Site icon suprovatsatkhira.com

খুলনা আধুনিক রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু আজ

খুলনা অফিস: বড় ধরনের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই খুলনা আধুনিক রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে আজ রোববার। সকাল সাড়ে আটটায় প্রথম ট্রেন হিসেবে চিত্রা এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশ্যে খুলনা থেকে ছেড়ে যাবে। তবে রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি সন্তোসজনক না হওয়ায় খুশি নন খুলনার নাগরিক নেতারা। বিশেষ করে রেল স্টেশনের প্লাটফর্ম সংস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু সংস্কার না করেই চালু করা হচ্ছে আধুনিক রেল স্টেশন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, দীর্ঘ আন্দোলন শেষে ২০০৭ সালে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এর নাম দেওয়া হয় ‘রিমডেলিং অব খুলনা রেল স্টেশন অ্যান্ড ইয়ার্ড’। একাধিকবার সংশোধনের পর ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু ধীরগতির কারণে কয়েক দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। গত অক্টোবর মাসে এর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।
সূত্র জানায়, নতুন এই স্টেশনে নতুন তিনতলা স্টেশন ভবন, ১ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের তিনটি প্লাটফর্ম, ৭৮৪ বর্গমিটারের একটি লিংক করিডোর, সীমানা প্রাচীর, সুবিশাল গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাত রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, নির্মাণ ব্যয় ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া এবং প্রকল্পে নতুন পানির ওভারহেড ট্যাঙ্কি যুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় বেড়ে যায়। এরই মধ্যে কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনে ক্রুটির কারণে নির্মাণাধীন ২ নম্বর প্লাটর্ফমের ছাদে ফাটল দেখা দেয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে বুয়েটের প্রকৌশলীদের পরামর্শে প্লাটফর্মের ছাদের দু’দিকে নতুন করে বীম নির্মাণ করা হয়। পরিবর্তন করা হয় নকশাও।
খুলনা আধুনিক রেলস্টেশনটি তিনতলা বিশিষ্ট করা হয়েছে। প্রথম তলায় স্টেশন ভবনে থাকছে ৬টি টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম ও সহকারী স্টেশন মাস্টারের রুম। দ্বিতীয় তলায় থাকছে স্টেশন মাস্টারের রুম, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংকের শাখা, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ওয়েটিং রুম, ফাস্টফুড এবং রেল কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা কক্ষ। তৃতীয় তলায় থাকছে রেলওয়ের প্রকৌশলীদের অফিস কক্ষ। এ স্টেশন চালু হলে একসঙ্গে ৬টি ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ এবং বের হতে পারবে। স্টেশনে সিটিং ব্যবস্থা, সিসি ক্যমেরা ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা। স্টেশন চত্বরে থাকছে দৃষ্টি নন্দন ফুলের বাগান এবং অধিক সংখ্যক গাড়ি পার্কিং’র ব্যবস্থাও। আধুনিক রেলস্টেশন চালু হলে খুলনার সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ আরও সহজ হবে। সেই সঙ্গে ভারতের যাত্রীদের খুলনা স্টেশনেই ইমিগ্রেশন ও চেকিংসহ সব ভ্রমণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং ভাড়া কমানোর বিষয়েও দু’দেশের মধ্যে আলোচনা করে নিরাপদ ও সহজ যাত্রার দ্বার উন্মোচন করা হবে। প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।
খুলনা আধুনিক রেলস্টেশনের দায়িত্বরত রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান বলেন, আজ রোববার থেকে পুরোপুরিভাবে আধুনিক রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু করবে। স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে রেল মন্ত্রণালয়ের আইন অনুযায়ী। যদি স্টেশনে কোনো ধরনের পরিবর্তন করতে হয় তাহলে কমপক্ষে মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো ব্যক্তিকে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
রেলস্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও বিভাগীয় প্রকৌশলী রিয়াদ আহমেদ বলেন, তারা স্টেশনের আনুসঙ্গিক সব কাজ শেষ করেছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় নবনির্মিত এ স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে চিত্রা এক্সপ্রেস। নতুন স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন যাত্রার সময় উপস্থিত থাকবেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক মজিবর রহমান।
খুলনার স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার জানান, ইতোমধ্যে নতুন স্টেশনে মালামাল নেওয়া হয়েছে। কম্পিউটারসহ ইন্টারনেট সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে। স্টেশন চলাচলের জন্য এখন পুরোপুরি তৈরি।
এদিকে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, নতুন ভবন বা বড় প্লাটফর্মের চাইতে মানুষের প্রত্যাশা ছিলো কোলে চড়ে ট্রেনে উঠতে যেন আর না হয়। কাজ চলার সময় বার বার আমরা রেলওয়ের কর্মকর্তাদের বলেছি, ট্রেনের বগি ও প্লাটফর্ম যাতে সমান থাকে। কিন্তু কোন দাবিই মানা হয়নি। নতুন এই স্টেশন খুলনার মানুষের আশা আকাংক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। প্লাটফর্ম নিচু হওয়ায় চলাচলে মানুষের দুর্ভোগ থেকেই যাবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version