Site icon suprovatsatkhira.com

টিন, সিমেন্ট শিটের চেয়ে দাম বেশি: বাজার হারিয়েছে সুন্দরবনের গোলপাতা

আহসানুর রহমান রাজীব: এক দশক আগেও দক্ষিণ পশ্চিশ উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে গোলপাতার ঘরের প্রচলন থাকায় এর চাহিদাও ছিল বেশ। সময়ের আবর্তনে বদলে গেছে সেই দৃশ্যপট। বর্তমানে ঘর তৈরিতে গোলপাতার পরিবর্তে প্রচলন বেড়েছে টিন ও সিমেন্ট শিটের। এতে বাজার হারিয়েছে সুন্দরবনের গোলপাতা। বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত গোলপাতা সংগ্রহের মৌসুম। কয়েক বছর আগেও এই সময়জুড়ে সুন্দরবনের গোলপাতা কূপগুলোতে ব্যস্ত সময় কাটাতেন বাওয়ালিরা। তবে এবার সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণের মৌসুম শেষের দিকে চলে এলেও বাওয়ালিদের তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। বাজারে চাহিদা না থাকায় গোলপাতা সংগ্রহে আগ্রহ কমে গেছে তাদের। ফলে সুন্দরবনে চলতি গোলপাতা সংগ্রহ মৌসুমে গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের শংকায় বনবিভাগ।
স্থানীয়রা বলছেন, এখন টিনের দাম অনেক কম হওয়ায় গোলপাতার প্রতি আগ্রহ কমেছে তাদের। গোলপাতার চেয়ে টিন সস্তা ও টেকসই হওয়ায় সবাই এখন টিন ও সিমেন্ট শীট দিয়েই ঘর বানাচ্ছেন।
এই বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘খুব ছোট আকারের (আট ফুট বাই আট ফুট) একটা ঘরের জন্য ৫ হাজার টাকার গোলপাতা লাগে, কিন্তু ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার টিন হলেই একই আকারের ঘর বানানো যায়। তাছাড়া প্রতি দুই-তিন বছর পর পর গোলপাতা বদল করতে হয়, কিন্তু টিন অনেক বছর টেকে। একারণে মানুষ এখন গোলপাতার বদলে টিন দিয়ে ঘর বানাচ্ছেন। গোলপাতার বাজার আগের মতো নেই। এছাড়া বনবিভাগের কড়াকড়ির কারণেও গোলপাতা সংগ্রহে আগ্রহ হারাচ্ছেন বাওয়ালিরা।’
মুন্সিগঞ্জের অপর এক গোলপাতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গোলপাতার ব্যবসার জন্য বাওয়ালিদের প্রচুর টাকা দাদন দিতে হয়। দাদন নিয়েও তারা বন থেকে কেটে আনা গোল ঠিকমত আড়তে দেন না। এছাড়া বাওয়ালিরা নিয়মমতো পাতা না কাটায় বাজারে সেগুলোর চাহিদাও থাকে না। এসব কারণে ব্যবসায়ীরাও নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’ এখানকার হাতে গোণা দুই-একজন ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা ধরে রেখেছেন।’
উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাওয়ালিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একেবারে দরিদ্র মানুষরা এখনও গোলপাতার ঘর ব্যবহার করছেন। এই সংখ্যা অনেক কম। পুরনো পেশা টিকিয়ে রাখতে অল্প সংখ্যক বাওয়ালি এখনও এই পেশায় (গোলপাতা সংগ্রহ) আছেন।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, মূলত: নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণের মৌসুম। কিন্তু নানা কারণে এবার বাওয়ালিরা বেশ দেরিতে গোলপাতা কাটার কাজ শুরু করেছেন। এ বছর গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্র পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে শংকায় রয়েছেন তারা।
পশ্চিম সুন্দরবনের (সাতক্ষীরা রেঞ্জ) কূপ অফিসার কে এম কবির উদ্দিন জানান, সাতক্ষীরা রেঞ্জে মাত্র একটি গোলপাতা কূপ রয়েছে। এই কূপে গোলপাতা আহরণের জন্য ৩৭ জন ব্যবসায়ী পাশ/পারমিট নিয়েছেন। চলতি মৌসুমে ৮৪ হাজার কুইন্টাল গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৭ হাজার ৬শ ৫১ মণ গোলপাতা আহরণ হয়েছে।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিক আহম্মেদ বলেন, ‘আগে বড় বড় নৌকা নিয়ে এসে বাওয়ালিরা পারমিট ছাড়াই অতিরিক্ত গোলপাতা কেটে নিতেন। এতে তারা অধিক লাভবান হলেও বনবিভাগ প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতো। বর্তমানে ১৪ মিটার দৈর্ঘ্যের নৌকার ব্যবহার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গাছ কাটা রোধে এবছর কিছু কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তাছাড়া বাজারে গোলপাতার চাহিদা কমে যাওয়ায় বাওয়ালির সংখ্যা এবার কিছুটা কম।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version