নাজমুল হক, পাটকেলঘাটা: পাটকেলঘাটায় অপরিকল্পিত ভবন-বাড়িঘর নির্মাণ করায় সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ফলে মারাত্মক জলাবদ্ধতার আশংকা দেখা দিয়েছে পাটকেলঘাটা বাজারসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, আগে বর্ষা মৌসুমে বাজারের বৃষ্টির পানি স্রোত আকারে বাজারের পূর্ব দিকের নালা-ড্রেন দিয়ে কপোতাক্ষ নদীতে পড়ত। বিপরীত দিকের পানি গরু হাটের ড্রেন দিয়ে বাইগুনি হয়ে শাকদহা বিলে পড়ত। আবার পশ্চিম দিকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের দু’ধারের নালা দিয়ে বৃষ্টির পানি শাকদাহ, বড়বিলা ও সরুলিয়া খাল হয়ে তীব্র স্রোত আকারে কপোতাক্ষে পড়ত, কিছু অংশ ভৈরবনগর স্লুইস গেট হয়ে বেতনা নদী, শালিখা নদীতে পড়ত। পাটকেলঘাটা বাজারের কিছু অংশের পানি বলফিল্ডের ধার দিয়ে বেয়ে এসে কালিপদ সাধুর বাড়ির পাশ দিয়ে ড্রেন বেয়ে মজুমদার ফিলিং স্টেশনের স্লুইস গেট হয়ে তৈলকুপি বিলে পড়ত। কিন্তু পানির এসব স্বাভাবিক চলার পথ এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কথা চিন্তা না করে ব্যক্তি স্বার্থে অপরিকল্পিত দোকানপাট, বিল্ডিংবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। কোথাও কোথাও ড্রেন থাকলেও নানা বর্জ্য পদার্থ ফেলে সেগুলো ভরাট করে ফেলছে অসচেতন মানুষ। নামকাওয়াস্তে ড্রেন রাখলেও কেউ কেউ বড় ড্রেনগুলো সরু করে ফেলেছে। বর্তমানে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের দু’ধারে ড্রেন এখন নেই বললেই চলে। নালা-ড্রেন মাটি দিয়ে ভরাট করে দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা করেছে ভূমিদস্যুরা। পাটকেলঘাটার পশ্চিম পাড়া এলাকার যে পানি পাটকেলঘাটা হারুণ অর রশিদ কলেজের সামনের ড্রেনটি দিয়ে শাকদাহ বিলে পড়ত সে ড্রেনের উপর মাটি ভরাট করে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করছে অনেকে। এদিকে বাজরের বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী বিদ্যুৎ রোড, ডাকবাংলো রোড, টাওয়ার রোড, গরু হাট রোডের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না রেখে অপরিকল্পিত দোকানপাঠ, বসতবাড়ি নির্মাণ করায় বর্ষার মৌসুমে এ রোডে হাঁটু পানি জমে থাকবে বলে আশংকা করছে স্থানীয়রা।
পাটকেলঘাটার হারুণ অর রশিদ কলেজের অধ্যাপক সুব্রত দাশ বলেন, যুগ যুগ ধরে আমরা দেখেছি আমার বাড়ির সামনে দিয়ে তীব্র স্রোত আকারে ড্রেন দিয়ে পানি বের হয়ে যেত, সেই ড্রেন আমরা বজায় রাখলেও অধিকাংশ মানুষ মাটি দিয়ে তা ভরাট করে ফেলেছে। ইদানিং মজুমদাররা পানির ড্রেনের মোটা পাইপ তুলে দিয়ে চিকন পাইপ লাগিয়েছে। ফলে মারাত্মক জলাবদ্ধতার শিকার হতে হবে আমাদের।
পাটকেলঘাটার কুমিরা বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক পাটকেলঘাটার বাসিন্দা নেছার আলী বলেন, আমাদের পশ্চিমপাড়ার বর্ষার পানি যে পথ দিয়ে প্রবাহিত হত অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি চলার সে স্বাভাবিক পথ আজ ব্যাহত হচ্ছে। আগামী দিনে আমাদের এমন হতে চলেছে যে যার অংশের পানি তারই গিলে খেতে হবে।
সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, এভাবে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করলে অবশ্যই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। শহরে যেমন ভবন কোড মেনে বিল্ডিং করতে হয়, আমাদের থানা এলাকায়ও আইন হওয়া উচিৎ।
তালা উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ মো. জসিম জানান, উপজেলা এলাকায়ও ভবন নির্মাণ করতে হলে স্থানীয় সরকারের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু নিয়মের বলবৎ না থাকায় ভবিষ্যতে সবাইকে হুমকির মধ্যে পড়তে হবে। তবে নানা কারণে আমাদের পদক্ষেপ নিতে জটিলতায় পড়তে হয়। যদি কেউ সরকারি জায়গার উপর ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে পাকা নির্মাণ করে থাকে অভিযোগ পেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় তা গুড়িয়ে দেয়া হবে।
পাটকেলঘাটায় অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণে জলাবদ্ধতার শংকা!
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/