সৌমেন মজুমদার, তালা: তালা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে পছন্দের প্রার্থীদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক প্রনব ঘোষ বাবলু এই অভিযোগ করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজনের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো নির্দেশনা দেওয়া হয়। অথচ এই নির্দেশনা না মেনে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামত প্রত্যাখ্যান করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক। গত ২৭ জানুয়ারি তালা শিল্পকলা একাডেমিতে উপজেলা বর্ধিত সভায় চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার, জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলু ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মনোনীত হন। তবে তাদের নাম না পাঠিয়ে তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্রর নাম কেন্দ্রে পাঠায় জেলা কমিটি। এদের মধ্যে তৃণমূলের ভোটে শেখ নূরুল ইসলাম ও ফিরোজ কামাল শুভ্র অংশগ্রহণ করেননি। ফিরোজ কামাল শুভ্রের বাড়ি তালায় হলেও তিনি দীর্ঘদিন থাকেন জেলা শহরে। যার তৃণমূল পর্যায়ে পদচারণা কম।
মনোনয়ন বঞ্চিতদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়নের লক্ষ্যে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত ২৬ জানুয়ারি তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মনোনয়নের জন্য চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র, উপ-প্রচার সম্পাদক প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলু, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম আবেদন করেন।
এ সময় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনের দাবি জানালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সভা মূলতবি করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে আড়াই ঘণ্টা জেলা সভাপতি-সম্পাদককে অবরুদ্ধ করে রাখেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের চাপের মুখে পরদিন ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী মনোনয়নের সিদ্ধান্ত হবে বলে ঘোষণা দেন জেলা সভাপতি।
ঘোষণা মোতাবেক ২৭ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার ফিরোজ আহম্মেদের উপস্থিতিতে ২৯০ জন কাউন্সিলরের মতামতের ভিত্তিতে তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার, জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলু ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মনোনীত হন। যেটি বর্ধিত সভার রেজুলেশনে স্বাক্ষর করা হয়েছে। অথচ প্রণব ঘোষ বাবলু ও রফিকুল ইসলামের নাম বাদ দিয়ে তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র ও ঘোষ সনৎ কুমারের নাম পাঠিয়েছেন তারা ।
তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার ইমান আলী, মাগুরা ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক রাম প্রসাদ দাশ, তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক সরদার রফিকুল ইসলামসহ তৃণমূল একাধিক নেতা জানান, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে যাদের মনোনীত করা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে মনোনয়ন না পেলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিভিন্ন সময়ে যারা নৌকার বিরোধিতা করেছেন, তাদের নাম যদি কেন্দ্রে যায় এর থেকে দুঃখের কিছু নেই।
জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক ও তালা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলু ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করায় জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা তালায় সুষ্ঠু পরিবেশে অভাবে নির্বাচন করতে পারেনি। তাই ১৫জনের মধ্যে যাদের যোগ্য মনে করা হয়েছে- জেলা থেকে তাদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
