Site icon suprovatsatkhira.com

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: ৭ উপজেলার ২১ জনের নাম কেন্দ্রে, কারা পাচ্ছেন মনোনয়ন?

এসএম নাহিদ হাসান: আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের লক্ষ্যে ২১ জন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। এদের মধ্যে জেলার সাতটি উপজেলায় কারা পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তা নিয়ে সর্বত্র চলছে জল্পনা-কল্পনা, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নের লক্ষ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস.এম শওকত হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোর্শেদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
তালা উপজেলা থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্রর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
কলারোয়া উপজেলা থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যন ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, উপজেলা আওয়া লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী মজনুর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
দেবহাটা উপজেলা থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জমান মনি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল গণি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
কালিগঞ্জ থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মেহেদী, প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের চেলে শেখ মেহেদী হাসান সুমন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোট ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট মোজাহার হোসেন কান্টুর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
শ্যামনগর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জহুরুল হায়দার বাবু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলন ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক জি.এম শফিউল আজম লেলিনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
আশাশুনি থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম পিন্টুর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ২৪ জানুয়ারি দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলে ১৪৮ জন কাউন্সিলরের ভোটে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী হিসেবে সর্বোচ্চ ৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন মনিরুজ্জামান মনি। তার নিকটতম প্রার্থী আব্দুল গণি পান ৩০ ভোট। এছাড়া চেয়ারম্যান পদে গোলাম মোস্তফা পান ২৮ ভোট। এ উপজেলা থেকে জেলা আওয়মী লীগ তাদের তিনজনের নাম কেন্দ্রে পাঠায়।
অপরদিকে, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় উপজেলা কমিটিসহ ১২টি ইউনিয়ন এবং ১০৮টি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক অংশ নেন। সভায় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা প্রার্থী বাঁছায়ের ক্ষেত্রে (গোপন ব্যালটের মাধ্যমে) ভোটের পক্ষে অবস্থান নেন। কিন্তু কয়েকজন প্রার্থী, কর্মী ও তাদের সমর্থকেরা ভোটের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এনিয়ে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বেলা দেড়টার দিকে সভা কক্ষ ছেড়ে নিজ নিজ গাড়িতে চড়ে সভা স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। এ সময় নেতা-কর্মীরা তাদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে এবং তাদেরকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেন পরদিন রোববার বেলা ১১টায় তালা শিল্পকলা একাডেমিতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এ ঘোষণা দিয়ে তারা স্থান ত্যাগ করেন। এর মধ্যে কয়েকজন প্রার্থী ভোট না করার আহবান জানিয়ে জেলার সভাপতি বরাবর দরখাস্ত করেন। আগের দিনের ঘোষণা আনুযায়ী রোববার সকালে পুনরায় সভা শুরু হয়। সভার এক পর্যায়ে কাউন্সিলরদের সম্মতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ রফিকুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক প্রণাব ঘোষ বাবলুর নাম প্রস্তাব করা হয়। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ঠিক করার পর ভাইস চেয়ারম্যানদের নাম ঠিক করার এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা প- হয়ে যায়। পরে জেলা থেকে উপজেলা থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্রর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ রফিকুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক প্রণাব ঘোষ বাবলু ক্ষুদ্ব হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে পছন্দের প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ৩০ জানুয়ারি পৃথক বর্ধিত সভা করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যন ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, উপজেলা আওয়া লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টুর নাম জেলায় পাঠায়। পরে জেলা আওয়ামী লীগ বিচার বিশ্লেষণ করে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী মজনুর নাম যুক্ত করে কেন্দ্রে পাঠায়।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩৯৫ জন কাউন্সিলরের অংশগ্রহণে ভোটের মাধ্যমে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিশেষ কাউন্সিলে দলীয় কাউন্সিলরদের ভোটে এস.এম শওকত হোসেন ১৬৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু ১৪৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় এবং বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ ৬২ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। তাদের তিনজনের নামই কেন্দ্রে পাঠায় জেলা আওয়ামী লীগ।
আর ৪ ফেব্রুয়ারি কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার দ্বিতীয় অধিবেশনে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থীদের নামের তালিকা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সমঝোতা না হওয়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচনে উপজেলার ১২ ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদধারী ২৪ জন, ১০৮টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদধারী ২১৬ জন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একজনসহ সর্বমোট ২৪১ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ২৩৯ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মেহেদী ৭২ ভোট ও প্রয়াত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের বড় ছেলে কুশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়র শেখ মেহেদী হাসান সুমন একই সংখ্যক ভোট পেয়ে যৌথভাবে প্রথম হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২ ভোট পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তারালী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট। এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ভোটের ভিত্তিতে পাওয়া ৩ প্রার্থীর পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সমঝোতার ভিত্তিতে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মোজাহার হোসেন কান্টুর নাম চার নম্বরে তালিকাভুক্ত করে কেন্দ্র পাঠানোর বিষয়ে একমত হন এবং সে অনুযায়ী চারজনের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠান।
অপরদিকে, ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ২৩৩ জন কাউন্সিলরের ভোটে জহুরুল হায়দার বাবু ১১৪ ভোট পেয়ে প্রথম, আতাউল হক দোলন ৭৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় এবং শফিউল আযম লেনিন ২০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। তাদের সবার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
আর আশাশুনিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের পৃথক বর্ধিত সভা থেকে মনোনয়ন প্রার্থী হিসেবে এবিএম মোস্তাকিম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম পিন্টুর নাম জেলায় পাঠানো হলে জেলা আওয়ামী লীগ ঐ দুই প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠায়।
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, যেখানে সুযোগ ছিলো সেখানে ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকিগুলো জেলা যাচাইবাছাই করে কেন্দ্রে নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version