শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ, কালিগঞ্জ: কালিগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস পালিত হয়েছে মঙ্গলবার। বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম পাক হানাদারমুক্ত শ্যামনগর উপজেলার একদিন পর মুক্ত হয় কালিগঞ্জ। এর ২ সপ্তাহ পর ৩ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনী এদেশে আগমন করে। এরপর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়। এদশে ১৯৭১ সালে মুক্ত হলেও আজও আমরা পুরাপুরি স্বাধীন হতে পারিনি। দেশের মধ্যে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আজও ষড়যন্ত্র করে চলেছে। বর্তমানে সাতক্ষীরায় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এখনও সোচ্চার। তারা আমাদের সন্তানদেরকে নিয়ে তাদের মগজ ধোলাই করে তাদেরকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমাদেরকে সজাগ হতে হবে। আমার খুব দু:খ লাগে যখন শুনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা জামায়াত, শিবির স্বাধীনতার বিরোধী শক্তির সাথে মিশে রাজনীতি করছে। এটি আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যদি আমাদের সন্তানদের গাইড করতে না পারি তবে আমাদের ঐতিহ্য বিলিন হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার (২০নভেম্বর) বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কালিগঞ্জ ইউনিটের আয়োজনে কালিগঞ্জে পাক হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী পার্ক শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিটের কমান্ডার মোশারাফ হোসেন মশু এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কালিগঞ্জ ইউনিটের সাবেক কমান্ডার শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কালিগঞ্জ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এসএম গোলাম ফারুকের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার আবু বক্কর সিদ্দিক, সাতক্ষীরা সদর কমান্ডার হাসানুল ইসলাম, আশাশুনি উপজেলা কমান্ডার আব্দুল হান্নান, তালা উপজেলা কমান্ডার মফিজ উদ্দীন, শ্যামনগর উপজেলা কমান্ডার দেবীরঞ্জন মন্ডল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড জেলা ইউনিটের আহবায়ক আবু রাহান তিতু, সদস্যসচিব ও দৈনিক পত্রদূত’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি, মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এসএম মমতাজ হোসেন মন্টু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন, চারণ কবি বাবর আলী সরদার ও শিশু হাসনা হেনা। মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাক সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসরদের সাথে সংঘটিত যুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ কর্মকা- সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী শক্তিকে পুনরায় ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য সকল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।
এছাড়াও বাদ জোহর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা, দেশ ও জাতির অগ্রগতি, সম্মৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান, মন্দিরে প্রার্থনা এবং প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়।
এর আগে প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হয়। সকাল সোয়া ৮টায় মুক্তাঞ্চল স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সাড়ে ৮টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে ও শহীদ ইফনুসের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। সকাল ৯ টায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী পার্কে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন প্রাঙ্গনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুদ্ধকালীন কমান্ডার শেখ ওয়াহেদুজ্জামান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহিনসহ মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
কালিগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস পালিত
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/