পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: উৎপাদন এবং বাজার মূল্য কম থাকায় হলুদ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে পাইকগাছার চাষীরা। হলুদ চাষ ছেড়ে কৃষকরা ঝুঁকছেন অন্য ফসল চাষের দিকে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ২০ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ কম হয়েছে।
মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারের মধ্যে হলুদ একটি অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য। হলুদ রান্নার কাজে যেমন ব্যবহার হয়, তেমনি ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধক, রক্ত পরিষ্কারক, হজমকারক, কৃমিনাশক এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় এ দ্রব্যের উৎপাদন ভাল না হওয়ায় এবং বাজার মূল্য কম থাকায় চাষীরা দিন দিন হলুদ চাষ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
পাইকগাছা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছা উপজেলায় এ বছর ৯০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে। গত বছর ১১০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়।
উপজেলার গদাইপুর ইউপির চরমলই গ্রামের কৃষক সবুর গোলদার জানান, এ বছর ২ বিঘা জমিতে হলুদের চাষ করেছেন তিনি। হলুদের উৎপাদন অনেক কম। এরপর আবার অনেক হলুদ পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। ২ বিঘা জমিতে আনুমানিক ৮০ মণ হলুদ হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা। কিন্তুবীজ, জমির খাজনা এবং সারসহ বিভিন্ন কাজে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
লোকসান প্রসঙ্গে সবুর বলেন, হলুদ চাষের পাশাপাশি একই জমিতে বেগুন, মরিচ, ওলকচু, আলু, কচুরমুখিসহ মিশ্র চাষ করার ফলে কিছু লাভ হতে পারে। শুধুমাত্র হলুদ চাষ করলে এখন আর লাভ হয় না। হলুদ চাষের জন্য এখন ভাল মানের বীজ পাওয়া যায় না। এছাড়া শ্রমিক মূল্য, সার, কীটনাশকের মূল্য অনেক বেশি। তাছাড়া জমির পাশে এখন আর আগের মত নালা কিংবা ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকে না। সব বন্ধ হয়ে গেছে। পানি সরবরাহ না থাকার ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এবং হলুদ পঁচে যায়।
এছাড়া হিতামপুর গ্রামের নির্মল চন্দ্র অধিকারী জানান, তিনি ৯ কাঠা জমিতে হলুদ চাষ করে প্রায় ৪০ মণ হলুদ পাবেন বলে আশা করছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ৯ কাঠা জমিতে হলুদ চাষ করতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
চাষী শেখ জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, এক সময় তাদের অনেক জমিতে হলুদের চাষ হতো। কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ায় এবং লাভ বেশি না হওয়ায় এখন আর হলুদের চাষ করেন না তিনি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ এইচ এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, চাহিদার তুলনায় হলুদের উৎপাদন এখন অনেক কম। হলুদ চাষে পরিশ্রম বেশি, বীজের দাম বেশি। উপজেলায় লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পাইকগাছায় হলুদ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষক
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/