আরিফুল ইসলাম রোহিত: ‘আমার গাঙে যখন জোয়ার, তোমার তখন ভাটা। তোমার যখন সদর দুয়ার, আমার তখন আঁটা।’ এমন প্রেমধর্মী কবিতা দিয়ে শুরু হয়েছে ‘নিঃসঙ্গ দূরবীণ’ কাব্যগ্রন্থটি। কাব্যগ্রন্থটি লিখেছেন পান্থ কোমল (ছদ্ম নাম)। সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কানাইলাল মজুমদারের লেখা বইটির চাহিদাও রয়েছে বেশ।
এছাড়া সাতক্ষীরা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখক ও কবি গাজী শাহজাহান সিরাজ লিখেছেন ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাসে সাতক্ষীরা জেলা’। এতে উঠে এসেছে সাতক্ষীরার মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানিদের শাসন, মার্চের উত্তাল সাতক্ষীরা, মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও জেলার মানুষের নির্যাতন, গণহত্যা, বধ্যভূমি আর বিজয়ের কথা। বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার ‘তা¤্রলিপি’ প্রকাশনী স্টলে।
সাতক্ষীরা শহরের শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে চলমান ১১ দিনব্যাপী বইমেলায় রাজধানীর নাম করা সব প্রকাশনীর স্টলে দেশের খ্যাতনামা লেখক-সাহিত্যিকদের সাথে সাতক্ষীরার লেখক-সাহিত্যিকদের বইও ফুটে উঠছে সগৌবরে। আর তাই দর্শক-লেখক-সাহিত্যিকদের উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বইমেলা যেন প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে।
শনিবার বিকেল গড়াতে না গড়াতেই মেলার বিভিন্ন স্টলে দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়তে থাকে। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা জানালেন, ‘বাঙালি জাতি নিজস্ব চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন জেলায় জেলায় এই বই মেলার আয়োজন তারই প্রমাণ।’
মেলায় আসা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন এমন বই মেলায় প্রথম। সে জানায়, বই মেলা মানেই নতুন বইয়ের নতুন পাতার অসম্ভব সুন্দর ঘ্রাণ। সেই সুন্দর ঘ্রাণ বই পড়তে আরও বেশি প্রেরণা জোগায়।
শাকিল আরও বলে, জেলা শহরে বই মেলা আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের আরও বেশি পড়তে অনুপ্রাণিত করবে। নতুন ধারার বই, নতুন লেখকের বই আমাদের জ্ঞানকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করবে।
৭ মার্চ দুপুরে ‘বই কিনুন, বই পড়ুন ও প্রিয়জনকে বই উপহার দিন’ প্রতিপাদ্যে উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে বইমেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। মেলায় সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছেন। বই কিনছেন। জেলায় এমন ধরণের বই মেলার আয়োজনে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
শনিবার (৯ মার্চ) বিকেলে মেলায় গেলে প্রচুর মানুষের ভীড় চোখে পড়ে। সবাই স্টলগুলো ঘুরে দেখছেন। কেউ বই দেখছেন, আবার কেউ মেলার ভেতর প্রিয় মানুষের সাথে সেলফি তুলছেন। সব মিলিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তবে দর্শনার্থীদের চাপ থাকলেও বই ক্রেতার সংখ্যা কম বলে জানালেন কয়েকটি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা।
আদর্শ প্রকাশনীর বিক্রয়ক্রমী খায়রুল ইসলাম বলেন, বইমলা আমাদের প্রাণের মেলা। সবাই আসছেন, বই দেখছেন এবং কিনছেনও। তবে সাতক্ষীরায় এটাই প্রথম স্টল নিয়ে আসা। আশা করছি একেবারে আশানুরূপ না হলেও খুব খারাপ হবে না। শেষের দিকে হয়তোবা বিক্রি বাড়বে।
একইভাবে হাওলাদার প্রকাশনীর বিক্রেতা সেলিম হাওলাদার জানালেন, মেলার স্থান এবং স্টলের সংখ্যা নিতান্তই কম নয়। তবে যে পরিমাণ মানুষ মেলায় এসেছে, সে তুলনায় ক্রেতা কম। আরও বেশি প্রচারণা প্রয়োজন। যেহেতু মফঃস্বলে মেলা সেহেতু ক্রেতার সংখ্যা একটু কম থাকবেই।
মেলায় এসেছিলেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পবিত্র কুমার ম-ল। তিনি বাংলা একাডেমির বই মেলা থেকে চারটি বই কিনেছেন। তবুও আবার বই মেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, ‘বাঙালির চেতনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যেন বইমেলা। সকল শ্রেণির মানুষ মেলায় এসেছে, সবাই বই দেখছে কিনছে। সব মিলিয়ে মেলাটা যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বইমেলায় বই কেনা পাঠকের সংখ্যা খুব বেশি না। তবে এর মধ্যে ১০ শতাংশ পাঠক। এভাবে আস্তে আস্তে এ সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
কবি অধ্যাপক নিমাই চন্দ্র মণ্ডলের লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘ইন্দুলেখা আগুনের ফুলকি হবে’ বইটি পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। তিনি মেলার আয়োজন ও দর্শনার্থীদের ভীড় দেখে বলেন, এমন ধরণের বই মেলা সাতক্ষীরায় প্রথম। আগেও হয়েছে তবে সেটা ছোট পরিসরে। বই মেলা বাঙালি জাতির প্রাণের মেলা। মেলায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আসছে, বই দেখছে, তবে কিনছে কম। হয়তো বা এখন দেখে রাখছে। পরে কিনবে। কিন্তু মানুষকে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যে বই মেলার প্রয়োজন রয়েছে। আগামীতেও এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন নিমাই চন্দ্র মণ্ডল।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বই মেলা: চাপ বাড়ছে দর্শনার্থীদের
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/