Site icon suprovatsatkhira.com

ভেঙে পড়েছে পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা!

ডেস্ক রিপোর্ট: ভেঙে পড়েছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা। প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত ড্রেন না থাকা আর যেসব এলাকায় ড্রেন আছে সেগুলোর নাজুক অবস্থার কারণে বিষিয়ে উঠেছে পৌর এলাকার মানুষ। প্রতি বছর বাজেটে ড্রেন তৈরী ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ রাখা হলেও তার দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখছে না পৌরবাসী।
পৌরসভার বার্ষিক বাজেট বইয়ের তথ্য মতে, পৌর এলাকায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। এর মধ্যে আরসিসি ড্রেন রয়েছে ১০.৭৯ কিলোমিটার, পাঁকা ড্রেন রয়েছে ৫৭.৫০ কিলোমিটার এবং কাঁচা ড্রেন রয়েছে ১১৫.২৪ কিলোমিটার।
বাজেট বই সূত্রে আরো জানা যায়, ড্রেন মেরামত ও সংস্কারের জন্য ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১১ লাখ ২৫ হাজার ৭শ ৬৩ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছিলো। এছাড়া সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। কিন্তু বাজেট বইয়ের তথ্য আর পৌর এলাকার দৃশ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছে না পৌরবাসী। বাজেট বইয়ে উল্লিখিত ২০০ কিলোমিটার ড্রেন যেন শুধু বইয়ের পাতায়ই আছে। এছাড়া প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকা ড্রেন মেরামত ও সংস্কারে বরাদ্দ দেখানো হলেও দৃশ্যমান কোন কাজ হচ্ছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার কাটিয়া, নারকেল তলা, মিল বাজার, আমতলা, কাটিয়া মধ্যপাড়া, লস্করপাড়া, কাটিয়া সরকারপাড়া, রেজিট্রি অফিসপাড়া, ধোপা পাড়া, রাজার বাগান, মুনজিতপুর, মুন্সিপাড়া, পুরাতন সাতক্ষীরা, বদ্দিপুর কলোনী, মাদ্রাসাপাড়া, বাগান বাড়ি, কবিরাজ বাড়ি, সুলতানপুর ঝিল পাড়া, চালতে তলা, বড় বাজার, কাজী পাড়া, সরদার পাড়া, শাহা পাড়া, পলাশপোল, হাটের মোড়, বাঙালের মোড়, রাধা নগর, বাঁকাল, কামালনগর বউ বাজার, কামালনগর, নিউ মার্কেট এলাকা, জজ কোর্ট এলাকা, পলাশপোল বউ বাজার, চৌধুরী পাড়া, রসুলপুর, কদমতলাসহ পৌর এলাকার অধিকাংশ এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ এলাকায় ড্রেন নেই। যা আছে, তা কোন মতে কাঁচা নালা কেটে রাখা। আবার যেসব স্থানে পাঁকা ড্রেন আছে সেসবগুলোর কোনটি ড্রেন ভেঙে গেছে, কোনটি পরিষ্কার করার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব এলাকায় পৌরসভা থেকে যেসব ড্রেন করা হয়েছে তার অধিকাংশ আবার অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত। অধিকাংশ ড্রেনের কোন সংযোগ নেই। ড্রেনগুলোর একটির সাথে অন্যটির কোন সংযোগ না থাকায় ময়লা পানি অপসারণ না হয়ে- রাস্তার উপরে উঠে আসছে।
এছাড়া বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে পরিকল্পিত ড্রেন না থাকাকে দায়ী করছে এলাকাবাসী। বর্ষা মৌসুমে পৌর এলাকার অধিকাংশ জায়গা হাটু পানি নিচে থাকে। এদিকে মাসের পর মাস পরিষ্কারের অভাবে ড্রেনে জমে থাকা পানি ও আবর্জনা পচে বিষাক্ত দুর্গন্ধ নাগরিক বিড়ম্বনার সৃষ্টি করছে। তাছাড়া ড্রেনে জমে থাকা পচা পানি ও আবর্জনা মশার বংশবৃদ্ধিতে প্রধান নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে। এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ-বালাই।
এছাড়া পৌর এলাকার ড্রেনগুলো সময়মত পরিষ্কার না করায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ির বর্জ্যে ড্রেন উপচে পড়ে রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তা সত্ত্বে দীর্ঘ দিন ড্রেন সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।
পৌরবাসীর অভিযোগ, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের চাহিদামত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করেনি। শহর জুড়ে যেসব ড্রেন আছে, তাও সময়মত পরিষ্কার করা হয় না। এ কারণে ড্রেন উপচে বর্জ্যগুলো রাস্তায় উঠে একাকার হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। শহরের স্থায়ী ব্যবসায়ী, আবাসিক বাসিন্দা ও পথচারিদের চলতে হচ্ছে নাক চেপে। পৌরসভার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। পৌর উন্নয়ন শুধু বাজেটে থাকে বাস্তবায়ন হয় না।
মুনজিতপুর এলাকার নিষান হাসান জানান, আমাদের এলাকার ড্রেনটি পরিষ্কার না করায় প্রায় উপচে পড়ে। এছাড়া ড্রেনটি অনেক দিনের, প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। ফলে এর নিষ্কাশন ক্ষমতাও কম। এছাড়া এই ড্রেনের পানি কোথায় যাবে তার কোন ঠিক নেই। কারণ ড্রেনটির সংযোগ নেই।
পৌর এলাকার রাজার বাগান এলাকার জামান আলী জানান, তাদের বাড়ি রাজার বাগান ঋষিপাড়ার মধ্যে। এটা পৌরসভার এলাকা হলেও কেউ বিশ্বাস করবে না এটা পৌর এলাকা। পৌরসভার কোন সুযোগ সুবিধা তারা পায় না। তাদের এলাকায় কোন ড্রেন নাই। তাই রাস্তার উপর সব সময় পানি জমে থাকে। বর্ষার সময় হাটু সমান পানি জমে থাকে। কোন জনপ্রতিনিধি তাদের খোঁজ নেয় না। শুধু ভোটের সময় আসে।
পৌরসভার জজ কোর্ট এলাকার হিমু জামান জানান, আমাদের এলাকায় যে ড্রেনটি আছে তা কাঁচা। এটি দিয়ে কোন পানি সরে না। এটি নামে মাত্র ড্রেন। কাজের না। ড্রেনে ময়লা পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পথচারীদের নাক চেপে চলাচল করতে হয়। মনে হয় আমরা পৌরসভার এলাকায় থাকি না। দ্রুত এসব ড্রেন তৈরীর জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version