Site icon suprovatsatkhira.com

দেবহাটা মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে ডিসি মোস্তফা কামাল: মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে হবে

মীর খায়রুল আলম, দেবহাটা: দেবহাটায় হানাদারমুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন তাই আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা স্বাধীন জাতি হিসাবে পরিচয় দিতে পারছি। আমার অনেক স্বপ্ন পাহাড়ারের চূড়ায় ওঠা, সেটি পূরণ হয়েছে। আমার স্বপ্ন মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার সেটি হয়ত কোন সময় পূরণ হবে। কিন্তু আমার স্বপ্ন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার, তা কখনো হবে না সেটা আমি জানি ও বিশ্বাস করি। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে তাদের অবদান অপরিসীম। আমরা আজ সরকারের কর্মকর্তা হয়েছি। আমি নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি যে, দেবহাটসহ সাতক্ষীরার কোন অফিসে বা কোন প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা লাঞ্ছিত বা অসম্মানিত হয় তাহলে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি শ্রদ্ধায় তাদেরকে সব সময় স্মরণ করি। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সম্মান পেয়েছেন, আগামীতেও পাবেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান সমুন্নত রাখতে যা যা করার প্রয়োজন তাই করা হবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের দিন আপনারা আপনাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন। কেউ কোন রকম বাধার সৃষ্টি করলে কালো হাত ভেঙ্গে দেওয়া হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে হলে সকলকে আচরণ বিধি মেনে চলতে হবে। নির্বাচনে কোন অনিয়মের ছাড় দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গণির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সম্মান পেয়েছেন। আজকে সরকার তাদের ভাতার ব্যবস্থা করেছে। তাদের সন্তান ও সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিসহ সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তাই আমি আজ আপনাদের মাঝে এসপি হতে পেরেছি। আপনারা স্বাধীন দেশ উপহার না দিলে আমরা আপনাদের পাশে এসে কথা বলার সুযোগ পেতাম না। তাই আমি বলে যাচ্ছি আপনাদের জন্য আমার অফিসের দরজা সব সময় খোলা। আপনাদের আমার অফিসে গিয়ে অপেক্ষা করা লাগবে না। পরিচয় দিয়েই আমার রুমে চলে আসবেন। আপনাদের একটু সেবা করতে পারলেই নিজের মনে প্রশান্তি পাব।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোশারফ হোসেন মশু বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমরা মহাকুমা, জেলা প্রধান বা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কেউ মুক্ত দিবসে আমাদের সাথে এসে এই দিনটি পালন করেন না। আজকে এই দিনে এসে মনে হল যুদ্ধে যাওয়া স্বার্থক হয়েছে। বর্তমান সরকার আমাদের সম্মান অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা চাই আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধের অর্জন রক্ষায় নতুন প্রজন্ম দায়িত্ব নিয়ে আমাদের কথা যুগ যুগ ধরে ইতিহাসে উজ্জল রাখুক।
অনুষ্ঠানে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গণি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে জীবন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছি। কিন্তু যখন কোন মুক্তিযোদ্ধা মারা যান কোন এমপি বা জনপ্রতিনিধি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান না। এটি জাতির জন্য খুবই লজ্জাজনক। আমরা দেশের জন্য রক্ত না দিলে আপনার জনপ্রতিনিধি হতে পারতেন না। আমি সব সময় স্মরণ করি বঙ্গবন্ধুকে। তিনি স্বাধনতার ডাক দিয়েছিলেন তাই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমার ভালো মনে আছে ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু সাতক্ষীরার শ্যামনগর যাচ্ছিলেন। আমরা গাজীরহাটে হাজার হাজার মানুষ তার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সেনাবাহিনী তাকে গাড়ি থেকে নামতে দিচ্ছিল না। আমরা রাস্তায় গতি রোধ করি। বঙ্গবন্ধু কারো কথা না শুনে জনতার ভিড়ে নেমে সর্বস্তরে মানুষের সাথে হাত হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আজকের দিনের নেতাদের অবস্থা দেখে আমাদের লজ্জা হয়। এই দেখার জন্য কি স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম। তাই আিম বলব আগামী নির্বাচনে যেই সংসদ সদস্য হবেন তিনি যেনো মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন দেবহাটা সার্কেলের এএসপি শেখ ইয়াসিন আলী, নির্বাহী অফিসার হাফিজ আল আসাদ, দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মান্নান আলী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা পারভীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি।
অন্যান্যের মধ্যে জেলা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সমিতির সভাপতি আব্দুল মাবুদ গাজী, জেলা ডেপুটি কমান্ডার আবু বকর সিদ্দিক, যুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর প্রধান আশরাফ আলি, সাবেক কমান্ডার সুভাস চন্দ্র ঘোষ, জামসেদ আলম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ইয়াসিন আলী, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব, সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন, দেবহাটা সদর চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, কুলিয়া ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছাদুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবু রায়হান তিতু, সকল দফতরের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তানগণসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে দেবহাটাকে মুক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version