Site icon suprovatsatkhira.com

হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির ঐতিহ্য ধানের গোলা

খায়রুল আলম সবুজ, খলিষখালী (পাটকেলঘাটা): গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ’- বাক্যটি বাঙালি ঐতিহ্যের পরিচায়ক। আর এই কথাটির মাধ্যমেই পরিচয় মিলতো গ্রাম বাংলার গেরস্তদের। কিন্তু কালের গর্ভে যেন হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালি ঐতিহ্যের প্রতীক ‘ধানের গোলা’।
কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির ঐতিহ্য ধানের গোলা। গ্রামবাংলার সমৃদ্ধির প্রতীক সেই ধানের গোলা এখন বিলুপ্তের পথে। মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত থাকলেও অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে নেই ধান মজুদ করে রাখার বাঁশ-বেত ও কাঁদা দিয়ে তৈরি গোলাঘর। অথচ এক সময় সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করতো কার ক’টি ধানের গোলা আছে এই হিসেব কষে। কন্যা পাত্রস্থ করতেও বর পক্ষের বাড়ি থেকে ধানের গোলার খবর নিতো কনে পক্ষের লোকজন, যা এখন শুধু রুপকথা। গ্রাম অঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরি করা ধানের গোলা বসানো হতো উঁচু স্থানে। গোলার মাথায় থাকত টিনের তৈরি পিরামিড আকৃতির টাওয়ারের মতো, যা দেখা যেত অনেক দূর থেকে। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন আর দেশের বিভিন্ন জেলায় শহর থেকে আসা গোলা নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা মিলে না পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রাম অঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ ফাটিয়ে কাবারী ও কঞ্চি দিয়ে প্রথমে গোল আকৃতির কাঠামো তৈরি করা হত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্গ অথবা আয়তক্ষেত্র আকার গোলা তৈরি করা হত। এরপর তার গায়ের ভেতরে-বাইরে মাটির আস্তরণ লাগানো হতো। এর মুখ বা প্রবেশ পথ রাখা হতো বেশ উপরে (ধান বের করার জন্য অনেকে নিচে বিশেষ দরজা রাখা হতো) যেন চোর/ডাকাতরা চুরি করতে না পারে।
তবে কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও ধান রাখার গোলা রেখে স্মৃতি বহন করছে খলিষখালীর, রাঘবকাটী গ্রামের আলী আহম্মদ গাজীর বাড়িতে।
পাটকেলঘাটা খলিষখালীর আলী আহম্মদ গাজী বলেন, এই ধানের গোলা আমার দাদার আমল থেকে রয়েছে। আমার দাদা, তারপর আমার বাবা তার পর আমি সেই স্মৃতি ধরে রেখেছি। আমাদের কয়েক জন প্রতিবেশীর বাড়িতেও ধানের গোলা রয়েছে। কৃষকের ধানের গোলা ও ডোলা এখন শহরের বিত্ত্বশালীদের গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে। কৃষকের ধান চলে যাচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু মুনাফা লোভী ফড়িয়া ও আড়ত ব্যবসায়ীর দখলে। ইট বালুু সিমেন্ট দিয়ে পাকা গুদাম ঘরে রাখা হচ্ছে হাজার হাজার টন ধান চাল। অনেক ক্ষুদ্র কৃষক বস্তা ও ব্যারেল ভর্তি করে রাখছে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমের উৎপাদিত ধান। ফলে গোলার প্রয়োজন কমে গিয়ে এটা বিলুপ্তি পথে চলে গেছে। আমাদের ধারণা আগামী প্রজম্মের কাছে গোল ঘর বা ধানের গোলা স্মৃতিতে পরিণত হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version