Site icon suprovatsatkhira.com

আজ বিশ্ব এইডস দিবস: এইডস ঝুঁকিতে ‘সাতক্ষীরা’

গাজী আসাদ ও নাহিদ হাসান: মারাত্মক এইডস ঝুঁকিতে রয়েছে সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরা। সর্বশেষ বাংলাদেশ সরকারের এইডস/এটিডি কর্মসূচির ঝুকিপূর্ণ ২৩টি জেলার মধ্যে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে সাতক্ষীরার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এই জেলায় এইডস প্রতিরোধে দৃশ্যমান কার্যক্রম অপ্রতুল।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ৬৪ জন এইডস রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। আর এ জন্য সীমান্তবর্তী জেলা হওয়াটাকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছে দপ্তরটি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনক। আর সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় সাতক্ষীরা থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারণে বৈধ-অবৈধভাবে প্রচুর লোক ভারতে গমন করে। এদের মধ্যে অনেকেই এইডস রোগের ভাইরাস নিয়ে দেশে ফিরে আসছে। ফলে এইডস বিস্তারের আশংকা থেকেই যায়।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, মানব পাচারের একটি বড় রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয় সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত এলাকা। রয়েছে মাদকের ছড়াছড়ি। ফলে দিন দিন এইডস রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।
সূত্র মতে, জেলা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে নারীসহ মানব পাচার হয়। এই নারীদের একটি বড় অংশ বিক্রি করা হয় ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়ে। অবাধে যৌনচারে লিপ্ত করায় তাদের
অনেকেই এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে এক সময় দেশে ফিরে আসে। এছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় সুচ, সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে। একই সুচ, সিরিঞ্জ ব্যবহার করায় এর মাধ্যমেও এইডসের ভাইরাস ছড়ানোর আংশকা রয়েছে।
তবে, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ অপ্রতুল। এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতে হলে মানব পাচার রোধ ী মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরী।
এদিকে, এনএএসপি/ডিজিএইচএস’র তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এইআইভি পজেটিভ ব্যক্তির সংখ্যা ৪ হাজার ৭২১ জন। যার মধ্যে শুধু ২০১৬ সালেই এইআইভি পজেটিভ ব্যক্তি ৫৭৮ জন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করেছে ৭৯৯ জন, যার মধ্যে শুধু ২০১৬ সালেই ১৪১ জন মৃত্যু বরণ করে। ২০১৬ সালে এই এইডস আক্রান্ত ৫৭৮ জন ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ ৩৭৭ জন, নারী ১৯০ জন ও হিজরা ১১ জন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সাল পর্যন্ত এইআইভি পজেটিভ ব্যক্তির সংখ্যা ৫ হাজার ৫৮৬ জন, যার মধ্যে শুধু ২০১৭ সালেই বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৬৫ জন। ২০১৭ সাল পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করেছে ৯২৪ জন, যার মধ্যে শুধু ২০১৭ সালেই মৃত্যু বরণ করেছে ১২৫ জন। ২০১৭ সালে এইডস আক্রান্ত ৮৬৫ জনের মধ্যে পুরুষ ৬৩৯ জন, নারী ২১৩ জন ও হিজরা ১৩ জন।
এদিকে, এইডস প্রতিরোধে দেশের ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ জেলার সরকারি হাসপাতাগুলোতে বিনামূল্যে এইআইভি পরীক্ষা ও কাউসেলিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সাল থেকে দেশের ৬টি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে খুলনা বিভাগে একমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই সেবা দেওয়া হয়।
এইডস প্রতিরোধে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউজের সাতক্ষীরা ডিআইসি ম্যানেজার সনজু মিয়া জানান, সাতক্ষীরা একটি সীমান্তবর্তী জেলা, তাই এই জেলায় এইডস রোগের ঝুঁকি বেশি। মানব পাচার, সীমান্ত পার হয়ে ভারতে কাজ করতে যাওয়া, ভারতে গিয়ে পতিতালয়ে কাজ করাসহ বিভিন্ন কারণে এই জেলার মানুষ মারাত্মক এইডস ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া হিজড়া, সমকামী মানুষের অবাধ যৌনচার ও ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের দৌরাত্ম্যের জন্যও ঝুঁকি বাড়ছে। তবে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এটা মোকাবেলা করা সম্ভব।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, সর্বশেষ বাংলাদেশ সরকারের এইডস/এটিডি কর্মসূচির ঝুকিপূর্ণ ২৩ জেলার মধ্যে সাতক্ষীরা অন্যতম। এর কারণ হচ্ছে সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সীমান্ত। এই জেলা দিয়ে ভারতে প্রতিনিয়ত মানুষ আসা যাওয়া করছে। ভারতে যেয়ে এই জেলার অনেকে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছে। আবার তারা এইচআইভি পজেটিভ নিয়ে জেলায় ফিরে আসছে। এতে জেলায় এইডস ঝুঁকি বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এটা মোকাবেলা করতে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছে।
তিনি বলেন, যেহেতু সাতক্ষীরা ঝুঁকিপূর্ণ, তাই আমরা এইডস প্রতিরোধে এবং এর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জন্য জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবো।
এদিকে, ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষ্যে ‘এইচআইভি পরীক্ষা করুন নিজেকে জানুন’ প্রতিপাদ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগ। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে র‌্যালি, সাড়ে ৯টায় নার্সিং ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা, বেলা ১২টায় সিভিল সার্জন অফিসে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে পরামর্শ সভা ও সদর হাসপাতালে দিনব্যাপী বিনামূল্যে এইচআইভি স্ক্রিনিং ক্যাম্প।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version