যশোর প্রতিনিধি: সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু বক্কর আবুর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হয়নি দুই মাসেও। জানা যায়নি তিনি কীভাবে মারা গেছেন। এই মৃত্যুর ঘটনায় দুটি মামলা হলেও তদন্তে কোনো কুলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
আবু মৃত্যুর দুটি মামলা হয়েছে। যার একটির তদন্তও কোন কিছু করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অপমৃত্যুর মামলায় ময়না তদন্তের পর রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদনের ফল পাওয়ার অপেক্ষায় তদন্ত কর্মকর্তা। আর হত্যা মামলায় দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনে সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় তদন্ত কর্মকর্তা। গ্রেফতার দুজন আবার বিএনপির কর্মী। যারা নয়াপল্টনের সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর আবু দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলতে গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় গিয়েছিলেন। ১৯ নভেম্বর বিকালে বুড়িগঙ্গার তেলঘাট এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। ২২ নভেম্বর রাতে তার ভাতিজা হুমায়ূন কবির রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন।
আবুর মরদেহটি ছিল পঁচাগলা। তাতে দৃশ্যমান কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে মরদেহটি যে অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, তাতে ছোটখাট আঘাত থাকলে সেটি বোঝারও উপায় ছিল না।
ওই রাতেই অপমৃত্যুর মামলা করে থানা পুলিশ। মামলাটির তদন্ত করছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আক্কেল আলী। পরে নিহতের ছোট ভাই আবুল কাশেম একই থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এই মামলার তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আরাফাত হোসেন।
আবু পল্টনের মেট্রোপলিটন হোটেলের চতুর্থতলায় ৪১৩ নম্বর কক্ষে অবস্থান উঠেছিলেন। ১৮ নভেম্বর রাত ৮টার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। রাত ১০টার দিকে একটি মোবাইল নম্বর থেকে কেশবপুরে তার এক ভাগ্নের কাছে কল করে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণকারীদের দেওয়া বিভিন্ন নম্বরে দেড় লাখ টাকা বিকাশ করেন তারা। পরে তাদের চাহিদা অনুসারে আরও ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এরপর থেকে অপহরণকারীদের সব মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
হুমায়ূন কবির সাংবাদিকদের জানান, ‘শাহবাগ থানায় আমি অভিযোগ করেছিলাম। পরে ওই থানার পুলিশ হোটেলে গিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেও কোনো ক্লু পায়নি।
‘চাচার সঙ্গে সাইফুল নামে একজন ছিলেন আর কেশবপুর থেকে মিন্টু নামে একজনকে ধরে নিয়েছিল ডিবি পুলিশ। তাদের নাম-ঠিকানা জানতে গত ১৪ ডিসেম্বর আমাকে ফোন করেছিল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ। পরে শুনেছি, তাদের পল্টনের গাড়ি পোড়ানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। ওই সময়ে চাচা হত্যা মামলার তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ বলেছিল, আমরা চেষ্টা করছি। দেখা যাক কী হয়।’
অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আক্কেল আলী সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘আবু বক্কর আবুর ময়না তদন্তের পাশাপাশি তার ভিসেরা পরীক্ষার জন্য মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবেদনই এখনো আসেনি। প্রতিবেদন পেলে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেব। নিহতের পরিবারের করা হত্যা মামলাটির তদন্ত চলবে।’
হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (অপারেশন) আরাফাত হোসেন বলেন, ‘সাইফুল ও মিন্টু নামে দুজনকে কেশবপুর থেকে আটক করা হয়েছিল অন্য মামলায়। এই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখাতে আদালতে আবেদন জানিয়েছি, এখনো কোনো আদেশ পাইনি। পেলে সাইফুল-মিন্টুকে থানায় এনে রিমান্ডের আবেদন জানাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে এই মামলাটির তদন্ত কাজ এগিয়ে যাবে।’
আবু বক্কর আবু ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ওই আসনে মনোনয়ন পেলেও পরে তা জামায়াতকে দেওয়া হয়।
যশোরের বিএনপি নেতা আবুর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হয়নি দু’মাসেও
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/