Site icon suprovatsatkhira.com

খুচরা না থাকার অজুহাতে বাড়তি আয় বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসে

বেনাপোল থেকে এম ওসমান/মাহবুব আলম: যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শিশু, ক্যান্সার রোগী ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের কাছ থেকে ভারত ভ্রমণে নতুন করে টার্মিনাল চার্জ (মাসুল) আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। অথচ এদের মাসুল মওকুফ করে দিয়েছিল সরকার। এদিকে সাধারণ যাত্রীপ্রতি বন্দরের টার্মিনাল চার্জ বাবদ ৪০ টাকা ৭০ পয়সা ও ভ্রমণ কর ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ খুচরা পয়সা নেই অজুহাত দেখিয়ে ৪০ টাকা ৭০ পয়সার স্থলে ৪৪-৫০ টাকা আদায় করছে। একই সঙ্গে ভ্রমণ কর ৫০০ টাকার স্থলে ৫১০ টাকা নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে প্রতি মাসে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৫ লাখ টাকা বাড়তি আদায় করছে। পরে এ টাকা সোনালী ব্যাংক ও বন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শিশু, রোগী ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের কাছ থেকে নতুন করে টার্মিনাল চার্জ আদায় ও বাড়তি টাকা নেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীসহ সচেতন মহল। তারা বলছেন, এসব যাত্রীর কাছ থেকে মাসুল আদায় কেন? শুধু তাই নয়, প্রতিবছরে টার্মিনাল চার্জ শতকরা ৫ ভাগ বাড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি রীতিমতো অনৈতিক।
বেনাপোল চেকপোস্টে যাত্রীপ্রতি ৪২-৫০ টাকা হারে চার্জ আদায় করা হচ্ছে। এর আগে শিশু, রোগী, প্রতিবন্ধী ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভারত ভ্রমণে বন্দরে কোনো মাসুল আদায় করা হতো না।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫-৭ হাজার মানুষ ভারতে যাতায়াত করেন। এদের বেশির ভাগ চিকিৎসার জন্য ভারত যান। এ ছাড়া পূজা-পার্বণ, ভ্রমণ ও লেখাপড়ার কাজে বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ ভারতে যান। আর্থিকভাবে সচল যাত্রীরা বেশির ভাগ বিমানযোগে, নিম্ন আয়ের ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ স্থলপথে চলাচল করেন। তবে ভারতীয় যাত্রীদের যারা বাংলাদেশে আসেন তাদের কাছ থেকে কোনো ভ্রমণ কর আদায় করে না ভারত সরকার।
বেনাপোল সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক রকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্রমণ কর ৫০০ ও বন্দরের টার্মিনাল চার্জ বাবদ ৪০ টাকা ৭০ পয়সা আদায় করা হচ্ছে। তবে প্রথম থেকেই পাঁচ বছরের কম বয়সী, ক্যান্সার রোগী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে টার্মিনাল চার্জ মওকুফ ছিল। কিন্তু চলতি মাসে বন্দর কর্তৃপক্ষ সব যাত্রীর কাছ থেকে টার্মিনাল চার্জ আদায়ের নির্দেশনা দেন।
ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বেনাপোল বন্দরে আসা কয়েকজন প্রতিবন্ধী যাত্রী বলেন, এর আগে তারা যখন ভারতে গেছেন তখন ভ্রমণ কর ও টার্মিনাল চার্জ দিতে হয়নি। কিন্তু এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ চার্জ আদায় করছেন। প্রতিবন্ধী নারী ময়মুন নিশা বলেন, তার কাছ থেকে জোর করে টার্মিনাল চার্জ আদায় করা হয়েছে। অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনো কথা শোনেনি তারা।
বেনাপোল চেকপোস্টে কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, অতিরিক্ত টাকা নিলেও বেনাপোল আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল থেকে কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে বসার জায়গা নেই, বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই। ল্যাগেজ বহনে কোনো ট্রলির ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। তাহলে কী কারণে চার্জ আদায় করা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) প্রদোষ কান্তি দাস জানান, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে টার্মিনাল চার্জ পুনরায় চালু করা হয়েছে। এখন থেকে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে সব ধরনের যাত্রীকে ৪০ টাকা ৭০ পয়সা হারে বন্দরের মাসুল পরিশোধ করতে হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version