Site icon suprovatsatkhira.com

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এখনও ভুলতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্তরা: আবারো হামলা আতংক অভয়নগরের মালোপাড়ায়

এমএ জলিল, অভয়নগর (যশোর): আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। একই সাথে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তি সহিংসতা এখনও ভুলতে পারেননি যশোরের অভয়নগরের মালোপাড়া মানুষ। সরকারসহ বিভিন্ন মহলের অনেক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ফলে দৃশ্যমান উন্নয়ন হলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি মালোপাড়াবাসীর। তারা এখনও মনে করেন আবারও হামলা হতে পারে তাদের উপর। ব্যাহত হতে পারে তাদের জীবনযাত্রা।
মালোপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, সেদিনের মর্মান্তিক সহিংসতার ঘটনা আজও ভুলতে পারেননি তারা। সরকারসহ বিভিন্ন মহল ঘটনার সময় প্রতিশ্রুতি ছিয়েছিলেন, তার আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচন এলেই আতঙ্কে থাকি। এই অবস্থার উন্নতির জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে চাই।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ায় সন্ধ্যায় মালোপাড়ার মানুষের উপর সন্ত্রাসীরা তান্ডব চালিয়ে বসতবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও লোকজনকে মারপিট করে। এ সময়ে তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ১০-১২ জন নারী পুরুষ আহত হন। ভয় পেয়ে ৪ শতাধিক শিশু, বৃদ্ধ ও নারী পুরুষ নদী সাঁতরে দেয়াপাড়া গ্রামের পালপাড়া পূজা মন্ডপে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা ১০-১৫ টি বোমার বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়।
মালোপাড়াট্রাজেডির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি পুলিশ। ট্রাজেডির এক বছর পূর্ণ হওয়ার একদিন আগে ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি যশোর সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম চার্জশিটটি জমা দেন। চার্জশিটে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলার ৩৯ আসামির মধ্যে দুজনকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় চার্জশিটে। এছাড়াও ১০/১২ জনকে নতুন করে অভিযুক্ত করা হয়।
মালোপাড়ার বাসিন্দারা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে বাড়িতে থাকলেও তাদের মধ্যে রয়েছে নানা উৎকণ্ঠা। প্রায় ৫ বছর হতে গেলেও তাদের নিরাপত্তার জন্য এখনো স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তান্ডবের সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশ আসামি জামিনে মুক্ত রয়েছে। ভুক্তভোগীদের আশঙ্কা সময়ের পরিবর্তনে এলাকায় প্রশাসনের যে নজরদারি রয়েছে তা আর থাকবে না। তখন হয়তো তারা আবার এ রকম ঘটনার শিকার হবেন।
সরেজমিন দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে সেখানকার অবকাঠামো অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। লন্ডভন্ড বসতবাড়ি ভেঙে ৬২টি নতুন বাসস্থান তৈরি করে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন টানিয়ে গ্রামটিকে আলোকিত করা হয়েছে, ইটের খোয়া দিয়ে রাস্তা পাকা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্তরা পেয়েছেন নগদ অর্থসহ নানা সাহায্য। তবে, নিরাপত্তার অভাব রয়েছে প্রকট।
অভয়নগর মালোপাড়ার বাসিন্দা শেখর বর্মন বলেন, এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিরা বিভিন্ন সময় মালোপাড়ার কয়েকজনকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো আটক হয়নি। বর্তমানে আমাদের এখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প থাকায় তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে যদি এখানকার পুলিশ ক্যাম্পটি উঠিয়ে নেয়া হয় তাহলে হয়তো আবার আমরা নির্যাতনের শিকার হবো। তখন হয়তো আমাদের এ দেশ ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
জমির অভাবে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণে অনিশ্চয়তা: বর্তমানে যে নিরাপত্তার আস্থা সংকটে মালোপাড়ার বাসিন্দারা রয়েছেন, তার একমাত্র সমাধান সেখানে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন-এমনটাই মনে করেন মালোপাড়ার বাসিন্দারা। ঘটনার পর পরই দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও সেখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালোপাড়া পরিদর্শনে এসে সেখানে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ঘটনার ৫ বছর পার হলেও সেখানে এখনো স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান জানান, জমির অভাবে সেখানে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণ করতে হলে ৩৩ শতক জমি দরকার। বর্তমানে জমির ব্যবস্থা হয়েছে। অতিদ্রুত সেখানে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের পক্ষে কোনোভাবেই ৩৩ শতক জমি দেয়া সম্ভব নয়।
বাস্তবায়ন হয়নি মালোপাড়াবাসীর ৭ দফা ঃ সহিংসতার পাঁচ বছরেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে মালোপাড়ার সাত দফার একটিও পূর্ণঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। তাদের দাবিগুলো হলো-একটি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি, প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা ও বেকার ছেলেমেয়েদের যোগ্যাতর ভিত্তিতে চাকরি দেয়া, গ্রামের প্রতিটি পরিবারের পুনর্বাসন, শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরটিকে নাট মন্দির করা, স্বাস্থ্য সেবার জন্য ক্লিনিক স্থাপন, প্রেমবাগ বাওড়টি সংস্কার করে মৎসজীবী সমিতির নামে দীর্ঘ মেয়াদী বরাদ্দ, মহাসড়ক থেকে মালোপাড়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার কাজ সমাপ্ত করা।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version