যশোর/বেনাপোল প্রতিনিধি: দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত। পহেলা ফাল্গুনের পরদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর এ দিবসগুলোয় ব্যবহৃত ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছে যশোরের গদখালির ফুল চাষীরা। এ সময়কে কেন্দ্র করে এখানকার ফুল ব্যবসায়ীদেরও থাকে বিশেষ প্রস্তুতি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য মতে, এবার যশোরের গদখালী থেকে পাইকারি পর্যায়ে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুল চাষী ১৫ শত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গ্যালোরিয়াস ফুল। যা মোট উৎপাদনের ৪০ ভাগ। তার পরই ২০ ভাগ চাষ হয় রজনিগন্ধা। গোলাপ চাষ হয় ১৫ ভাগ। তাদের উৎপাদিত জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারাদেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারণ, নিরবাসখোলা এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, জমিতে সেচ প্রদান, গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরানো, সার-কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার করাসহ ফুলের আনুসাঙ্গিক পরিচর্যা করছেন চাষীরা। তাদের লক্ষ্য এ মাসের প্রতিটা ফুলের বাজার ধরা।
পানিসারা মাঠপাড়া এলাকার ফুল চাষী তবিবর জানান, ফুল চাষে আসা বংশপরম্পরায়। আমার বাবা ফুল চাষ করতো। এখন আমিও ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। আমি ৪ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছি। তার মধ্য রজনিগন্ধা ২ বিঘা ও ১ বিঘা গোলাপ ও ১ বিঘায় জারবেরা। সামনে ফুলের বড় বাজার তাইতো বাজার ধরতে সকাল-বিকাল ফুলের পরিচর্যা করছি।
গদখালিতে কথা হয় তরুণ ফুল ফুলচাষী আশরাফুল ইসলাম চান্দুর সাথে। তিনি বলেন, ৪ বিঘায় গোলাপ, ২ বিঘায় জারবেরা ও ১ বিঘায় গ্যালোরিয়াস ও রডস্টিক চাষ করেছি। আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাতে ফুল বাজারে দেওয়া যায়। প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় ৪ টাকার মতো। যদি ৭-৮ টাকা বিক্রি করা যায় তাহলে মুনাফা বেশি পাবো বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলাসহ এ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে পূরণ হয়। দেশের গ-ি পেরিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও। সামনের দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে দেশেই প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি উৎসবকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষীরা ফুল চাষ করে থাকেন।
পহেলা বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবস : যশোরের গদখালীতে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/