Site icon suprovatsatkhira.com

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আজ

এস.এম নাহিদ হাসান: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আজ। নির্বাচনে সাতক্ষীরার চারটি আসনে ২২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তফশিল ঘোষণার পর থেকে প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সাধ্যমত গণসংযোগের চেষ্টা করেছেন। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ দখলে রাখতে সক্ষম হলেও কোনভাবেই দাঁড়াতে পারেনি ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা।
এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে প্রচারণা কার্যক্রমে বেশ সরব দেখা গেলেও মাঠে ছিল না এনপিপি, পিডিপি, বাসদ, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে মানুষের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল, তেমনি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠারও ঘাটতি ছিল না। প্রচারণা চালাতে গিয়ে প্রার্থীরা যেমন ফুলের তোড়া উপহার পেয়েছেন, তেমনি কোন কোন প্রার্থী শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্তও হয়েছেন। ঘটেছে অনেক হামলা-মামলা-সংঘর্ষ-বাক যুদ্ধের ঘটনাও। তারপরও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। শেষ দিনও নির্বাচনের মাঠে নতুন নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে দ্বিমুখী লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে। এই আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো নিয়ে নানা ঘটনার জন্ম হয়েছে। নৌকা প্রতীকের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, বিএনপির প্রার্থীর উপর হামলা ও মামলা, জাতীয় পার্টির প্রার্থীর গাড়ি বহরে হামলা, নৌকায় ভোট চাওয়ায় কলারোয়া থানার ওসির স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়াসহ এ আসনটি বেশ গরম হয়ে উঠেছিল।
সর্বশেষ শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ দিদার বখত নৌকার প্রার্থী মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাওয়ায় তা নির্বাচনী সমীকরণকে আরও সহজ করে তুলেছে। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা করেও মাঠে নামতে পারেননি ধানের শীষের প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব। তাই যেখানে এ আসনে আগে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা ছিল, তা কমে গিয়ে নৌকার জয় সহজ হয়েছে।


এছাড়া সাতক্ষীরা-১ আসনে ইসলামী আন্দোলনের এফএম আছাদুল হক (হাত পাখা), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আজিজুর রহমান (কাস্তে), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আব্দুর রশিদ (আম) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরদার মুজিব নির্বাচনের ফলাফলে তেমন কোন প্রভাব রাখতে পারবেন না বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা জেলার দুটি উপজেলা ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসনে ভোটার সংখ্যা চার লক্ষ ২২ হাজার ৮৯৮। এই আসনে উল্লিখিত তিন প্রার্থীসহ সাতজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-২ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছয় প্রার্থীর মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির জয় অনেকটা নিশ্চিত। এ আসনের ২০ দলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক কারাগারে রয়েছেন। তার কর্মীরাও প্রচারণায় নামতে পারেননি। তবে, জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী শেখ মাতলুব হোসেন লিয়ন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি রবিউল ইসলামকে নির্বাচনী মাঠে বেশ সরব দেখা গেলেও তা ভোটের ফলাফলে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অপরদিকে, বাসদের মই প্রতীকের প্রার্থী নিত্যানন্দ সরকার ও এনপিপির আম প্রতীকের প্রার্থী জুলফিকার রহমানের প্রচার ছিল না বললেই চলে। নির্বাচনী প্রচার নিয়ে এ আসন অন্যান্য আসনের তুলনায় বেশ শান্ত ছিল।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৬ হাজার ১৮৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৩৪ জন ও মহিলা ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৫০ জন।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে জেলার নানা উন্নয়ন কর্মকা-ের উদ্যোক্তা ডা. রুহুল হক ও ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা নিয়ে ডা. শহীদুল আলমের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকলেও তা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। এ আসনেও নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। আর হামলা-মামলা-গ্রেফতারে মাঠে নামতে পারেননি বিএনপি প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। তাই এ আসনেও নৌকা বিজয়ী হতে পারে।
এছাড়া আওয়ামী লীগে ডা. রুহুল হকের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ও আগামীতে তার মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এ আসনে নৌকার বিজয় দেখছেন সাধারণ মানুষ।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা-৩ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫১৫ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯১ হাজার ৮২৩ জন।
তবে, নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ দখল নিয়ে সবচেয়ে বেশি সহিংস হয়ে ওঠে সাতক্ষীরা-৪ আসন। এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা গাজী নজরুল ইসলাম কারাগারে থাকলেও মহোজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের জগলুল হায়দার ও মহাজোটের শরীক বিকল্পধারার প্রার্থী গোলাম রেজার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে থাকে। যা গতকাল পর্যন্তও অব্যাহত ছিল।
এ আসনেও নৌকা, কুলা ও ধানের শীষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা ম্লান হয়ে গেছে। শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ জগলুল হায়দারের পরিবর্তে গোলাম রেজাকে সমর্থন দেওয়ায় নির্বাচনী সমীকরণ পাল্টে যায়। আবার, গতরাতে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জগলুল হায়দারের পক্ষে ভোট দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিকল্পধারা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পড়েন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে।
এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুস সাত্তার মোড়ল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল করিম ও বাঘ প্রতীকের রবিউল ইসলাম জোয়ারদার ভোটে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবেন না বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, জেলার শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৯৩ হাজার ৪৭৯ জন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version