এসএম নাহিদ হাসান: আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। সভাপতি দলীয় প্রার্থী তো সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী। আবার কর্মী দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তো শীর্ষ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী। এক কথায় বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। আর এমনই এক পরিস্থিতিতে আগামী ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে জেলার ৭টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৯জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। ৮ মার্চ প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীরা বেশ জোরে সোরে শুরু করেছেন নির্বাচনী প্রচারণা।
এদিকে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বয়ং প্রার্থীদের মধ্যেই একধরনের অজানা ভোট কারচুপির আশংকা বিরাজ করছে। সাত উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বাদে অন্যান্য প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা হলেও ভোট কারচুপির সংশয় কাটছে না।
প্রার্থীদের দাবি, ভোট যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়।
জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, সাতক্ষীরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান বাবু নৌকা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম শওকত হোসেন আনারস ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. গোলাম মোরশেদ মটর সাইকেল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ কর্মী শেখ আতাউর রহমান নৌকা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মেহেদী ঘোড়া ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহবায়ক শেখ মেহেদী হাসান আনারস প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
কলারোয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন নৌকা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম লালটু আনারস প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আতাউল হক নৌকা ও মুক্তিযোদ্ধা জিএম ওসমান গনি দোয়াত কলম প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
তালা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার নৌকা ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএম ফজলুল হক আনারস প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবি এমডি মোস্তাকিম নৌকা ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম পিন্টু আনারস প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
দেবহাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. আ. গনি নৌকা, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক মাহবুব আলম ঘোড়া, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফা আনারস, এনপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ অজিহার রহমান আম ও সাব-সেক্টর কমান্ডার কাপ্টেন শাহাজান মাস্টারের ছেলে সাঈদ মাহফুজুর রহমান মটর সাইকেল প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।
এদিকে, নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীকে ভোট প্রার্থনাকালে ভোট কারচুপি প্রতিহত করার আহবানও জানাচ্ছেন।
আবার, দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে পছন্দের প্রার্থী দাড়ানোয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীই প্রচার কাজে অংশ নিতে কুণ্ঠাবোধ করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক কর্মী-সর্মথক জানান, আমরা সাধারণ কর্মীরা পড়েছি মহা বিপদে। একদিকে দলের হাইকমান্ড থেকে প্রতীক দিয়েছে একজনকে। অন্যদিকে, দলীয় আরেক শীর্ষ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাড়িয়েছে একই পদে। দলের হাই কমান্ড এ বিষয়ে নমনীয় হলেও আমরা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন এসে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কলারোয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতীক) মো. আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন উপজেলাতে যারা প্রার্থী তারা সবাই আওয়ামী লীগের। তাই যে পাশ করবে তাকেই আমরা মেনে নেবো। আর স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের অনুরোধে আমি নির্বাচনে দাড়িয়েছি। আমি আশা করি ১০০% সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তবে ভোট কারচুপির শঙ্কায়ও আছি।
তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিভিন্ন সভা সমাবেশে বলে বেড়াচ্ছে নৌকা প্রতীক সরকারের। তাই এই প্রতীক পাশ করানোর দায়িত্বও সরকারের। এর পাশাপাশি তারা ভোটারদের বলছে ৩০ ডিসেম্বরের মত আবারো ভোটের আগের দিন সব ভোট কেটে নেওয়া হবে। তোমরা ভোট দিতে যেতে পারবে না। তাদের এসব কথা যেমন আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, তেমনি ভোটাররাও প্রভাবিত হচ্ছে। আমরা চাই সুষ্ঠু ভোট হোক।
দেবহাটা উপজেলার আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, এটা স্থানীয় সরকারের একটি নির্বাচন। তাই শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করছি। নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা সাধারণ ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে কোন লাভ হবে বলে আমি মনে করি না। আমার নির্বাচনী এলাকার ৯৫ভাগ মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবে বলে আশাবাদী। আমার উপজেলায় ভোটের পরিবেশ এখনো পর্যন্ত ভাল রয়েছে।
শ্যামনগরের চেয়ারম্যান প্রার্থী (দোয়াত কলম প্রতীক) সাবেক অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা জিএম ওসমান গনি বলেন, সুষ্ঠু ভোট চাই। এখনো পর্যন্ত পরিবেশ ভাল আছে। তবে ভোটের আগে দিন সব বোঝা যাবে। অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে ভাল নির্বাচন আশা করছি।
আ’লীগের প্রতিপক্ষ আ’লীগ: ভোট কারচুপির সংশয়ে প্রার্থীরা
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/