Site icon suprovatsatkhira.com

শার্শায় বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলি চাষ

এম ওসমান/মাহবুব আলম, শার্শা (যশোর): যশোরের শার্শা উপজেলায় এ বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে ব্রোকলির চাষ (সবুজ ফুলকপি)। ব্রোকলি একটি ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ সমৃদ্ধ উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও কীটনাশক মুক্ত সবজি হওয়ায় স্থানীয় কৃষি বিভাগ সবুজ ফুলকপি খ্যাত এ সবজিটি চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, ব্রোকলি যে শুধুই স্বাদে-বর্ণে অনন্য তা নয়, এর রয়েছে বহুবিধ পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতায় এই ব্রোকলির জুড়ি মেলা ভার। সাধারণত: অন্যান্য সবজিতে ব্রোকলির মত এতো পুষ্টিগুণ পরিলক্ষিত হয় না। আর এজন্যই এর কদরও বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ব্রোকলি চোখের দৃষ্টি শক্তি ঠিক রাখতে সহায়তা করে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকায় রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টি শক্তি ঠিক রাখে। এছাড়া এতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে বলে অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
ব্রোকলি মানব দেহের গ্লুকোসিনোলেট নামক অর্গানিক উপাদানের মাত্রা বাড়িয়ে লিভারের দূষিত পদার্থ নিষ্কাশন করে। ফলে লিভার থাকে রোগ মুক্ত। সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে-তে ভরপুর ব্রোকলি হাড়ের গঠন শক্তিশালী ও বিভিন্ন ধরনের হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
শুধু তাই নয় ব্রোকলি প্রাকৃতিক আশ বা ফাইবার সমৃদ্ধ বলে দেহের পরিপাক তন্ত্র ঠিক রাখে, খাদ্য সঠিকভাবে হজম করতে সাহায্য ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এমনকি এটি নি¤œ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।
অন্যদিকে হৃদরোগ প্রতিরোধে ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। এর উপকারী পুষ্টি উপাদান ম্যাগনেশিয়াম আর ক্যালশিয়াম রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মানব দেহের ক্ষতিকারক কোলেস্টোরেল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। উপরন্তু ব্রোকলিতে বিদ্যমান ভিটামিন বি-৬ হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনে।
এছাড়াও এই সবুজ ফুলকপি ব্রোকলিতে বিদ্যমান আর.ডি.এ নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট দেহের যেকোন ধরণের ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলে এবং ফ্রি র‌্যাডিকেলের বিপরীতে কাজ করে। অ্যালার্জি প্রতিরোধে উপকারী উপাদান ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা প্রদাহ বিরোধী হিসেবে কাজ করে।
এ ব্যাপারে উপজেলার মাটিপুকুর গ্রামের ব্রোকলি চাষি জানান, এ সবজিটি চারা তেরি থেকে মাত্র ৯০ দিনে উত্তোলনযোগ্য এবং রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় এবং এটি কীটনাশকমুক্ত। এর পরিচর্যা ও উৎপাদন খরচ বিঘা প্রতি জায়গা ভেদে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। যা বিক্রি করে আয় হয়ে থাকে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কম সময়ে লাভজনক এ সবজিতে বিঘা প্রতি ৩০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে পাইকারী ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন, শাহিন আলম ও সোলাইমান জানান, গত বছর এ সবজি নতুন হওয়ায় তিনি বিক্রি করতে হিমশিম খেলেও এবছর স্বাদযুক্ত এ সবজির চাহিদা বাড়ায় বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছে না। পাশাপাশি এটি লাভজনক হওয়ায় কৃষকরাও এটি চায়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
এদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানান, উচ্চ মূল্যের এ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধক এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় ভোক্তা পর্যায়ে এর চাহিদা বাড়ায় এবছর বিক্রি বেড়েছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার গৌতম কুমার শীল জানান, তার প্রচেষ্টায় প্রথম বছর উচ্চ মূল্যের ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবুজ ফুলকপি খ্যাত ব্রোকলি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়। এরপর এ বছর ব্যাপক প্রচারণার কারণে ভোক্তারা চাহিদা করায় বিক্রি বেড়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের বাজারজাত করণসহ সবরকম সহায়তা দেয়ায় আগামী বছর এর চাষ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version