Site icon suprovatsatkhira.com

আশাশুনির পথে প্রান্তরে ছেঁয়ে গেছে সজিনার ফুল

সমীর রায়, আশাশুনি: আশাশুনির পথে প্রান্তরে, রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙিনা ছেঁয়ে গেছে সজিনা ফুলে। তাই এ বছর সজিনার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাজারজাত হওয়ার শুরু থেকেই কেজি প্রতি দুইশো টাকা দাম ওঠায় কৃষকের কাছে লাভজনক হয়ে উঠেছে এ সবজি।
সজিনা পুষ্টি ও বিভিন্ন খাদ্যগুণসমৃদ্ধ হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকায় সজিনা গাছকে ‘জাদুর গাছ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সমগ্র দেশে বিশেষ করে গ্রামের রাস্তার ধারে এবং বসত বাড়ির আঙিনায় যতœ ছাড়াই বেড়ে ওঠে এ গাছটি। সজিনার ফুল ও পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয়, পশু খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। এর পাতা শাক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে শারীরিক শক্তি ও আহারের রুচি বাড়ে। এর মধ্যে আছে ভিটামিন এ, বি, সি, নিকোটিনিক এসিড, প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি। এ সময়ে ঋতু পরিবর্তনের কারণে আমাদের অনেকেরই মুখে স্বাদ থাকে না। আর এ স্বাদ ফিরিয়ে আনতে সজিনার জুড়ি নেই। সজিনা গাছের প্রতি আমাদের তেমন আগ্রহ না থাকলেও এর ডাটার প্রতি আগ্রহ নেই এমন মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন। সজিনা শুধু পুষ্টিকর সবজি নয় এটি ওষুধি বৃক্ষও বটে।
সজিনার বহুমুখী ব্যবহার:
ফুল: সজিনার ফুল সর্দি কাশিতে, যকৃতের কার্যকারিতায়, কৃমি প্রতিরোধে, শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
ডাটা: এর ডাটা বা ফলে প্রচুর এমাইনো এসিড আছে। এটি বাতের রোগীদের জন্য ভাল।
বীজ: সজিনার বীজ থেকে তেলও পাওয়া যায় যা বাতের ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এবং ঘড়ি ঠিক করার জন্য যে বেল ওয়েল ব্যবহার হয় তা এর বীজ হতে পাওয়া যায়।
ছাল: সজিনার ছাল থেকে তৈরি হয় দড়ি।
জলবায়ু: সজিনা চরম পরিবেশ গত অবস্থা সহ্য করতে সক্ষম তবে ২০ হতে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাল জন্মায় এবং যেসব এলাকায় ২৫০ হতে ১৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় সেখানে ভাল হয়। মাটি বেলে দোঁআশ হতে দোয়াঁশ এবং পিএইচ ৫.০ হতে ৯.০ সম্পন্ন মাটি সহ্য করতে পারে। সজিনা চাষে সারের তেমন প্রয়োজন হয়না। কারণ সজিনার বিস্তৃত ও গভীর শিকড় রয়েছে। তবে ইউরিয়া এবং জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছ ভাল হয়।
বংশ বিস্তার: এ বৃক্ষটি বীজ ও ডাল এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা সম্ভব। তবে আমাদের দেশে বীজ থেকে চারা তৈরি করে চাষাবাদের রীতি এখনও পর্যন্ত অনুসরণ করা হয় না। কারণ বীজ থেকে চারা তৈরি ব্যয়বহুল, কষ্ঠসাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আর বীজ থেকে সজিনা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ডাল পুঁতে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের চেয়ে দেরিতে ফল আসে।
আমাদের দেশে ডাল পুঁতে অঙ্গজ উপায়ে বংশ বিস্তার পদ্ধতিটি বেশি ব্যবহৃত হয়। তার কারণ হল এটি করতে তেমন দক্ষতার প্রয়োজন হয়না। আর খরচও কম, অঙ্গজ বংশ বিস্তারের জন্য ৪-৫ ইঞ্চি ব্যাসের বা বেডের ৫-৬ হাত লম্বা নিরোগ ডাল এবং আঘাত মুক্ত ডাল ব্যবহার করা ভাল। লাগানোর আগে ডালের গোড়ায় একটি ধারালো কিছু দিয়ে তেড়ছা কাট দিতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন থেঁতলে না যায়। ডাল এর মাধ্যমে বংশ বিস্তারের কাজটি আমাদের দেশে করা হয়ে থাকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত। কারণ এ সময় ডাটা সংগ্রহের পর গাছগুলোকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। ফলে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের জন্য এর সহজ প্রাপ্যতা বেড়ে যায়।
সেচ: নতুন লাগানো গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে দ্রুতই শিকড় গজাতে পারে। শুষ্ক সময় প্রায় দুই মাস সেচ দিতে হবে। তবে সজিনার গাছ একবার লেগে গেলে তেমন পানির প্রয়োজন হয়না।
কীটপতঙ্গ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ: সজিনার গাছ তুলনামূলক কীটপতঙ্গ ও রোগ সহনশীলভাবে বেড়ে ওঠে। কীট পতঙ্গ শুষ্ক ও ঠা-ায় বেশি আক্রমণ করে। কীট পতঙ্গ দ্বারা গাছে হলুদ রোগ দেখা দেয়। তবে রাসায়নিক পদ্ধতিতে সেটা মুক্ত করা সম্ভব।
ইতি কথা: স্বাদে ও গুণে ভরপুর এ সবজিটি খেতে সবার আগ্রহ থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদের প্রতি আমাদের আগ্রহ কম। চট্টগ্রামের রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র গবেষণা চালিয়ে এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি বারোমাসি জাত উদ্ভাবনে সফল হয়েছে। তবে আমাদের দেশে গ্রামের বাড়িগুলোতে এটি ব্যাপকভাবে চাষ হয়ে থাকে এবং সজিনা বিহীন বাড়ি না পাওয়ারই কথা। তবে এ সবজি চাষে যদি আমরা একটু মনোযোগী হই অর্থাৎ এর বাণিজ্যিক উৎপাদন নিয়ে চিন্তা করি তবে অন্যান্য যেকোনো সবজি উৎপাদনের থেকে এটি লাভজনক। কারণ অন্যান্য সবজির মত এর উৎপাদনে তেমন ঝুঁকি নেই এবং লাভজনক।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version