Site icon suprovatsatkhira.com

নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ: মুখ থুবড়ে পড়েছে তালার টিআরএম প্রকল্প

সৌমেন মজুমদার, তালা: তালা উপজেলার খেশরা ও জালালপুর ইউনিয়নের পাখিমারা বিলে টিআরএম এলাকায় প্রায় ৫ হাজার বিঘা জমিতে নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ করছে একটি চক্র। এতে গরীব অসহায় চাষীরা পড়ছে মহাবিপাকে। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় তারা এ কর্মকান্ড করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে নীরব ভূমিকায়। তারা দ্রুত নেটপাটা অপসারণসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, তালা থানা অফিসার ইনচার্জসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)’ এর আওতায় ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করেন। এ প্রকল্পের আওতায় তালা উপজেলার বালিয়া থেকে উজানে ৯০ কিলোমিটার নদী খনন এবং তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে জোয়ারাধার (টিআরএম ) চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১১ জুলাই এ বিলে টিআরএম বা জোয়ার রাধার কার্যক্রম চালু করা হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী পাউবো সূত্র জানায়, তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের বালিয়া ব্রীজের পশ্চিম পাশে পাখিমারা বিল অবস্থিত। বিলটির আয়তন ১৫৬১.৯৬ একর। বিলটিকে বেষ্টন করে আছে তালা উপজেলার জালালপুর, খেশরা ও মাগুরা ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম। আশপাশের আরো ১৩/১৪ টি গ্রামের অধিবাসীদের জমি রয়েছে পাখিমারা বিলে। এখানে জমির মালিকের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭ জন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ^াস বলেন, পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন প্রায় ৪ বছর ৪ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। বালিয়া কাটপয়েন্ট থেকে পাইকগাছার শিববাড়ী পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদ ইতোমধ্যে যথেষ্ট নাব্যতা ফিরে পেয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭২ ভাগ মানুষ এক বছরের এবং ৩৯ ভাগ মানুষ ২য় বছরের ফসলের ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলন করতে পেরেছেন। তিনি আরও বলেন, নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভরাট হওয়া নদীর দু’পাশ ক্রমশই প্রশস্থ হচ্ছে। পূর্বে সংযোগ খালের প্রশস্থতা ছিল মাত্র ১২/১৩ ফুট, এখন বৃদ্ধি পেয়ে ১২৫ ফুটের মতো হয়েছে। এবার প্রায় ২৫ একর জমিতে এলাকার কৃষকরা ধান চাষাবাদ করেছেন।
এদিকে অনেক কৃষক জমির কাগজের জটিলতার কারণে কোন বছররে হারির টাকা উত্তোলন করতে পারেননি। টিআরএম এলাকায় গরীব চাষীরা মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করবেন তার কোন উপায় নেই। এলাকার ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা টিআরএমের বিলের বেশিরভাগ জমিতে নেট-পাটা দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ করছেন। টিআরএম এলাকায় নেটপাটা দিয়ে পানির গতিরোধ করা অপরাধ জেনেও তারা বছরের পর বছর এ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন। এতে ভুক্তভোগী জমির মালিকরা না পাচ্ছেন ক্ষতিপূরণের টাকা, না পারছেন মাছ ধরতে। এছাড়া যারা ঐ বিলে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারাও পড়েছেন বিপাকে।
টিআরএম এলাকায় ভুক্তভোগী জমির মালিক আবুল হোসেন গাজী, শাহামত মোড়ল, জিয়ারুল সরদার, গফুর সরদার, রেজাউল বিশ্বাস, ইব্রাহিম গাজী, আজিজুর গাজী, মোক্তার গাজী, শওকত গাজী, মোফাজ্জেল বিশ্বাস, কুদ্দুস মোড়লসহ শত শত ব্যক্তির অভিযোগ কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তি যারা জোর করে টিআরএমের জমিতে নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ করে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বনে গেছেন। অনেকেই অন্যের জমি দখল করে নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ করছেন।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, সরকার যদি নদীর পলি মাটি সরানোর জন্য টিআরএম করে থাকে সেটা ভাল। আমরাও চাই নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাক। কিন্তু যে কারণে সরকার আমাদের জমি নিয়ে টিআরএম করছে, সেটা যদি গুটি কয়েকজন ব্যক্তির কারণে ভেস্তে যায়, তাহলে সরকারের শত শত কোটি খরচ করে লাভ কি?
এ ব্যাপারে খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান রাজীব হোসেন রাজু বলেন, আমি মৌখিকভাবে তাদের কে নেটপাটা অপসারণের জন্য বলেছ্ িকিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন বলেন, যারা নেটপাটা দিয়ে পানির গতিরোধ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version