Site icon suprovatsatkhira.com

রণাঙ্গনের গল্প: ১৪৪ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যাকারী জল্লাদ কাশেমকে আটক করেছিলাম

শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ, কালিগঞ্জ: বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম মমতাজ হোসেন মন্টু। কালিগঞ্জের মুকুন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মমতাজ হোসেন মন্টু ১৯৭১ সালে ধুলিয়াপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসিতে অধ্যায়নকালে ৯নং সেক্টরের অধীনে অধিনায়ক মেজর এম এ জলিল ও উপ-অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা হিরুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ মাতৃকার টানে হানাদার ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হাতিয়ার হাতে তুলে নেই। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শ্যামনগর, পিরোজপুর, রতনপুর, বসন্তপুর, কালিগঞ্জ ও কুলিয়া যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করি।
তিনি বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদের বাড়ি থেকে হানাদার ও তার দোসরদের সাথে যুদ্ধের প্রাক্কালে আমি কুখ্যাত রাজাকার জল্লাদ কাশেমকে, যে ১৩৭ জন নিরীহ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা ও ৭ জনকে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করেছিলো, তাকে রাইফেল ও গ্রেনেডসহ আটক করে ভারতে নিয়ে যায়। এই কাশেম জল্লাদ এতই হিংসা ছিলো যে, ভারতের ক্যাম্পে নিয়ে রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে গায়ে আচড় দেওয়ার পরেও তার মুখ দিয়ে জয় বাংলা বলানো সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর আগে একবারের জন্যও বলাতে পারিনি। এই কাশেমের হাত থেকে নিরীহ অবলা নারী-শিশু কেউ রক্ষা পায়নি। তাকে ভারতের ক্যাম্পে আটকে রাখার পর বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া হাজার হাজার শরনার্থী তাকে ধিক্কার জানতে ক্যাম্পে এসে তার মুখে থু থু দেয় এবং আনন্দ প্রকাশ করেছিলো। একপর্যায়ে নবম সেক্টরের ক্যাপ্টেন নুরুল হুদার সামনে উপনীত হয়ে ক্যাপ্টেন সচিন কর্মকর, মেজর লিয়াকত ও হাবিলদার মোকাররমের উপস্থিতে জল্লাদ কাশেমের জবাববন্দি রেকর্ড ও পরবর্তীতে তার শেষ ইচ্ছা অনুযাযী বাংলাদেশের উকসা বর্ডারে স্টেন গানের ব্রাস দিয়ে গুলি করে মারা হয়। এই সাহসিকতাপূর্ণ কাজটির জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ফলোও করে সংবাদ প্রচার করা হয়েছিলো।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে মমতাজ হোসেন মন্টু আরও বলেন, ২০ নভেম্বর হানাদার মুক্ত হয় কালিগঞ্জ। এরপর আবারও ক্যাপ্টেন নুরুল হুদার নেতৃত্বে অগ্রগামী মুক্তিযোদ্ধাদের দলভুক্ত হয়ে আমি কুলিয়া অভিমুখে রওনা হই। হানাদার বাহিনী কর্তৃক ভেঙে দেওয়া কুলিয়া ব্রিজের এপার ওপারের মাঝে দুই দিনব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধ করে পাক-বাহিনীর মেজর পাগলা খাঁন ও ৪ জন রাজাকারকে হত্যা করতে সক্ষম হই। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সেই দিন আমাদের সহযোদ্ধা কুষ্টিয়ার ইউনুচ আলী মৃধা ওই যুদ্ধে শহীদ হন। এরপর শহীদ ইউনুচকে মৃত অবস্থায় কালিগঞ্জের ডাক বাংলায় নিয়ে এসে আমি নিজে হাতে গোসল করিয়ে কালিগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের পাশে সরকারি কবর স্থানে দাফন করি। এরপর আমরা আবারও ক্যাপ্টেন নুরুল হুদার নেতৃত্বে হানাদারদের পিছু ধাওয়া করতে করতে খুলনা অঞ্চলকে হানাদার মুক্ত করি এবং স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ হোসেন বলেন, আমি এখনো স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অসম্পদায়িক চেতনায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখি।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version