খুলনা অফিস : ৯ বছরেও খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হরি নদীর সেতুর নিচে পূর্বে নির্মিত ২০টি পরিত্যক্ত পিলার অপসারণ করা হয়নি। ফলে এগুলো এখন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পিলায় অপসারণ না করায় ওই স্থানে পলি জমে ভরাট হচ্ছে নদী। এটি ভরাট হয়ে গেলে ভবদহ এলাকাসহ নদীর আশপাশে প্রায় ১০টি গ্রামে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা তিন জেলার লাখো মানুষের আন্দোলনের ফসল হিসেবে ডুমুরিয়া উপজেলার শোলগাতিয়ায় হরি নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি উন্মুক্ত হওয়ায় খুলনা জেলার ডুমুরিয়া, যশোর জেলার কেশবপুর ও মণিরামপুর এবং সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়। বিশাল এই এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। সেই সঙ্গে দূর হয় এলাকার লাখো মানুষের যাতায়াতের কষ্ট। কিন্তু পূর্বের ঠিকাদারের নির্মিত ২০টি পিলার নদীর মাঝেই থেকে যায়। যা অপসারণের কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এখন সেই পরিত্যক্ত ২০টি পিলার এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পিলারগুলো অপসারণ না করায় পানি বাধা পাচ্ছে। আর সেখানে জমছে পলি। ভরাট হচ্ছে নদী। যশোরের ভবদহ ও খুশকের বিলের পানি সরবরাহ হয় এই নদী দিয়ে। তাছাড়া বর্ষার সময় এলাকার ১০টি গ্রামের পানি নেমে যায় এ নদী দিয়ে। নদীটি ভরাট হলে বিশাল এলাকার হাজারো মানুষের চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি স্প্যান বসানোর জন্য নদীর মাঝ বরাবর নির্দিষ্ট দূরত্বে পিলারগুলো বসানো হয়। পরে নতুন ডিজাইনে সেতু নির্মিত হওয়ার কারনে সেগুলো আর ব্যবহার করা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এগুলোর পাশে পলি জমে নদীর ওই অংশ ভরাট হয়ে গেছে। ওই এলাকা জুড়ে চর জেগে উঠেছে। শোলগাতিয়া এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমানসহ অনেকেই বলেন, ‘ব্রীজ করার আগে এই নদীটি অনেক বড় ছিল। বড় নৌকা করে নদী পারাপার হতাম। ব্রীজ নির্মাণের পর আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত পিলারগুলোতে জোয়ার-ভাটায় পানি বাধা পাচ্ছে। আর সেখানে পলি জমে যাচ্ছে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে ভাটার সময় হেঁটে নদী পার হওয়া যায়।’
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ জানান, এই নদীটির গুরুত্ব অনেক। ভবদহ ও খুশকের বিলের বিশাল এলাকার পানি ওঠানামা করে এই নদী দিয়ে। তাছাড়া এই নদীর বিশাল এলাকায় জুড়ে রয়েছে হাজারো মানুষের বসবাস। এটি ভরাট হলে এই বিশাল এলাকা জুড়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা জেলার দৌলতপুর-চুকনগর ভায়া শোলগাতিয়া সড়ক নির্মাণ প্রকল্প এবং হরি নদীতে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শোলগাতিয়া সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ২০০৩ সালে শুরু হয়। এর মধ্যে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি কোনো রকমে শেষ হলেও সেতুর নির্মাণ কাজ মাঝপথে এসে থেমে যায়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পিলার নির্মাণ করেই কাজ গুটিয়ে নিলে নির্মাণ কাজ পড়ে থাকে ৬/৭ বছর। এক রকম পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার কারণে তা দুর্বল হয়ে পড়ে। অবশেষে ২০০৭ সালের ৬ নবেম্বর সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) সড়কসহ সেতুটি হস্তান্তর করে। কিন্তু এলজিইডি অসমাপ্ত সেতুটির কাজ সম্পন্ন করতে অস্বীকৃতি জানালে সড়ক বিভাগ প্রকল্পটিকে ‘অসমাপ্ত সেতু সমাপ্তকরণ প্রকল্প’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। পরে একনেক বৈঠকে অনুমোদনের পর ডিজাইন ও অর্থ বরাদ্দ হয়ে ২০১০ সালে পুনরায় সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর জন্য আরো ৫০ লাখ ৩০ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়। এটি নির্মাণে কার্যাদেশ পায় খুলনার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা থাকলেও নানা কারণে ২০১১ সালের শেষের দিকে কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১২ সালে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তরের খুলনা নির্বাহী প্রকৌশলী তাপসী দাশ বলেন, ‘আমি জানতাম পিলারগুলো অপসরণ করা হয়েছে। এখন শুনছি হয়নি। পরিত্যক্ত পিলারগুলো দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
৯ বছরেও ডুমুরিয়ায় হরি নদীর সেতুর নিচের ২০ পরিত্যক্ত পিলার অপসারণ হয়নি
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/