ডেস্ক রিপোর্ট: “চিনা দূতাবাসকর্মী সাতক্ষীরার মিকাইল ও তার দুই তিনজন বিদেশি সহকর্মী ঢাকায় আমার নাতনি জুলিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে জুলিয়ার স্বামী মিকাইল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মাহমুদুল হাসানকে মোটা টাকা ঘুষ দিয়ে আলামত গায়েব করে অপমৃত্যুর মামলা করেছে। এরপরও ঘাতক মিকাইল পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে বিষয়টি মিটমাট করে নিতে আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে। না হলে আরও বিপদ হবে বলে হুমকি দিয়েছে সে।” শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিহত জুলিয়ার নানী খালেদা খাতুন এভাবেই তার নাতনিকে হত্যার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মিকাইল জুলিয়াকে বিদেশী বায়ারদের বেড পার্টনার হিসাবে জোর করে ব্যবহার করতো। গত ২৯ এপ্রিল একইভাবে তাকে ধর্ষণের পর বেডেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এর আলামতও পাওয়া গেছে বলে জানান খালেদা খাতুন। তিনি মিকাইল ও তার বিদেশী সঙ্গীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, র্যাবের মহাপরিচালক এবং চিনা দূতাবাস কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, জুলিয়া দাখিল পরিক্ষা দিয়েছিল। মৃত্যুর কয়েকদিন পর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। জুলিয়া এ গ্রেডে পাস করলেও সে তা জেনে যেতে পারেনি।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের আনছার গাজীর স্ত্রী খালেদা সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, তার মেয়ে নারগিসের একমাত্র মেয়ে জুলিয়া খাতুন নবম শ্রেণিতে পড়তো। তাকে বিয়ে করার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের আবদুর রউফের ছেলে ঢাকাস্থ চিনা দূতাবাসকর্মী মিকাইল হোসেন। দুই বছর আগে মিকাইল জুলিয়াকে নানা কৌশলে বিয়ে করে। কিছুদিন পর কাউকে কিছু জানতে বুঝতে না দিয়ে মিকাইল স্ত্রী জুলিয়াকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে সে বিদেশি বায়ারদের প্রলুব্ধ করে জুলিয়াকে তাদের বেডপার্টনার হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। এর বিনিময়ে সে অনেক টাকা হাতিয়ে নিতে থাকে।
তিনি জানান, গত ২৯ এপ্রিল মিকাইল ফোন করে জানায় জুলিয়া ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর সে জানায় জুলিয়া গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তড়িঘড়ি করে তাকে ঢাকায় দাফন করে সে। তিনি জানান, সাতক্ষীরা থেকে রওনা হয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকে চিনা দুতাবাসের নিরাপত্তারক্ষীরা জানান জুলিয়াকে বিদেশি বায়ারদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের শয্যাসঙ্গীনি করতো মিকাইল। এমন এক রাতেই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এ সময় তার চিৎকারের শব্দও শুনতে পান দূতাবাসের নিরাপত্তারক্ষীরা। বিছানায় ধর্ষণ ও হত্যার আলামত পাওয়া যায় বলে জানান খালেদা খাতুন। তিনি জানান জুলিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার ভিডিও ফুটেজসহ বিভিন্ন আলামত উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মাহমুদুল হাসানের কাছে জমা দেওয়া হয়। পরে তার কাছ থেকে রিপোর্ট নিতে গেলে তিনি নানী খালেদাসহ অন্যদের থানা থেকে বের করে দেন। এর আগে তিনি সব আলামত গায়েব করে দেন। তদন্ত করলে এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে জানান খালেদা।
তিনি আরও জানান, কথা অনুযায়ী তাকে দেওয়া মোবাইল নম্বর ০১৭১৮৯৬৩০৮৪ এ যোগাযোগ করা হলে এসআই মাহমুদুল হাসান দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে বলেন, অন্যথায় অপমৃত্যুর রিপোর্ট দেওয়া হবে। খালেদা বলেন, মিকাইল নিজের স্ত্রী জুলিয়াকে দুতাবাসের কয়েকজনের ভোগবিলাসে পরিণত করতে ২৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু জুলিয়াকে খুন করার পর সে নানাভাবে আতংকিত হয়ে এখন সাতক্ষীরায় নিজ বাড়িতে পালিয়ে থাকছে। বিদেশে চন্দনকাঠ পাচার কালে মিকাইল ও তার চিনা বন্ধু সানসুন ইউ ইউ এক বছর আগে সাতক্ষীরায় গ্রেফতার হয় বলেও জানান খালেদা খাতুন।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা খাতুন বলেন, মিকাইল এখন আমাদের পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে সব কিছু মিটমাট করে নিতে চায়। তার প্রশ্ন জুলিয়া যদি আত্মহত্যাই করবে তাহলে মিটমাট কিসের এবং টাকাই বা কেনো।
তিনি জুলিয়া হত্যার বিচার দাবি করেন। অচিরেই মিকাইল ও তার চিনা সঙ্গীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, র্যাবের মহাপরিচালক ও চিনা দূতাবাস কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ: বায়ারদের সঙ্গে থাকতে স্ত্রীকে বাধ্য করতো চিনা দুতাবাস কর্মী মিকাইল
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/