Site icon suprovatsatkhira.com

নিখোঁজ ডা. মোখলেছুরের সন্ধান মেলেনি দুই বছরেও:এসআই হিমেলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা

বিশেষ প্রতিনিধি: হোমিও চিকিৎসক সাতক্ষীরা শহরের পারকুকরালির ডা. মোখলেছুর রহমান জনি সদর থানার লকআপ থেকে নিখোঁজের দু’বছর তিন মাস ২০ দিনেও উদ্ধার হননি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে দায়েরকৃত বিভাগীয় মামলায় তৎকালীন সদর থানার উপপরিদর্শক হিমেল হোসেনের বিরুদ্ধে গত ১ অক্টোবর সাতক্ষীরায় দায়েরকৃত বিভাগীয় মামলায় গতকাল মঙ্গলবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎমিশ দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন।
সাতক্ষীরা শহরের পারকুকরালির জেসমিন নাহার রেশমা জানান, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট রাতে বাইসাইকেলে ওষুধ কিনতে বাসার বাইরে যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের লাবনী সিনেমা হলের সামনে থেকে সদর থানার উপপরিদর্শক হিমেল তার স্বামী হোমিও চিকিৎসক মোখলেছুর রহমান জনিকে থানায় ধরে নিয়ে যান। ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট তিনি শ্বশুর ও স্বজনদের নিয়ে থানা লকআপে তাকে খাবার দিয়েছেন, তার সঙ্গে কথা বলেছেন। থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ ও উপপরিদর্শক হিমেলের সঙ্গে কথা বললে জনির জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানায়। স্বামীর মুক্তির বিনিময়ে তৎকালীন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপপরিদর্শক হিমেল তার কাছে দাবি করেন মোটা অংকের টাকা। ৮ আগস্ট থানায় গেলে জনিকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ জনির অবস্থান সম্পর্কে জানাতে পারেনি। বিষয়টি তখনই সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মানবাধিকার কর্মী, জেলা প্রশাসক ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেন।
২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট জানানো হয় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে। ২৬ ডিসেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল¬্যা তা গ্রহণ করেননি। কোন উপায় না দেখে গত বছরের ৩ জানুয়ারি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। পরে গত বছরের ২ মার্চ হাইকোর্টে রিট পিটিশন (২৮৩৩/১৭) দাখিল করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মহাপুলিশ পরিদর্শক, উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (খুলনা), সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপপরিদর্শক হিমেল ও সাতক্ষীরা কারাগারের জেলরকে বিবাদী করা হয়। আদালতের নির্দেশে ১৯ মার্চ আদালতে উপস্থাপন করা পুলিশ সুপারের ব্যাখ্যায় বলা হয়, নিখোঁজ মোখলেছুর রহমান নিষিদ্ধ সংগঠন ‘আল্ল¬াহ’র দল’ এর সঙ্গে যুক্ত এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ১৯ মার্চ শুনানী শেষে আদালত ডা. জনিকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে বিচারিক আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন। একই সাথে ৯ মে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ঢাকা লিগ্যাল সেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম জাভিদ হাসানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী একরামুল হাবিব সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য ও পাঁচ জন সাধারণ মানুষের জবানবন্দি নিয়ে মোখলেছুর রহমান জনিকে গত বছরের ৪ আগস্ট পুলিশ আটক করেনি বা তাকে কেউ থানার মধ্যে দেখেনি মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত বছরের ৩ জুলাই সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হাবিবুল¬াহ মাহমুদ হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে থানা লক আপ থেকে ডা. জনির নিখোঁজ হওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। পরবর্তীতে এক আদেশে ৩ অক্টোবরের মধ্যে এ সম্পর্কিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো ইনভেসটিগেশন) নির্দেশ দেওয়া হয়। পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে ডা. জনিকে থানায় এনে আটক রাখার সত্যতা মেলেনি বলে উল্লে¬খ করে থানায় জিডি নিয়ে তার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ, ফিরোজ হোসেন মোল্য¬া ও উপপরিদর্শক হিমেল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে উল্লে¬খ করা হয়। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
জেসমিন নাহার রেশমা আরো জানান, গত ১ অক্টোবর উপপরিদর্শক হিমেল হোসেনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় বিভাগীয় মামলা (০৬/১৮) দায়ের করা হয়েছে মর্মে তিনি জানতে পারেন। এ ঘটনায় গত ১৮ নভেম্বর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎ মিশের কাছে ও ২২ নভেম্বর খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল কাদের বেগের কাছে তিনিসহ শ্বশুর আব্দুর রাশেদ, শ্বাশুড়ি আনোয়ারা খাতুন সাক্ষী দেন। একইভাবে মঙ্গলবার এক মানবাধিকার কর্মী ও তিন পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
জানতে চাইলে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ইলতুৎমিশ জানান, উপপরিদর্শক হিমেলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার বিষয়টি সম্পূর্ণ পুলিশ হেড কোয়ার্টারের ব্যাপার। তবে নিখোঁজ হওয়া ডা. মোখলেছুরের ব্যাপারে উপপরিদর্শক হিমেল হোসেনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভাগীয় মামলায় তিনি সম্ভাব্য সকল সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version