Site icon suprovatsatkhira.com

স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মুক্ত চিন্তার মানুষদেরও বাঁচিয়ে রাখতে চায়নি: শাহারিয়ার কবির

শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ, কালিগঞ্জ: ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহারিয়ার কবির বলেছেন, আমরা সবাই বাঙালি। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যে স্লোগান ছিলো সেই চেতনা আমরা পুরোপুরি ধরে রাখতে পারিনি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশের মধ্যে থাকা স্বাধীনতা বিরোধীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষেদেরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে। এই স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশে ব্যাপকভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিলো, যার চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে ২০০১ সালের নির্বাচন। এই সময়ে স্বাধীনতা বিরোধীরা এদেশের দশ হাজারেরও বেশি সংখ্যালঘু পরিবারের উপর হামলা মামলা নির্যাতন করেছে, যেটি নজিরবিহীন ঘটনা।
২০০১ সালের নির্বাচনের দেড় মাস পর আমাকে গ্রেফতার করা হল। কারণ সেই সময়ে হিন্দু সম্পদায়ের তিন লাখ মানুষ বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে ভারতে চলে গিয়েছিলো। আর আমি সেটি ডকুমেন্টারি তৈরি করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলাম। সে জন্যই আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। জেলখানায় গিয়ে দেখি রাতের আঁধারে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির মানুষদেরকে ব্যাপকভাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের অপরাধ হচ্ছে কেন তারা নৌকায় ভোট দেয়। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি শুধু আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদেরকে নয় মুক্ত চিন্তার মানুষদেরকে ওরা বাঁচিয়ে রাখতে চায়নি। বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) কালিগঞ্জে তারালী ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর এলাকায় ২০০১ সালে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও মধ্যযুগীয় নির্যাতনের স্থান পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার পরপর দুই মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দেশের শাসন ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। আইনের শাসন এখন অনেক মজবুত অবস্থানে। আপনারা হয়তও বলতে পারেন বর্তমান সরকারের আমলেও তো অনেক জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হয়েছে। তবে আমরা সব জায়গায় তদন্ত করে দেখেছি এসব ঘটনার পিছনে ওই জামায়ত, বিএনপি জড়িত। এটাতো পরিষ্কার জামায়তের এজেন্ডা হচ্ছে বাংলাদেশকে ওরা পাকিস্তান বানাবে। তাই আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তব্য শেষে তিনি ২০০১ সালে বিশ^নাথপুর গ্রামে নির্যাতনের শিকার বনলতা সরকার, রাধারাণী সরকার, ধীরেন্দ্রনাথ সরকার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে উপহার সামগ্রী তুলে দেন।
তারালী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট’র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী।
এডভোকেট জাফরুল্যাহ ইব্রাহিমের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএমএর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় সভাপতি ডা. বাহারুল আলম, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক সনৎ কুমার গাইন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য পূর্ণিমা রাণী শীল, শ্যামনগর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জয়দেব বিশ্বাস প্রমুখ।
এসময় পুলিশ পরিদর্শক রাজিব হোসেন, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক নারায়ণ চক্রবর্তী রাজিব, কালিগঞ্জ হিন্দু-বৌদ্ধা-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব অসিত সেনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় শেষে ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকারের নেতাকর্মীদের দ্বারা কালিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও নির্যাতনের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version