ডেস্ক রিপোর্ট: মোংলা বন্দরমোংলা বন্দরে রাজস্ব আয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এ রাজস্ব আয় বেড়েছে ৫০ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে যা ৫০ শতাংশে উন্নিত হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে বন্দরে বিদেশি জাহাজ আগমন ও কার্গো হ্যান্ডলিং (পণ্যের ওঠানামা)। এক বছরের ব্যবধানে কনটেইনার আগমনের সংখ্যা আড়াইন গুণ বেড়েছে।
বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, জেটিতে নাব্য সংকট, কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও কাস্টমস জটিলতার কারণে এখানে আমদানি-রফতানিতে সমস্যা হচ্ছে। এ জটিলতার অবসান হলে এ বন্দরে আমদানি-রফতানি আরও বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এ অঞ্চলের মানুষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বন্দরে বিদেশি জাহাজ এসেছিল ২৮২টি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২৩টিতে। একই সঙ্গে বন্দরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায় ২২৬ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আসে ৭৮৪টি। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায় ২৬৫ কোটি টাকা। এক সময়কার স্থবির মোংলা বন্দরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব ব্যয় বাদে নিট মুনাফা ছিল সাড়ে ৭১ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে নিল মুনাফা হয় ১০৯ কোটি টাকা।
মংলা বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান বলেন, ‘আমদানি-রফতানিতে আশার সঞ্চার করেছে মংলা বন্দর।’ তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় মোংলা বন্দরে কন্টেইনার আনার খরচ বেশি। পশুর চ্যানেলে ডুবন্ত রেক ও নাব্য সংকটের কারণে অনেক জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে না। এ সমস্যা সমাধানে প্রকল্প চলমান রয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২০ হাজার ৭১৭টি কন্টেইনার আমদানি হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ১৭ হাজার ৮৪০। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪৩ হাজার কন্টেইনার আমদানি হয়।’
তিনি আরও জানান, ‘মোংলা বন্দরের উন্নয়নে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন হয়ে ৭টি চলমান রয়েছে। ভারত ও চীনের অর্থায়নে একাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে। যা বাস্তবায়ন শেষ হলে বন্দরের গতিশীলতা পাল্টে যাবে। বন্দরের উন্নয়নে সরকার সার্বিক বিষয় নিয়মিত মনিটরিং করছেন।’
এ কে এম ফারুক হাসান বলেন, ‘২০০৯ সালের পর থেকে লোকসানি প্রতিষ্ঠান থেকে বন্দরটি ধীরে ধীরে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। বর্তমানে এ বন্দরে ৬টি নিজস্ব জেটি, ব্যক্তি মালিকানাধীন ৭টি জেটি এবং ২২টি অ্যাঙ্কোরেজের মাধ্যমে ৩৫টি জাহাজ একসঙ্গে হ্যান্ডেলিং করা সম্ভব। ৪টি ট্রানজিট শেড, ২টি ওয়ার হাউজ, ৪টি কন্টেইনার ইয়ার্ড, ২টি কার পার্কিং ইয়ার্ডের মাধ্যমে মোংলা বন্দরে বার্ষিক ১শ’ লাখ মেট্রিক টন কার্গো এবং ৭০ হাজার টিইউজ কন্টেইনার এবং ২০ হাজারেও বেশি গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে। ’
মোংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুলতান হোসেন খান বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে আমদানি পণ্যের ১০ শতাংশ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। মোংলা কাস্টম হাউসে চালানের ১০০ শতাংশ পণ্যের কায়িক পরীক্ষার নামে হয়রানি করা হয়। ফলে আমদানিকারকরা এই বন্দর দিয়ে শিল্পের ‘ক্যাপিটাল মেশিনারিজ’ আনতে চান না।’ তিনি বলেন, ‘আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানির কারণে বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।’
বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সংকটের সমাধান করা গেলে মংলা বন্দরের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে। সেই সঙ্গে বন্দরে আমদানি-রফতানি বাড়বে ও অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।
মংলা বন্দর ব্যবহারকারী স্টিভিডরস মেসার্স নুরু অ্যান্ড সন্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং শিপিং এজেন্ট এইচ এম দুলাল বলেন, ‘মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। শ্রমিকরা এখন কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠছে। মংলা বন্দরে একে একে জাহাজ আসছে। যা অন্য বছরের তুলনায় রেকর্ড গড়ে তুলছে।’
মংলা-রামপাল বাগেরহাট-৩ আসনের সাবেক সংসদ ও খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মোংলা বন্দরের গতিশীলতা বেড়েছে। এ বন্দরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এখনও এ বন্দরে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ১৪৫ কিলোমিটার চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
মংলা বন্দর সূত্রে জানা যায়, ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মংলা বন্দরের যাত্রা হয়। বন্দরটি খুলনা থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বঙ্গোপসাগর থেকে ১৩১ কিলোমিটার উজানে অবস্থিত। প্রথমে এই বন্দর গড়ে ওঠে চালনা থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর বন্দরটি বিদেশি একটি জাহাজ নোঙরের মাধ্যমে প্রথম এর নামকরণ করা হয় চালনা বন্দর। কিন্তু সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে অধিকতর সুবিধাজনক হওয়ায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মংলায় স্থানান্তর করা হয়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এ বন্দর দিয়ে রফতানিকৃত পণ্য সামগ্রী হচ্ছে-পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চিংড়ি, ক্লে টাইলস, চামড়া ও অন্যান্য সাধারণ পণ্য। বর্তমানে আমদানিকৃত পণ্য-খাদ্যশস্য, সার, ক্লিংকার, মেশিনারি, গাড়ি, এলপি গ্যাস, কয়লা, লাইম স্টোন, পাম অয়েল, কাঠের লগ, পাথর ও অন্যান্য সাধারণ পণ্য।
মোংলা বন্দরে ৫০ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/