Site icon suprovatsatkhira.com

কপোতাক্ষ খননের সুফলে বাধা অসমাপ্ত সেতুর ভাঙা পিলার

খুলনা প্রতিনিধি: দখল-দূষণে মৃতপ্রায় কপোতাক্ষ নদে প্রাণসঞ্চারে ২০১১ সালে একনেকে বরাদ্দ হয় ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। উদ্দেশ্য, খননের মধ্য দিয়ে নদটিতে স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা। লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ শেষে পূরণ হয় নদতীরের হাজারো মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ও স্বপ্ন। কপোতাক্ষে ফিরে আসে জোয়ার-ভাটা।
তবে আড়াইশ কোটিরও বেশি টাকায় সম্পন্ন এ খননের সুফলের স্থায়িত্ব নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। এর মূলে রয়েছে নদের খুলনার কপিলমুনি-সাতক্ষীরার অসমাপ্ত জেঠুয়া সেতুর ভাঙা পিলার। স্থানীয়দের দাবি, পিলারগুলোর কারণে নৌপথটিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে জোয়ার-ভাটায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় পলি জমে ভরাট হচ্ছে নদের তলদেশ।
খুলনার পাইকগাছার কপিলমুনিতে কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সালে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। তবে কিছুদিন পরই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে পলি পড়ে কপোতাক্ষ নদও নাব্যতা হারায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই সময় কপিলমুনি-সাতক্ষীরার জেঠুয়া সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার ৯১৯ টাকা। পরে কাজের মানের প্রশ্নে তা বৃদ্ধি করে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা করা হয়। নির্মাণের দায়িত্ব পায় এন হক অ্যাসোসিয়েট নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০০ সালের ১২ এপ্রিল।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত নির্মাণকাজের আংশিক সম্পন্ন করে। এরপর ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা উত্তোলন করেই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে মামলাসহ নানা জটিলতায় সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
পরে ইসলাম গ্রুপ নামে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু করে। কিন্তু সেতুর কারণে নদের গ্রোত বাধাপ্রাপ্ত হবে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে সেতু নির্মাণের কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় কপোতাক্ষের বুকে দাঁড়িয়ে থাকে অসমাপ্ত সেতুর ১৫টি পিলার। পরে ২০০৮ সালে পিলারগুলোর ওপরের অংশ ভেঙে ফেলা হলেও নিচের অংশ আজো অপসারণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে কপিলমুনি (বিনোদগঞ্জ) বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সরদার গোলাম মোস্তফা বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা খরচ করে সরকার জনস্বার্থে নদ খনন করেছে। কিন্তু নদের মাঝখানের ওই ১৫টি পিলার উপড়ে না ফেলায় খননের সুফল নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে জোয়ার-ভাটা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পলি জমে ওই অংশ ফের ভরাট হতে পারে।
একই আশঙ্কার কথা জানান কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়ার্দারও। তিনি বলেন, ভাঙা পিলারগুলোর কারণে নিয়মিত পলি জমছে। ফলে কপোতাক্ষ নদে আবারো নাব্য হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খুলনা-৬ আসনের এমপি আলহাজ আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টির কারণে কপোতাক্ষ নদে নতুন করে প্রাণ ফিরেছে। নদ খনন এলাকার মানুষের সংগ্রামের ফসল। ভাঙা পিলারের কারণে নদটি যদি আবারো ভরাট হয়, তবে তা হবে দুঃখজনক। এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version