Site icon suprovatsatkhira.com

ঝাঁপা বাঁওড়ে ভাসমান সেতুর সাথে ভাসমান কমিউিনিটি সেন্টার পর্যটকদের মন কাড়ছে

আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর (যশোর): প্লাস্টিকের ড্রামের উপর ভাসমান সেতু নির্মাণ করে যশোরের মণিরামপুর উপজেরার ঐতিহ্যবাহী ঝাঁপা বাঁওড় এখন এক অনন্য সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ভাসমান সেতু নিয়ে পর্যটকদের যেমন কৌতুহলের শেষ নেই, তদ্রুপ এ ধরণের সেতু নির্মাতা উদ্যোক্তারা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির উদ্যোগে প্লাস্টিকের ড্রাম,লোহার এঙ্গেল ও পাত, সিট জোড়া লাগিয়ে রাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন ঝাঁপা বাঁওড়ের অনাথের খেয়া ঘাটে দেশের প্রথম ও বৃহত্তম ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়। এ সেতুর রুপকার মাস্টার আসাদুজ্জামানের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির অন্যতম সদস্য টুটুল, লিটন ও মোশাররফসহ প্রায় ১’শ যুবক অর্ধকোটি টাকা খরচ করে এটি নির্মাণ করেন। নামকরণ করা হয় জেলা প্রশাসক সেতু। প্রায় দু’বছর হলো এটি জনগণের পারাপারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক। নতুন প্রযুক্তিতে নির্মিত ভাসমান এ ব্রিজ একনজর দেখার জন্য শুরুতেই উপচে পড়া দর্শনার্থী ও কৌতুহলী নারী-পুরুষের ভীড়ে জমজমাট পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়। কয়েক মাসের ব্যবধানে উদ্যোক্তারা তাদের খরচ পুষিয়ে লাভের মুখ দেখতে পায়। প্রায় এক বছরের মাথায় ঝাঁপা বাঁওড়ের ভাসমান সেতুর দক্ষিণে অত্যাধুনিক ও মজবুতভাবে আর একটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেন ঝাঁপা দক্ষিণপাড়ার কয়েকজন উদ্যোক্তা। এটির নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু সেতু।
স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্য এটি উদ্বোধন করেন। একই বাঁওড়ে দু’টি ভাসমান সেতু বিশাল বিস্তৃত জলরাশির নদী সদৃশ বাঁওড়ে নির্মাণের পর আরও পর্যটকদের পদচারণা বেড়ে যায়। ঝাঁপা বাঁওড়ের ভাসমান সেতুকে ঘিরে তাই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এটি একটি দর্শনীয় পর্যটন স্থান হিসেবে ভ্রমণ পিপাসু ও কৌতুহল প্রিয় মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটকট বিভিন্ন ধরনের যানবহনে চড়ে এখানে আসতে শুরু করেন। যার ফলে বাঁওড় বেষ্টিত ঝাঁপা গ্রামের বাঁওড় পাড় ও রাজগঞ্জ বাজারে প্রতিনিয়ত বিপুল জনসমাগমে জমজমাট এক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়। অল্প দিনের মধ্যে বাঁওড় পাড়ে গড়ে ওঠে বিশাল পিকনিক স্পট। সেই সাথে স্থায়ীভাবে বিভিন্ন ধরনের খাবারে দোকান, স্নাক্স, মনোহরী, কসমেটিক, খেলনাসামগ্রীসহ হরেক রকমের দোকান বাঁওড়ের দু’পাড়ে গড়ে ওঠে। এ ছাড়া চিত্ত বিনোদনের জন্য নাগোরদোলাসহ শিশুদের জন্য নানান ব্যবস্থা করেন স্থানীয়রা। এতে করে বহু মানুষের আয় রোজগারের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
সেতু’র পাশে বাঁওড়ের বিশাল স্বচ্ছ জলাশয়ে পর্যটকদের নৌকাযোগে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রাখা হয়েছে অনেক ছোট-বড় নৌকা। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ভাসমান সেতুর সন্নিকটে নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে ভাসমান কমিউনিটি সেন্টার/ক্যান্টিন।
এটির রুপকার মাস্টার আসাদুজ্জামান জানান, ৬০টি প্লাস্টিকের ড্রামের উপর নির্মিত দ্বিতল বিশিষ্ট এ ভাসমান কমিউনিটি সেন্টারটি নির্মাণে প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এলাকার মোশাররফ ও লিটনের সহযোগিতায় তিনি সাতক্ষীরার হারুন নামে এক গ্রিল মিস্ত্রির দ্বারা এটি নির্মাণ করেছেন। ৬০টি প্লাস্টিকের ড্রামের সাথে লোহার বড় সাইজের এঙ্গেল ও লোহার পাত জোড়া দিয়ে দ্বিতল বিশিষ্ট টোং ঘর সদৃশ এ কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান মাস্টার আসাদুজ্জামান। তিনি আরও জানান, মশ্মিমনগর গ্রামের সিরাজুলের কাছে এটি মাসিক ৪ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। অতি সম্প্রতি এ কমিউনিটি সেন্টার দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এ ভাসমান কমিউনিটি সেন্টারে পর্যটকদের জন্য রাখা হয়েছে ¯œাক্সের খাবার সামগ্রী, চা-চটপটি, ফুসকাসহ নাস্তার বিভিন্ন আইটেম। পাশাপাশি মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে লোহার সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে দর্শনার্থীরা ঘুঁরে ঘুঁরে বাঁওড়ের মনোরম শোভা উপভোগ ও ফটো সেশন করার এক সুন্দর পরিবেশ এখানে রয়েছে। এটি পর্যটকদের আরও আকর্ষণীয় করেছে বললেন, এর উদ্যেক্তারা।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version