। এদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। বিশ্বব্যাপী এ ধরনের তরুণদের নিট নামের একটি সূচক দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যার মানে হলো ‘নট ইন এমপ্লয়মেন্ট, এডুকেশন অর ট্রেনিং’। আরেকটি চিত্র হলো দেশের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। সেমিনারে শ্রমবাজার নিয়ে পর্যালোচনার তিনটি অংশের প্রথমটি তুলে ধরেন সিডারের সিনিয়র ভিজিটিং ফেলো রিজওয়ানুল ইসলাম। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নিজের করা হিসাব তুলে ধরে জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে কৃষি খাতে মজুরি বেড়েছে (নামিক) ৫ দশমিক ১২ শতাংশ, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে প্রকৃত মজুরি কমেছে। একইভাবে শিল্প খাতে ওই বছর মজুরি বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ফলে এ খাতেও প্রকৃত মজুরি কমেছে।
বাংলাদেশে সব সময়ই বেকারত্বের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকে উল্লেখ করে রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, এটা উন্নত দেশগুলোকে লজ্জায় ফেলবে। কিন্তু বাংলাদেশে বেকারত্বের হার এত কম কারণ এ দেশে একজন মানুষ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেই তাকে কর্মজীবী হিসেবে গণ্য করা হয়।
গত মাসে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) তাদের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক সম্মেলনে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, বাংলাদেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৪০ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। বাংলাদেশে মেয়েদের নিষ্ক্রিয়তার হার ছেলেদের চেয়ে কম। ছেলেদের ২৯ শতাংশ ও মেয়েদের ২২ শতাংশ শিক্ষা চাকরি কিংবা প্রশিক্ষণের বাইরে আছে।
তিনি ২০১৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেন, এসএসসি পাস করা ব্যক্তিদের মধ্যে বেকারত্বের হার সাড়ে ৭ শতাংশ। এইচএসসি পাস ব্যক্তিদের মধ্যে এ হার ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। স্নাতক ও স্নাতক পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে এইচএসসি পর্যন্ত শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার কমেছে। অন্যদিকে এ সময়ে উচ্চশিক্ষিতদের বেকারত্বের হার বেড়েছে। ২০১০ সালে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জানান, দেশের শিক্ষা খাত শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। শিল্প যে ধরণের শিক্ষা ও দক্ষতার কর্মী খুঁজছে তা মিলছে না। ফলে বিদেশ থেকে লোক এনে কাজ করাতে হচ্ছে।
একটি জাতির সাফল্যধারা অব্যাহতভাবে ধরে রাখতে হলে দেশটির সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে- যুবসমাজকে উপযুক্ত শিক্ষা-প্রশিক্ষায় শিক্ষিত-প্রশিক্ষিত করে তোলার সহজ সুযোগ সৃষ্টি করা। তাদের সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে হালনাগাদ আধুনিক জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায় যথার্থ অর্থেই জ্ঞানবান ও প্রজ্ঞাবান। ভুললে চলবে না যুবকাল হচ্ছে জীবনের বসন্তকাল। স্বপ্ন দেখা ও আবিষ্কারের কাল। তাই যুবসমাজ পারে সব বাধা ঠেলে জাতিকে উন্নতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিতে। এরা পারে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে সঠিক গন্তব্যে নিয়ে পৌঁছাতে। কারণ এরা সমাজের লড়াকু শ্রেণি। এরাই পারে লড়াই করে সমাজের যাবতীয় অসঙ্গতি, দারিদ্র্য, বৈষম্য ও শোষণ দূর করে জাতিসত্তার বিকাশ ঘটাতে। কিন্তু এসবের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত একটি পরিবেশ। নইলে এরা ভালো নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নিয়ে গড়ে উঠতে পারবে না। ফলে এরা কখনোই কোনো দ্বন্দ্ব-সমস্যা মোকাবেলায় ইতিবাচক সাড়া দিতে সক্ষম হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি পারছি আমাদের যুবসমাজের সামনে সেসব সুযোগ হাজির করতে? পারছি কি তাদের নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন একটি সুষ্ঠু পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে? বিবেকবান হলে বলতেই হবে এর জবাব নেতিবাচক। তথ্য-পরিসংখ্যান তো তেমনটিই সমর্থন করে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের আওতায় রয়েছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৬ শতাংশ। যার সিংহ ভাগ হলো যুবাদের বয়স ১৮-৩৫ বছর। তাদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিতের সংখ্যা (বিবিএ, এম.বি.এ ডিগ্রিধারী) অনেক যারা কর্মসংস্থানের অপেক্ষায় দিন গুনছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারি কিংবা বেসরকারি খাতে চাকুরির বাজার খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ আবার সুযোগ সংকীর্ণ। ফলে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি খোলা আছে তাদের জন্য যারা উদ্যোগকে পেশা হিসাবে বেছে নিতে চায়। কিন্তু পরিবেশ সহায়ক কি? যদি না থাকে তবে তৈরি করতে হবে। এর জন্য সরকারের নির্দেশনায় সরকারি-বেসরকারি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সহজ শর্তে তহবিল জোগানোর ব্যবস্থা করবে। কমাতে হবে প্রশাসনিক জটিলতা। পাশাপাশি বাড়াতে হবে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ আর এ প্রশিক্ষণ প্রদানের বড় কাজটি করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। পাশাপাশি টি.টি.সি, টি.এস.সি জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো, সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।
সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত:
