মোজাহিদুল ইসলাম, কলারোয়া: বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফফার। সংক্ষেপে গফফার কমান্ডার। তার বাড়ি কলারোয়ার বহুড়া গ্রামে।
মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে তিনি দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে বলেন, শার্শা উপজেলার দক্ষিণে প্রসিদ্ধ বাগআঁচড়া বাজার। মুক্তিবাহিনীদের চলালের জন্য বাজারটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেজন্য এই বাজার শত্রু মুক্ত রাখাই ছিল মুক্তিবাহিনীর লক্ষ্য। মুক্তিযোদ্ধারা গোপন সূত্রে জানতে পারে বাগআচড়া বাজারে পাকিস্তানি সৈন্যরা আসবে। ঐ খবর পেয়েই মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। রাড়ীপুকুর শকুনি বটতলায় বসে তিনি, মোসলেম উদ্দিন ও আবুবকর সিদ্দিক যুদ্ধের কৌশল গ্রহণ করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় তিনি (কমান্ডার আব্দুল গফফার) থাকবেন বাজারের মাঝখানে, দক্ষিণ পাশে মোন্তাজ ডাক্তারের বাড়ির সোজা কমান্ডার মোসলেমের দল। এছাড়া কমান্ডার আবু বক্কর সিদ্দিকের গ্রুপ উত্তর পাশের আলাউদ্দিন মিস্ত্রীর বাড়ির পাশে অবস্থান নেবেন। প্রতি দলে ২০-২১ জন করে মুক্তিযোদ্ধা থাকবে। সিদ্ধান্ত হয় রাত ১টার সময় আক্রমণ শুরু হবে এবং ভোর চারটায় পুনরায় শকনী বটতলায় ফিরে আসবেন তারা।
তিনি আরও জানান, ফায়ার ওপেন করার দায়িত্ব ছিল আমার উপরই। সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি তার দল নিয়ে জেএমসি পাট গোডাউনের পাশে অবস্থান নেন। রাত ১টা বেজে উঠার সাথে সাথে গর্জে ওঠে তার রাইফেল। বাজারের আব্দুল হামিদের গোডাউনের উত্তর পাশ হতে পাকিস্তানি ও তাদের দোসররা গুলির জবাব দিতে থাকে। উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধা এলাহি বকস ওরফে কদর আলী জেএমসিতে মোলেটিভ ককটেল ছোড়ার জন্য এগিয়ে যান। ককটেল বিস্ফোরিত না হলেও আগুন জ্বলে ওঠে। আগুনে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের শত্রুপক্ষ দেখতে পেয়ে মুহূর্মুহু গুলি ছুড়তে থাকে এবং সুলতানপুরের বাহাদুর ও আমজের আলী আহত হন। বসতপুরের এলাহি বকস ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। এসময় তাদের পিছনে পাঠিয়ে দিয়ে যুদ্ধে এগিয়ে যায় মুক্তিবাহিনী। তারা ডা. আফিল উদ্দিনের বাড়ির পাশ থেকে আর পাকিস্তানিরা পোস্ট অফিসের দিক থেকে গুলি ছুড়তে থাকে। ইতোমধ্যে তার ও আবু বক্কর সিদ্দিকের দল মিলিত হয়ে পোস্ট অফিসের দিকে ক্রলিং করে এগুতে থাকে। এদিকে এই দলের কিছু সদস্য পোস্ট অফিসে যেয়ে দেখে পাকিস্তানিরা নাভারণ আর্মি ক্যাম্পে টেলিফোন করছে। মুক্তিবাহিনী জানালার পাশে দাড়িয়ে তাদের কথা শোনে। তাদের বক্তব্য ছিল, এখন আমরা আক্রান্ত হয়েছি। ওখান থেকে উত্তর আসে তোমরা কেমন আছো? ফের উত্তর দেয়- ছহিহ সালামতে ভালই আছি তবে সাহায্যের দরকার। বলার সাথে সাথে জানালা দিয়ে গ্রেনেড ছুড়ে মারে মুক্তিবাহিনী। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন মারা যায় এবং ৭ জনকে পাকড়াও করে চন্দনপুরে জনতার আদালতে তাদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। তবে স্বল্প বয়সের কারণে জনতার আদালতের রায় অনুযায়ী মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার শর্তে এক রাজাকারের মৃত্যুদ- রোহিত করা হয়। পরে তাকে যুদ্ধে পাঠানো হয়।
এছাড়াও তিনি বাগআচড়া (যশোর), কলারোয়া, খোর্দ্দ, বালিয়াডাঙ্গা, ভোমরা ও কদমতলা যুদ্ধে অংশ নেন।
গফফার কমান্ডার বলেন, তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারা অক্ষুণœ দেখতে চান। এছাড়াও তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন দেখেন।
রণাঙ্গনের গল্প: আটক ৭ পাক হানাদারকে চন্দনপুরে জনতার আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/