নূরুন্নবী ইমন, রমজাননগর (শ্যামনগর): এবার রাশ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২১, ২২ ও ২৩ নভেম্বর। শত বছর ধরে বঙ্গোপসাগর কিনারে সুন্দরবনের দুবলার চরে আলোর কোল নামক স্থানে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর বাংলা কার্ত্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকের ভরা পূর্ণিমায় এ মেলা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূর্ণিমার জোয়ারে লোনা পানির স্থানে তাদর পাপ মোচন হয়ে মনষ্কামনা পূর্ণ হবে এই বিশ্বাস নিয়ে রাস মেলায় যোগ দিলেও সময়ের ব্যবধানে এখন তা নানা ধর্ম ও বর্ণের লোকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকায় করে তীর্থ যাত্রী ও দর্শনার্থীরা এসে সমবেত হন দেশের প্রত্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে। আসেন বহু বিদেশি পর্যটকও। উৎসবের সময় কুটির শিল্পের মেলাসহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় দুবলার চরে। কার্ত্তিক-অগ্রহায়ণের শুল্ক পক্ষের ভরা পূর্ণিমায় সাগর যখন উছলে ওঠে, লোনা পানিতে ধবল চন্দ্রালোক ছলকে যায় অপার্থিব সৌন্দর্য রচনা করে। চন্দ্রিমার সেই আলোকমালায় সাগর-দুহিতা দুবলার চরের আলোর কোল মেতে ওঠে রাস উৎসবে। সেখানে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসেন পূণ্যার্থীরা। তারা সাগরকে সামনে নিয়ে নির্জনে কৃষ্ণ পূজার সঙ্গে দেবতা নীল কমল আর গঙ্গাদেবীর আরাধনায় নিমগ্ন হন। পাপ মোচন করেন সমুদ্র স্নানে। সূর্যাস্তের পর সাগরকে স্বাক্ষী করে আকাশের বুকে উড়িয়ে দেয়া হয় ফানুস।
এ বছর রাশ মেলা উপলক্ষে করা হয়েছে নানা বিধি নিষেধ। ২১ নভেম্বর ভোর ৬ টার পর পাশ নিয়ে রাশ মেলায় যেতে হবে, জ্বালানী এলাকা থেকে সংগ্রহ করতে হবে, সুন্দরবন থেকে কোন জ্বালানী কাটা যাবে না। রাশ মেলায় যাতায়াতের সময় বাঘ, হরিণ, কুমির, বন্য শুকুর বানরসহ অন্য কোন বন্য প্রাণী শিকার, ধরা, মারা বা বিরক্ত করা যাবে না। রাশ মেলায় গমনের সময় কোন আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার বা বহন করা যাবে না। হরিণ ধরা ফাঁদ, দড়ি, গাছ কাটা কুড়াল বা করাত পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মেলায় যাওয়ার পথে মাইক, লাউড স্পিকার, অন্য কোন শব্দ যন্ত্র বাজানো, কোন রুপ পটকা ও বাজি ইত্যাদি ফুটানোসহ সকল প্রকার শব্দ দূষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাঁস/মুরগি ছাড়া অন্য কোন প্রাণী, প্রাণীর কাঁচা মাংস বহন/রান্না করা যাবে না। মানতের উদ্দেশ্যে সুন্দরবনের ভিতর গরু, ছাগল, ভেড়া বা অন্য কোন প্রাণি নিয়ে যাওয়া যাবে না। ২৩ নভেম্বরের পর সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবস্থান করতে পারবে না। কোন কারণে অতিরিক্ত সময় থাকার প্রয়োজন হলে ওই সময় পর্যটক হিসাবে গণ্য হবে এবং রাজস্ব দিতে হবে। খাবার বা অন্য দ্রব্যাদির প্যাকেট অথবা খাদ্য দ্রব্যের উচ্ছিষ্ট নদীতে ফেলতে পারবে না। রাস মেলা উপলক্ষ্যে বন বিভাগ বেশ কিছু রুট ও নির্ধারণ করেছে। রুটগুলো হলো ঢাংমারী- চাঁদপাই স্টেশন-ফশুর নদী-ত্রিকোনা আইল্যান্ড হয়ে দুবলার চর আলোরকোল, বগী-বলেশ্বও সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলারচর হয়ে দুবলার চর আলোরকোল, শরণখোলী স্টেশন-সপুতি স্টেশন-শেলারচর হয়ে, বুড়িগোয়ালীনি- কোবাদক থেকে বাটুলা নদী-বল নদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে, কদমতলা হতে ইছামতি নদী- দোবেকী-আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগাদোবেকী হয়ে, কৈখালী স্টেশন হয়ে মাদার গাং খোপড়া খালী ভরানী, দোবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া অতঃপর কাগাদোবেকী দুবলারচর আলোরকোলে, কয়রা কাশিয়াবাদ-খাসিটানা-বজবজা হয়ে আড়–য়া শিবসা অতঃপর শিবসা নদী-মরজাত হয়ে দুবলার চর, নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর আলোরকোল।
রাশ পূর্নিমা উপলক্ষে তীর্থ যাত্রীদের ফি তিন দিনের জন্য জন প্রতি ৫০ টাকা, অনিবন্ধনকৃত ট্রলার ৮০০ টাকা , নিবন্ধনকৃত ট্রলার ২০০ টাকা ও অবস্থান ফি প্রতিদিন ২০০ টাকা এবং অনিবন্ধনকৃত ট্রলার ৩০০ টাকা।
পশ্চিম বন বিভাগের এসিএফ জিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা রাশ মেলা উপলক্ষ্যে বেশ কয়েকটি রুট এবং বিধি নিষেধ করেছি। নির্দিষ্ট রুট দিয়ে পুণ্যার্থী/দর্শনার্থীদের ট্রলার যাতায়াত করবে। নিদিষ্ট রুট ছাড়া অন্য স্থানে প্রশাসন অবস্থান করবে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। যাতে করে শিকারী চক্র কোনভাবে বন বিভাগের আইন অমান্য করতে না পারে।
এ বিষয়ে বুড়িগোয়ালীনি নৌ-থানার ইনচার্জ অনিমেশ হালদার বলেন, রাস মেলায় উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জের ভিতরে পুণ্যার্থী/দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে নৌ-পুলিশ টহলে থাকবে।
কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকতা কামরুল হাসান বলেন, পুণ্যার্থী/দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা ও সুন্দরবন রক্ষার্থে মঙ্গলবার বিকাল থেকে কৈখালী ফরেস্টের পক্ষ থেকে ২টি টিম টহল দিচ্ছে।
রাস মেলা ২১ ২২ ও ২৩ নভেম্বর, থাকছে নানা বিধি নিষেধ
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/