নতুন সহস্রাব্দে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান শ্রমশক্তি বলে মনে করা হচ্ছে, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে। বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে আগামী ৫ বছরে ১কোটি ৫০ লক্ষ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। আইটি খাত- কর্মসংস্থানের বড় খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে আইটি খাত। দেশে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে রপ্তানি ২০১৮ সালে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বেসিস সূত্রে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারের বাজারও বড় হচ্ছে। দেশের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই আবার দেশি সফটওয়্যার নির্মাতারা দখল করেছেন। দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৭টি ব্যাংকেই দেশি সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের টার্গেট বা লক্ষ্য ছিল, ২০১৮ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন রপ্তানি আয় করা। এ ছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রপ্তানি করা। সফটওয়্যার রপ্তানিতে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়াসহ এখাতের উন্নয়নের পদক্ষেপের কারণে ২০১৮ সালে সফটওয়্যার রপ্তানি বেড়েছে।
আমাদের সফটওয়্যার ১৮০টি দেশে রপ্তানি হয়। আমাদের সফটওয়্যার আয়ারল্যান্ডের পুলিশ ব্যবহার করে। সিকিউরিটির জন্য আমাদের সফটওয়্যার আছে। মোবাইল অপারেটররা ব্যবহার করছে। এটার গতি অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে সম্ভাবনা এখন অনেক বেশি। দিন দিন প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে এ কারণে ২০৩০ সালে আইটি সেক্টরে ২০ লাখ দক্ষ জনবল প্রয়োজন হবে। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। আর উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। একটি প্রতিষ্ঠান সফলভাবে পরিচালিত হবে তখনই যখন পরিচালনার ভার থাকবে দক্ষ কর্মীর হাতে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দক্ষতা, প্রেষণা, প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় ।
পর্যাটন খাত:
পর্যটন খাতে তরুণদের কর্মসংস্থান দেশে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কর্মসংস্থান বাড়াতে পর্যটন খাতের বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। একজন পর্যটকের আগমনে বিভিন্নভাবে ১১ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। এছাড়া পর্যটক আগমন মানেই দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হওয়া। এতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্র বাড়ে। অজানাকে জানার এবং অদেখাকে দেখার প্রবৃত্তি মানুষের চিরন্তন এই ধারণা থেকেই পর্যটনের উদ্ভব। তাই পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাবেই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, পর্যটকদের সামনে বাংলাদেশকে তুলে ধরা। পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালের জাতীয় আয়ের ৬২ ভাগ আসে পর্যটন খাত থেকে। মালদ্বীপের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে ট্যুরিজম খাত থেকে। এশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া পর্যটন শিল্পে অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের এ রকম সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, নয়নাভিরাম সবুজ পাহাড়, কুমিল্লার ময়নামতিসহ হাজারো প্রাচীন ঐতিহ্যে উজ্জ্বল দেশ বাংলাদেশ। পর্যটন খাতের তরুণদের কর্মসংস্থান সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে ।
ওষুধ শিল্পখাত:
ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ নবদিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশ আর ওষুধ আমদানিকারক দেশ নয়, রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক ওষুধ কোম্পানি উন্নত দেশগুলোর বিখ্যাত সনদ লাভ করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৬০ দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। এই খাতের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত চার দশকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের অনুন্নত ৪৮ দেশের মধ্যে ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ। ২৫৭ কোম্পানির ২৪ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ বিদেশে যাচ্ছে। বাংলাদেশে একসময় বার্ষিক ৮০ শতাংশ ওষুধ বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হতো, সেখানে এখন আমদানি হয় মাত্র ৩ শতাংশ। একসময় বিদেশি কোম্পানিগুলো এ দেশের ওষুধের বাজারের ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করত। সেখানে এখন তারা নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র ৭ শতাংশ। অদূর ভবিষ্যতে এ হার আরো কমে আসবে বলে মনে করেন আমাদের দেশের সচেতন মহল। ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর ওষুধ রফতানি বাড়ছে। আমরা আশা করছি, এই ধারা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে এ খাত বিকাশে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ওষুধ শিল্পে তরুণদের কর্মসংস্থান সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
বর্তমানে দেশের এ বিপুল বেকার যুবদের সরকারিভাবে চাকুরী প্রদান করা সম্ভব নয় কারণ সরকারের বর্তমান পদের কয়েক গুণ বেকার জনসংখ্যা রয়েছে। তাই বেসরকারি এবং ব্যক্তিখাতকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যদি প্রতিটি বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি তবে অচিরেই বাংলাদেশ মালেশিয়া বা সিংগাপুরের কাতারে সামিল হবে। তবেই না বাস্তবায়ন হবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন। লেখক: সহকারী পরিচালক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সাতক্ষীরা।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version