Site icon suprovatsatkhira.com

রণাঙ্গনের কথা: সেই নির্যাতনের কথা মনে উঠলে আজও আৎকে ওঠেন আছিয়া খাতুন

মীর খায়রুল আলম/এমএ মামুন, দেবহাটা (সদর): বীরঙ্গনা আছিয়া খাতুন। পরিবারের অভাবের তাড়নায় অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছিল দেবহাটা উপজেলার টাউনশ্রীপুরের আজিজপুর গ্রামের দিনমজুর রমজান আলীর সাথে। বিয়ের কয়েক বছর পর একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিলেও জন্মের পর তার মৃত্যু হয়। এর কিছুদিন পরই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন তার উপর পাক বাহিনী কর্তৃক সে সময়কার নির্যাতনের ঘটনা।
তিনি জানান, স্বামী দিন মজুর হওয়ায় অভাবের তড়নায় কাজ করতে বাইরে যান। এমন সময় এলাকায় পাকবাহিনী আসার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। স্বামী বাড়িতে না থাকায় পাক বাহিনীর ভয়ে তিনি পালিয়ে আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী আব্দুল কাদেরের বাড়িতে। একপর্যায়ে কাদেরের পরিবারের লোকজন ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। ঐ বাড়িতে অজান্তেই থেকে যান তিনি (আছিয়া খাতুন)। এমন সময় পাক বাহিনী আব্দুল কাদেরের বাড়িতে এসে উপস্থিত হলে তিনি দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পাক হানাদার বাহিনী আছিয়া খাতুনকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী আব্দুল হামিদের ঘরের ভিতর। সেখানে পাক বাহিনীর কয়েকজন সদস্য তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে আছিয়া খাতুন জ্ঞান হারিয়ে ফেললে পাক বাহিনী চলে যায়। পরে স্থানীয়রা আছিয়া খাতুনকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।
তিরি আরও জানান, সেসময় কলঙ্কের দাগ দিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। সকল বঞ্চনা নিয়ে অসুস্থ শরীরে তিনি আশ্রয় নেন প্রতিবেশী আব্দারের বাড়িতে। পরবর্তীতে জীবন-জীবিকা নির্বাহের তাগিদে তিনি বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। শেষ হয় মুক্তিযুদ্ধ। আজও সেই নির্যাতনের কথা মনে উঠলে আৎকে ওঠেন তিনি। গত দুই বছর আগে তাকে দেওয়া হয়েছে বীরঙ্গনার স্বীকৃতি।
আছিয়া খাতুন বলেন, কলঙ্কের দাগ দিয়ে স্বামী বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর খুব কষ্টে জীবন কেটেছে। কিন্তু দুই বছর পূর্বে আমাকে বীরঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সরকার আমাকে চার কক্ষ বিশিষ্ট ছাদের ঘর, টিউবওয়েল, গোলায় ঘর, বাথরুমসহ হাঁস মুরগির ঘর তৈরি করে দিয়েছে। শুনেছি আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, তত দিন সরকার আমাকে দেখবে। সারাজীবন কষ্টের পর শেষ জীবনে এসে একটু ভাল থাকার ব্যবস্থা করায় সরকারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version