Site icon suprovatsatkhira.com

ত্রিমোহিনী মাদ্রাসায় তথ্য গোপন করে চার শিক্ষক নিয়োগ: শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতা বন্ধ

যশোর প্রতিনিধি: যশোরের কেশবপুর ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাযিল মাদ্রাসায় তথ্য গোপন করে চার শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা। মাদ্রাসার সকল শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতা সাময়িক স্থগিত করেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পত্রিকায় ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বানিয়ে কর্তৃপক্ষ ধরা পড়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা আদালতে বিচারধীন আছে। শিক্ষক নিয়োগ পরিপত্র বলা হয়েছে কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি ২২ অক্টোবর ২০১৫ তারিখ বা তৎপরবর্তী সময়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে কোনো পদে নিয়োগ প্রদান করে তাহলে তা অবৈধ নিয়োগ বলে বিবেচিত হবে। এ তথ্য জানার পরও মাদ্রাসা কর্তপক্ষ কৌশল অবলম্বন করে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ প্রযুক্তির সহযোগিতায় ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার অনুরুপ একটি ভুয়া পত্রিকা তৈরি করে তার মধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে কেশবপুর ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাযিল মাদ্রাসায় পাঁচ শিক্ষকের পদ শূন্য দেখানো হয়। ঐ বিজ্ঞপ্তির আলোকে চার শিক্ষক নিয়োগে দেওয়া হয়েছে। যা শিক্ষক নিয়োগ পরিপত্র বহির্ভূত।
মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ এনে অবিভাবক সদস্য আব্দুল জলিল সানা ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। একই অভিযোগে এনে অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল গফুরে নামে আদালতে মামলা করেছেন ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের চাঁদড়া গ্রামের রশিদুল আলমের ছেলে আলি রেজা সাজু। মামলা বিচারধীন আছে।
ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাজিল মাদ্রাসার সদ্য মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সদস্য স্থানীয় মেম্বর আবুল কাশেম বলেন, নতুন চার জন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। কিভাবে তাদের নিয়োগ হল? বিষয়টি জানার পর সাবেক কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলামকে সাথে নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে দেখা করি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে তার অফিসে আসতে বলেন। অধ্যক্ষকে তিনি নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে জমা দিতে বলেন।
মাদ্রাসার কয়েক জন শিক্ষক নাম না প্রকাশ করা শর্তে জানান, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষক হাজিরা খাতা অধ্যক্ষ নিজ জিম্মায় রেখেছেন। ফলে মাদ্রাসার কোন শিক্ষক ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে পারিনি । ২৪ ফেব্রুয়ারি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার জন্য অধ্যক্ষের কক্ষে ডাকা হয়। এ সময় স্বাক্ষর করতে গিয়ে দেখি নতুন আরও চার শিক্ষকের নাম। তারা জানান, ১৫ তারিখের আগে ঐ চার শিক্ষক কোন দিন মাদ্রাসায় আসেননি। এমনকি হাজিরা খাতায় তাদের নামই ছিল না। তারা জানান, সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক হিসাবে হাসান বায়েজিত ও ইবতেদায়ি শিক্ষক ইকবাল হোসেনের নাম দেখেছেন। কৃষি শিক্ষা ও ইংরেজি শিক্ষকের নাম বলতে পারেননি তারা। তবে ঐ চার শিক্ষক নাম মাদ্রাসার নৈশ্য প্রহরীর নামের শেষে লেখা হয়েছে বলে জানান তারা।
ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল গফুরের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন অফিসের কাজে ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে। তবে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, কেশবপুর ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাযিল মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ পত্র মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে। তার পর বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাছে তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়েছি। কাগজপত্র হাতে পেলেই তা যাচাই করে দেখা হবে। তবে মাদ্রাসার সকল শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version